লিচু ফেটে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday 9 June 2024

লিচু ফেটে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার

 


লিচু ফেটে যাওয়ার কারন ও প্রতিকার


রিয়া ঘোষ, ০৯ জুন : বর্তমানে বিভিন্ন প্রকার ফল উৎপাদনের ক্ষেত্রে ফলের ফেটে যাওয়া একটি বড় সমস্যা। ফল বড় হওয়ার পর কোনও কারণে নষ্ট হলে কৃষকের জন্য ক্ষতিকর হয়ে পড়ে। প্রায় সব ফলকেই ফাটতে দেখা যায়। তবে আমাদের দেশের ফল গুলোর মধ্যে লিচু ও ডালিম বেশী ফাটে।  ফল ফেটে যাওয়ার প্রক্রিয়াটি খুব দ্রুত সম্পন্ন হয় এবং উক্ত ফাটা জায়গায় রোগ জীবানুর আক্রমণ ঘটতে পারে। ফলে গোটা ফল নষ্ট হওয়ার সম্ভবনা দেখা দেয়। ফল ফেটে গেলে তার বাজার মূল্য কমে যায়। তাছাড়া কোনও কোনও সময় তা খাওয়ার অনুপযুক্ত হয়ে যায় ফলে কৃষক আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে পড়ে।



লিচুর ফল ফাটা বিভিন্ন রকম হতে পারে। সামান্য ফাটা, কেবলমাত্র খোসা ফাটা, লম্বালিম্বভাবে গোটা ফল ফাটা ইত্যাদি। ফল ফেটে গেলে তার অপক্ক শাঁস অনাবৃত হয়ে পড়ে এবং সরাসরি বাতাসের সংস্পর্শে আসে ফলে শাঁস দ্রুত শুকায়ে যায়। পরবর্তীতে তা রোগ ও পোকার আক্রমণের জন্য উন্মুক্ত হয়ে যায়। লিচুর ফাটা লম্বালম্বি বা আড়াআড়ি দু রকমই হতে পারে।



ফল ফাটার বিভিন্ন কারন রয়েছে। তবে, লিচু ফল ফেটে যাওয়ার নিম্নের এক বা একাধিক কারণ থাকতে পারে।



আবহাওয়া জনিত : আবহাওয়ার মুল উপাদান তাপমাত্রা, আপেক্ষিক আদ্রতা এবং বৃষ্টিপাত। লিচুর ফল ফাটার সঙ্গে আবহাওয়ার নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রমাণ পাওয়া গোছ। কানোয়ার, সিংহ প্রভৃতি বিজ্ঞানীদের মতে গরম বাতাস/ আবহাওয়া লিচুর ফল ফাটার প্রধান কারণ। তারা বলেন ফল পাকার আগে গরম আবহাওয়া তৎসহ গরম বাতাস ফল ফাটাতে সহায়তা করে। ফলের শাঁস দ্রুত বৃদ্ধির সময় তাপমাত্রা ৩৮০ সে. বা অধিক এবং আপেক্ষিক আর্দ্রতা ৬০ % বা কম হলে ফল ফাটা তরান্বিত হয়। দিন ও রাতের তাপমাত্রার ব্যাপক তারতম্য, তৎসহ গরম আবহাওয়ার পর হঠাৎ পর্যাপ্ত সেচ প্রদান বা বৃষ্টিপাত ফল ফাটতে সহায়তা করে। ফল পাকার পূর্ব মুহূর্তে উচ্চ তাপমাত্রা, নিম্নমাত্রার আপেক্ষিক আর্দ্রতা তৎসহ দীর্ঘ বৃষ্টিপাত ফল ফাটার অন্যতম কারণ বলে বিজ্ঞানী মিশ্র মনে করেন।


 হরমোনজনিত : সুস্থ্য ও ফাটা লিচুর রাসায়নিক বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, সুস্থ্য লিচুর তুলনায় ফাটা লিচুর খোসা ও বীজে কম মাত্রায় এবং শাঁসে বেশী মাত্রায় অঙিন বিদ্যমান থাকে। জিবারেলিন এর মাত্রা খোসা, বীজ ও শাঁসে স্বাভাবিক ফলের তুলনায় বেশী থাকে। এছাড়া সাইটো কাইনিন ফাটা ফলে বেশী লক্ষ্য করা গেছে।




 পুষ্টির অভাব জনিত : কিছু কিছু পুষ্টি উপাদান যেমন পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, দস্তা, বোরণ, তামা, মালিবডেনাম ও ম্যাঙ্গানিজ ফল বৃদ্ধির সময় শারীরতাত্বিক পদ্ধতির সাথে সম্পর্কিত হওয়ায় এদের অভাবে ফল ফাটা ত্বরান্বিত হয়। পরীক্ষায় দেখা গেছে ফাটা লিচুতে স্বাভাবিক লিচুর তুলনায় বেশী পরিমাণে নাইট্রোজেন, ফসফরাস ও পটাশিয়াম থাকে। অপরদিকে ক্যালসিয়াম ও দস্তা কম পরিমাণে বিদ্যমান থাকে। স্বাভাবিক ও ফাটা ফলের অম্লতা (পিএইচ) এবং মিষ্টতার (টিএসএস) কোন তারতম্য ঘটে না । তবে, ফাটা ফলে পানির পরিমাণ বেশী থাকতে দেখা গেছে।


 রোগ পোকার আক্রমণ ও আঘাত জনিত : কোনও কোনও সময় রোগ ও পোকার আক্রমণ বা শারীরিকভাবে ফল ফল আঘাত প্রাপ্ত হলে তা ফেটে যায় এবং পচনকারী জীবানুর আক্রমণ দেখা দিতে পারে । তবে, এসব কারণে ব্যাপক আকারে ফাটল দেখা যায় না।


প্রতিকার:


১। যে সব জাত ফাটল প্রতিরোধক/ সংবেদনশীল সে গুলোর চাষাবাদ করতে হবে।

২। বিভিন্ন প্রকার হরমোন সেপ্র করে ফলের পরিপক্কতা দীর্ঘায়িত করা এবং খোসার সমপ্রসারণ ক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে


ফলের ফাটা দমনের ক্ষেত্রে ভাল ফলাফল পাওয়া গেছে। ন্যাপথালিন অ্যাসিটিক অ্যাসিড ((NAA) ২৫ পিপিএম হারে এর সাথে জিবারেলিক অ্যাসিড ৫০ পিপিএম হারে ১০ দিন পর পর সেপ্র করে ফাটল রোধ করা সম্ভব।


৩। ফল বৃদ্ধির সময় জিংক সালফেট ( প্রতি লিটারে ৫ গ্রাম), রোবাঙ/ বরিক অ্যাসিড ( প্রতি লিটারে ৫ গ্রাম) একত্রে বা আলাদা আলাদা ভাবে সেপ্র করলে ফল ঝরে পড়া ও ফাটা উভয় সমস্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমে যায়।


৪। ফল বৃদ্ধির সময় গাছে নিয়মিত ও পরিমিত পরিমাণ সেচ প্রদান করলে মাটির আর্দ্রতা / রস বৃদ্ধি এবং বাতাসের তাপমাত্রা কমে যাবে। ফলে লিচুর ফাটল কমে যাবে।


৫। মাটিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ করতে হবে। জৈব সার প্রয়োগে মাটির পানি ধারণ ক্ষমতা বেড়ে যাবে। ফলে বিরুপ আবহায়ায় মাটির রস দ্রুত হ্রাস বৃদ্ধির হার কমে যাবে। উপরন্ত, জৈব সারে সব ধরনের পুষ্টি উপাদান থাকায় মাটির অপুষ্টি জনিত সমস্যাও দুর হবে।



No comments:

Post a Comment

Post Top Ad