সুনীলের বিদায়ী ম্যাচ, তার আগে আবেগের সুনামী
কলকাতা: অস্তিত্বের ম্যাচে আবেগের সুনামী। ভারত বনাম কুয়েত এর প্রাক বিশ্বকাপের ম্যাচ লক্ষীবারের সন্ধ্যায় যুবভারতী ক্রীড়াঙ্গনে অনুষ্ঠিত হবে। দুই দেশ ফুটবল যুদ্ধে মুখোমুখি। প্রতিদ্বন্দীতার চোরাস্রোত বইবে এটাই তো স্বাভাবিক। কিন্তু কুয়েত বা ভারত দুদলের সাংবাদিক সম্মেলনে প্রশ্নের এপিসেন্টার সুনীল ছেত্রী। ভারতীয় দলের অধিনায়ক তাঁর কুড়ি বছরের আর্ন্তজাতিক ফুটবলে দাড়ি টানছেন। ১৫০ম্যাচে ৯৪ গোল করার কৃতিত্ব দেখিয়ে বিশ্ব ফুটবলে ভারত অধিনায়কের স্থান তিন নম্বরে।
দেশের জার্সিতে সবচেয়ে বেশি গোল করার কৃতিত্ব যাঁদের, তারা ক্রিশ্চিয়ানো রোনাল্ডো এবং লিওনেল মেসি। ফুটবল বিশ্বের ফার্ষ্ট ওয়ার্ল্ড কান্ট্রির দুই কিংবদন্তীর পাশে তৃতীয় বিশ্বের একজন স্ট্রাইকারের জায়গা করে নেওয়া নিঃসন্দেহে কুর্ণিশ করার মত। তাই তিনি যখন বুট তুলে রাখার সিদ্ধান্ত নেন তখন প্রতিপক্ষও বৈরিতা ভুলে টুপি খুলে সম্মান জানায়।
আবেগের সুনামীতে নিজেকে অচঞ্চল রাখার চেষ্টা করে চলেছেন সুনীল ছেত্রী। সাংবাদিক সম্মেলনের সিংহভাগ প্রশ্ন তাঁর অবসর সংক্রান্ত হতে দেখে সুনীল বলছেন, “আপনারাই এই ম্যাচটিকে আবেগতাড়িত করে তুলছেন। এটা অন্য অনেক ম্যাচের মতই একটা ম্যাচ। এই ম্যাচটা ভারতের প্রাক বিশ্বকাপের তৃতীয় রাউণ্ডে পৌঁছনোর ম্যাচ। এটা ভারতীয় ফুটবলের জন্য বিরাট ব্যাপার। এর আগে এই ঘটনা ঘটেনি। এতবড় মঞ্চ ফুটবল ছাড়ার জন্য পেতাম না।”
বিশ্বফুটবলে সর্বোচ্চ গোল শিকারীর তালিকায় তিন নম্বরে থাকা সুনীল ছেত্রী এশিয়া মহাদেশের সেরা গোল শিকারীদের তালিকায় দুই নম্বরে। তাঁর আগে রয়েছেন ইরাণের আলি দাহি। কুড়ি বছরের বর্ণোজ্বল আর্ন্তজাতিক ফুটবল জীবনের সমাপ্তি। স্বাভাবিক ভাবেই অভাব পূরণ সহজ নয়। সুনীল ছেত্রীর পাশে বসে অভাব পূরণের কথা মানছেন ঈগর স্টিমাচ। তবে সুনীল ছেত্রীকে নিয়ে আবেগতাড়িত হওয়ার চেয়ে কুয়েত ম্যাচের ছক সাজাতে ব্যস্ত। মানছেন এই ম্যাচের অভিঘাত সুনীল ছেত্রীর মত কিংবদন্তীর অবসরের অবেগে পর্যবসিত। “শেষ বাঁশি বাজা পর্যন্ত আমাদের পাশে থাকবেন। শেষ অবধি নিজেদের নিংড়ে দেব,” বলছেন স্টিমাচ।
ইতিমধ্যেই প্রথম একাদশ বেছে নিয়েছেন। গোলরক্ষকের জায়গায় গুরপ্রীত সিংই থাকছেন। তবে দল স্টিমাচ বেছেছেন ফুটবলারদের বর্তমান ফর্মের ভিত্তিতে। কুয়েতের সঙ্গে প্রাক বিশ্বকাপের প্রথম পর্বের ম্যাচে মনবীর সিংয়ের গোলে জয় পেয়েছিল ভারত। তারপর থেকে জয় অধরা। পয়েন্টের অঙ্কের বিচারে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় ফের জয় ভারতকে পরের পর্বে পৌঁছে দিতে পারে। সেই ভাবনা থেকেই সুনীল ছেত্রী বলছেন, গোল কে করবেন তার চেয়ে যেকোনও উপায়ে তিন পয়েন্ট পাওয়াকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। “শেষ ম্যাচ নিয়ে আবেগ থাকবেই। আমি চেষ্টা করছি আবেগ সরিয়ে মানসিকভাবে শক্ত থাকতে। খুব চেষ্টা করছি আবেগকে সরিয়ে রাখতে। ম্যাচটা জিততে পারলে আমাদের সুযোগ থাকবে।”বলছেন সুনীল। প্রায় একই সঙ্গে যোগ করলেন,“ দিন কুড়ি আগে আমি ঘোষণা করেছি। তারপর থেকে দিন গোনা শুরু হয়েছে। এরপর খেলা দেখতে স্যুট পরে আসব। ”
কিন্তু সুনীলের ছেড়ে যাওয়া জুতোয় কে পা গলাবেন? সুনীল বলছেন উত্তরসূরীর লম্বা লাইন। “মনবীর ডেভিড ছাঙতেরা জিজ্জাসা করছে অবসর নেওয়ার সিদ্ধান্তটা চূড়ান্ত তো। আমি তেমন মানুষ নই যে কোথা দেওয়ার পর তা খেলাপ করি। যা করি ভেবেচিন্তে করি। তাই এরপর শুধু স্ট্যান্ডে বসে ম্যাচে দেখব,” হাসির হুল্লোড় সাংবাদিক সম্মেলন কক্ষে। প্রাক্তন হতে চলা ভারত অধিনায়কের কথার রেশ ধরে স্টিমাচ যোগ করেন,“তোমাকে পরবর্তী সময়ে ফেডারেশন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দেখতে পারি। ”
ভবিষ্যতে সুনীল ছেত্রী কে কি ভারতীয় দলের কোচ হিসেবে দেখা যেতে পারে? প্রশ্নটা শুনেই সুনীল জানিয়েছেন সেই সম্ভাবনা নেই। “পাঁচ বছর আগে স্টিমাচকে পেয়েছিলাম। সুন্দর চেহারা ছিল। গত পাঁচ বছরে পনেরো বছর বয়স বেড়ে গিয়েছে স্টিমাচের। আমি সেই টেনশন নিতে চাই না। প্রতিদিন সকাল সাড়ে ছটায় ওঠার ঝক্কি নিতে রাজি নই। অবসরটা উপভোগ করতে চাই,” অবসর পরবর্তী সময়ের পরিকল্পনার আভাস সুনীলের কথায়।
No comments:
Post a Comment