আজকের পরিবর্তিত জীবনধারা, ক্রমবর্ধমান কাজের চাপ, ধূমপান এবং মদ্যপানের আসক্তির কারণে, ২২ থেকে ৩০ বছর বয়সী তরুণদের মধ্যে উচ্চ রক্তচাপের সমস্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, এই বয়সের প্রায় ২৫% তরুণ এই রোগে ভুগছেন। যদি সময়মতো এর চিকিৎসা এবং নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তাহলে অল্প বয়সে স্ট্রোক, হার্ট অ্যাটাক এবং কিডনি সম্পর্কিত গুরুতর রোগের ঝুঁকি বহুগুণ বেড়ে যেতে পারে। উচ্চ রক্তচাপকে নীরব ঘাতকও বলা হয় কারণ এটি কোনও স্পষ্ট লক্ষণ ছাড়াই ধীরে ধীরে শরীরকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। তাই এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে নিয়মিত চেক-আপ, সুষম খাদ্য এবং নিয়মিত ব্যায়াম প্রয়োজন।
মুম্বাইয়ের লীলাবতী হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ চিকিৎসা বিশেষজ্ঞ ডাঃ সিসি নায়ার বলেন, রক্ত ধমনীর রক্তচাপ স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি হয়ে গেলে উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। এই অবস্থা প্রায়শই লক্ষণ ছাড়াই এগিয়ে যায়, যে কারণে লোকেরা এটিকে গুরুত্ব সহকারে নেয় না। এর কিছু সাধারণ লক্ষণের মধ্যে রয়েছে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা, ঝাপসা দৃষ্টি, বুকে ব্যথা এবং ক্লান্তি। তবে, অনেক সময় তরুণরা এটি সম্পর্কে জানে না এবং রোগটি মারাত্মক রূপ নেয়। অতিরিক্ত মানসিক চাপ, ক্যারিয়ারের চাপ, ব্যক্তিগত সমস্যা, ধূমপান এবং মদ্যপানের মতো কারণে তরুণদের মধ্যে এই সমস্যা দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। উদ্বেগের বিষয় হল, বেশিরভাগ তরুণ-তরুণীর কোনও লক্ষণ দেখা যায় না, যার কারণে এই রোগটি দীর্ঘ সময় ধরে অলক্ষিত থাকে।
ডাঃ নায়ারের মতে, প্রতি মাসে তার হাসপাতালে চিকিৎসার জন্য আসা ১০ জন তরুণের মধ্যে ৮ জনই মানসিক চাপ বা ধূমপানের কারণে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন বলে জানা যায়। যদি সময়মতো এটি নিয়ন্ত্রণ না করা হয়, তাহলে এটি হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক, কিডনি এবং চোখের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলতে পারে। আজকের তরুণরা কেবল ক্যারিয়ার এবং ব্যক্তিগত জীবনের চাপের মুখোমুখি হচ্ছে না, বরং ধূমপান, মদ্যপান এবং জাঙ্ক ফুডের অতিরিক্ত ব্যবহারের মতো অস্বাস্থ্যকর অভ্যাসগুলিও তাদের স্বাস্থ্যের ক্ষতি করছে।
মুম্বাইয়ের অ্যাপোলো স্পেকট্রা হাসপাতালের জেনারেল ফিজিশিয়ান ডাঃ ছায়া বাজা বলেন যে মানসিক চাপ, ধূমপান এবং অ্যালকোহল আসক্তি এই সমস্যার প্রধান কারণ, যা অল্প বয়সে হৃদপিণ্ড, মস্তিষ্ক এবং কিডনির ক্ষতি করতে পারে। উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য জীবনযাত্রার পরিবর্তন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এই অভ্যাসগুলি রক্তনালীগুলির ক্ষতি করে এবং রক্তচাপ বাড়ায়। প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা, জগিং, যোগব্যায়াম বা অন্যান্য ব্যায়াম রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। যোগব্যায়াম, ধ্যান এবং গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের কৌশল মানসিক চাপ কমাতে কার্যকর। খাদ্যতালিকায় ফলমূল, শাকসবজি, গোটা শস্য এবং কম চর্বিযুক্ত দুগ্ধজাত পণ্য অন্তর্ভুক্ত করুন। ৭-৮ ঘন্টা ভালো ঘুম রক্তচাপ স্বাভাবিক রাখতে সাহায্য করে।
চিকিৎসকদের মতে, উচ্চ রক্তচাপ এখন আর কেবল বয়স্কদের রোগ নয়। এটি তরুণদের মধ্যেও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। সময়মতো রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যায় এবং হার্ট অ্যাটাক এবং স্ট্রোকের মতো গুরুতর রোগ এড়ানো যায়। যদি কারো উচ্চ রক্তচাপ ধরা পড়ে, তাহলে ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী ওষুধ খাওয়া এবং স্বাস্থ্যকর জীবনধারা গ্রহণ করা গুরুত্বপূর্ণ। উচ্চ রক্তচাপ এমন একটি রোগ যা নীরবে শরীরের ক্ষতি করতে পারে। তরুণদের মধ্যে এর ক্রমবর্ধমান সংখ্যা উদ্বেগজনক, তবে সঠিক জীবনধারা এবং সচেতনতার মাধ্যমে এটি প্রতিরোধ করা যেতে পারে। নিয়মিত চেক-আপ, স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, ব্যায়াম এবং স্ট্রেস ম্যানেজমেন্টের মাধ্যমে কেবল উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা যায় না, বরং একটি সুস্থ ও দীর্ঘ জীবনও যাপন করা যায়।
No comments:
Post a Comment