আজকাল, হাইপোথাইরয়েডিজম অর্থাৎ থাইরয়েড গ্রন্থির ধীর কার্যকলাপ মহিলাদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা হয়ে উঠছে। এই রোগে শরীরে থাইরয়েড হরমোনের উৎপাদন কমে যায়, যার কারণে বিপাক ক্রিয়া ধীর হয়ে যায় এবং হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হতে শুরু করে। এর প্রভাব আপনার দৈনন্দিন শক্তি, ওজন, চুল এবং ত্বকের উপরও দৃশ্যমান।
হাইপোথাইরয়েডিজম কী?
হাইপোথাইরয়েডিজমে, ঘাড়ের কাছে অবস্থিত থাইরয়েড গ্রন্থিটি অলস হয়ে যায় এবং শরীরের প্রয়োজন অনুসারে পর্যাপ্ত হরমোন তৈরি করতে অক্ষম হয়। এই হরমোন শরীরের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজের জন্য দায়ী, যেমন শক্তি উৎপাদন, তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ এবং হজমশক্তি বজায় রাখা।
হাইপোথাইরয়েডিজম কেন হয়?
ডায়েটিশিয়ান এবং স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে ভারতে এই রোগটি বেশি দেখা যায়, বিশেষ করে মহিলাদের মধ্যে। এর পেছনে বেশ কয়েকটি কারণ থাকতে পারে:
আয়োডিনের অভাব
দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল এবং স্ক্রিনের অতিরিক্ত ব্যবহার
ঘুমের অভাব এবং মানসিক চাপ
কিছু ওষুধের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া
পরিবারের কারো ইতিমধ্যেই এই রোগ আছে (জেনেটিক কারণ)
হাইপোথাইরয়েডিজমের লক্ষণ
সব সময় ক্লান্ত এবং দুর্বল বোধ করা
খুব ঠান্ডা লাগা
কোষ্ঠকাঠিন্যের অভিযোগ
হঠাৎ ওজন বৃদ্ধি
চুল পড়া এবং শুষ্ক ত্বক
অনিয়মিত পিরিয়ড (মহিলাদের ক্ষেত্রে)
এ থেকে মুক্তি কীভাবে পাবো
হাইপোথাইরয়েডিজম সম্পূর্ণরূপে নিরাময় করা কঠিন হতে পারে, তবে জীবনযাত্রার পরিবর্তন এবং সঠিক খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এটি নিয়ন্ত্রণ করা যেতে পারে।
আপনার দৈনন্দিন রুটিনে এই পরিবর্তনগুলি করুন:
ব্রাজিল বাদাম খান – সারারাত ভিজিয়ে রাখার পর প্রতিদিন ২-৩টি ব্রাজিল বাদাম খান; এতে সেলেনিয়াম রয়েছে যা থাইরয়েডের স্বাস্থ্যের জন্য অপরিহার্য।
নিয়মিত ব্যায়াম করুন - প্রতিদিন ৩০ মিনিট হাঁটা, যোগব্যায়াম বা হালকা ব্যায়াম থাইরয়েডের জন্য উপকারী।
মানসিক চাপ কমানো - ধ্যান এবং ভালো ঘুমের মাধ্যমে মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণ করুন।
সুষম খাদ্য গ্রহণ করুন - আপনার খাদ্যতালিকায় সবুজ শাকসবজি, সালাদ, ফল এবং কম তেলযুক্ত খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন।
সময়মতো ওষুধ খান - যদি আপনি থাইরয়েডের ওষুধ খাচ্ছেন তবে খালি পেটে এবং নিয়মিত সময়ে তা খান এবং রক্ত পরীক্ষা করাতে থাকুন।
মনে রাখবেন:
হাইপোথাইরয়েডিজম এমন একটি রোগ যার জন্য আজীবন ব্যবস্থাপনা প্রয়োজন, তবে সঠিক জীবনধারা এবং সচেতনতার মাধ্যমে আপনি এটি নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারেন।
No comments:
Post a Comment