প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ১৬ মে ২০২৫, ০৯:৪০:০১ : জম্মু-কাশ্মীরের পহেলগামে সন্ত্রাসী হামলা এবং ভারতের সামরিক প্রতিক্রিয়া অপারেশন সিন্দুরের কয়েকদিন আগে পাকিস্তানে একটি হাই-প্রোফাইল ক্রিপ্টো চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পরিবার এবং পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনিরের জড়িত থাকার বিষয়টি প্রকাশ্যে আসার পর, এই চুক্তিটি এখন ভারত এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দুই দেশেই তদন্তাধীন। মার্কিন ক্রিপ্টো ফার্ম ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল এবং পাকিস্তানের নবগঠিত সংস্থা পাকিস্তান ক্রিপ্টো কাউন্সিলের মধ্যে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। এই চুক্তির তথ্য প্রকাশ্যে আসার পর, রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ রয়েছে।
ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল একটি আমেরিকান ক্রিপ্টো এবং ফিনটেক কোম্পানি যেখানে ডোনাল্ড ট্রাম্পের ছেলে এরিক ট্রাম্প, ডোনাল্ড ট্রাম্প জুনিয়র এবং তার জামাতা জ্যারেড কুশনার যৌথভাবে ৬০ শতাংশ অংশীদারিত্বের অধিকারী। ফার্মটি ২০২৫ সালের এপ্রিলে পাকিস্তানের সাথে ব্লকচেইন-ভিত্তিক অংশীদারিত্বে সম্মত হয়েছিল। পাকিস্তানের ক্রিপ্টো কাউন্সিল, একটি নতুন সংস্থা, এর সাথে এই চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কাউন্সিল বিন্যান্স এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা চ্যাংপেং ঝাওকে বিশ্বাসযোগ্যতার জন্য উপদেষ্টা হিসেবে নিযুক্ত করেছে। এই কাউন্সিলের লক্ষ্য পাকিস্তানকে দক্ষিণ এশিয়ার ক্রিপ্টো রাজধানী করা বলে জানা গেছে।
এই চুক্তি স্বাক্ষরের জন্য আমেরিকা থেকে একটি প্রতিনিধিদল পাকিস্তান পৌঁছেছে, যার মধ্যে ফার্মের প্রতিষ্ঠাতা জ্যাকারি উইটকফও ছিলেন। জ্যাকারি হলেন স্টিভ উইটকফের ছেলে, যিনি ট্রাম্পের পুরনো ব্যবসায়িক সহযোগী ছিলেন এবং বর্তমানে মধ্যপ্রাচ্যের জন্য মার্কিন বিশেষ দূত। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল পাকিস্তানের সেনাপ্রধান আসিম মুনির নিজেই এই দলটিকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং প্রধানমন্ত্রী শাহবাজ শরীফের সাথে একটি রুদ্ধদ্বার বৈঠক করেছেন। এই রুদ্ধদ্বার বৈঠক এবং সেনাপ্রধানের অংশগ্রহণ এই চুক্তিটিকে একটি সাধারণ বাণিজ্য চুক্তির বাইরেও রূপ দিয়েছে।
পাকিস্তানের ক্রিপ্টো কাউন্সিল এবং ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল এটিকে একটি প্রযুক্তিগত সহযোগিতা বলে একটি বিবৃতি জারি করেছে। এতে বলা হয়েছে যে এই চুক্তির উদ্দেশ্য হল পাকিস্তানে আর্থিক অন্তর্ভুক্তি এবং ডিজিটাল রূপান্তরকে উৎসাহিত করা। এর অধীনে, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলিতে ব্লকচেইন প্রযুক্তি একীভূত করা, স্টেবলকয়েন তৈরি করা এবং ক্রিপ্টো-ভিত্তিক পাইলট প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হচ্ছে, কিন্তু এই চুক্তির সময় এবং এর সাথে জড়িত ব্যক্তিদের পটভূমি এটিকে একটি সাধারণ বিনিয়োগের পরিবর্তে একটি কৌশলগত চুক্তির মতো দেখাচ্ছে।
ভারতের অনেক কৌশলগত বিশেষজ্ঞ এবং নিরাপত্তা বিশ্লেষক এই চুক্তি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন যে এই চুক্তি পাকিস্তানের সন্ত্রাসী অর্থায়ন কাঠামো এবং আর্থিক কারসাজির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। বিশেষ করে যখন ভারতের সামরিক প্রতিক্রিয়া অপারেশন সিন্দুরের পরে পাকিস্তানের সন্ত্রাসী কাঠামোটি ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এই চুক্তির সময় এবং এতে জড়িত ব্যক্তিদের ভূমিকা নিয়ে সন্দেহ করা হচ্ছে।
আমেরিকাতে, ট্রাম্প পরিবার এবং হোয়াইট হাউসের পক্ষ থেকে এখনও পর্যন্ত কোনও বিবৃতি আসেনি। ওয়ার্ল্ড লিবার্টি ফাইন্যান্সিয়াল স্পষ্টভাবে বলেছে যে এই চুক্তির পিছনে কোনও রাজনৈতিক উদ্দেশ্য নেই, তবে কৌশলগত বিশ্লেষকরা বিশ্বাস করেন যে এই ধরনের স্বচ্ছতা ছাড়া চুক্তি ভবিষ্যতে একটি বড় ভূ-রাজনৈতিক সংকট তৈরি করতে পারে।
পহেলগাম হামলা এবং অপারেশন সিন্দুরের মতো সামরিক পদক্ষেপের পরপরই প্রকাশিত এই চুক্তি ভারত-মার্কিন-পাকিস্তান সম্পর্কে একটি নতুন এবং জটিল অধ্যায় যোগ করে। এটা স্পষ্ট হয়ে উঠছে যে ভবিষ্যতের কৌশলগত যুদ্ধগুলি কেবল অস্ত্র দিয়ে নয়, আর্থিক এবং প্রযুক্তিগত জোটের মাধ্যমেও লড়াই করা হবে। এই চুক্তির পূর্ণ সত্য প্রকাশ না পাওয়া পর্যন্ত, প্রশ্ন থেকেই যাবে যে এই চুক্তিটি কি প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য ছিল নাকি এর পিছনে কোনও লুকানো রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা এজেন্ডা ছিল?
No comments:
Post a Comment