লাইফস্টাইল ডেস্ক, ২৩ মে ২০২৫: আমাদের দেশে চাকরিরতদের মধ্যে হৃদরোগ বা কার্ডিওভাসকুলার রোগ দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে। আশ্চর্যের বিষয় হল, দেশের যেসব রাজ্যকে অধিক উন্নত বলে মনে করা হয়, সেখানেই এই বৃদ্ধি বেশি দেখা যাচ্ছে। বিশেষ করে দক্ষিণ ও পশ্চিম ভারতে মানুষের মধ্যে হৃদরোগের হার বাড়ছে। আসলে বর্তমান সময়ের অতিরিক্ত ব্যস্ততা, কাজের চাপ ইত্যাদি জনজীবনে ব্যাপক হারে প্রভাব ফেলছে। আধুনিক জীবনযাত্রায় মানুষ তাঁদের স্বাস্থ্যের যত্নও নিতে পারছেন না। এছাড়াও এর জন্য কিছু বিষয় দায়ী, যেমন -
প্রক্রিয়াজাত খাবার হুমকির কারণ -
টিওআই-এর খবরে বিশেষজ্ঞরা বলেছেন যে, মানুষ গ্রাম থেকে শহরে চলে আসার সাথে সাথে তাঁদের জীবনযাত্রাও দ্রুত পরিবর্তিত হচ্ছে। আগে মানুষ বাড়িতে তাজা এবং সুষম খাবার খেতেন, কিন্তু এখন এর স্থান নিয়েছে ফাস্ট ফুড এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার। কিউএসআর (কুইক সার্ভিস রেস্তোরাঁ)- এর মাধ্যমে খাওয়া এখন একটি সাধারণ অভ্যাসে পরিণত হচ্ছে, বিশেষ করে যাঁরা চাকরি বা ব্যস্ততার কারণে বাড়িতে রান্না করতে অক্ষম তাঁদের জন্য। যৌথ পরিবারের পরিবর্তে একক পরিবারের প্রবণতা এবং ব্যস্ত রুটিনের ফলে ঘরে খাবার রান্না করা কঠিন হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে, মানুষ প্রক্রিয়াজাত, খাওয়ার জন্য প্রস্তুত এবং ফ্রোজেন খাবারের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে, যা গরম এবং আর্দ্র আবহাওয়ায় শরীরের জন্য উপযুক্ত নয়। এতে হৃদরোগের ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়।
অফিসের সবচেয়ে খারাপ খাবার -
মজার ব্যাপার হল, আমরা প্রায়শই কর্মক্ষেত্রে দিনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ খাবার খাই, কিন্তু সেখানেই আমরা সবচেয়ে খারাপ সিদ্ধান্ত নিই। কোম্পানিগুলি এখন বুঝতে পারছে যে স্বাস্থ্যকর খাবার কেবল একটি সুবিধা নয় বরং কর্মীদের স্বাস্থ্যের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। অফিসের ক্যান্টিনে স্থানীয় ও ঐতিহ্যবাহী খাবার থাকলে কর্মীদের স্বাস্থ্যের উন্নতি হতে পারে। ভারতের সবচেয়ে বড় শক্তি হল সবসময়ই তাজা এবং মৌসুমি খাবার। কিন্তু আজকাল পাস্তা, ওটস এবং কর্নফ্লেক্স স্বাস্থ্যকর বলে মনে করা হয় এবং চিন্তা না করেই খাওয়া হয়, যেখানে ভারতীয় নিরামিষ জীবনধারা অনুসারে এগুলি পুষ্টির ভারসাম্য প্রদান করতে সেভাবে সক্ষম নয়। এগুলি কেবল তখনই খাওয়া উচিৎ, যখন সুষম খাবার হিসেবে প্রস্তুত করা হয়। স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত খাদ্য ব্যবহার কেবল পুষ্টির উন্নতিই করবে না বরং কৃষি সম্প্রদায়কে সহায়তা করবে, পরিবেশ রক্ষা করবে এবং কার্বন ফ্রুটপ্রিন্ট কমাবে।
শারীরিক কার্যকলাপও গুরুত্বপূর্ণ -
তবে, হৃদরোগের পিছনে খাদ্যাভ্যাসই একমাত্র কারণ নয়; জীবনধারাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। বিশেষ করে যারা সারাদিন অফিসে বসে থাকেন তাঁদের জন্য। অন্যদিকে, কারখানায় বা দোকানের মেঝেতে কর্মরত কর্মীরা শারীরিকভাবে বেশি সক্রিয় থাকেন, যা তাঁদের স্বাস্থ্য তুলনামূলকভাবে ভালো রাখে। এটি প্রমাণ করে যে, যদি সুষম খাদ্যের পাশাপাশি নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপ করা হয়, তাহলে হৃদরোগের ঝুঁকি অনেকাংশে কমানো সম্ভব।
অতএব, কেবল স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়াই গুরুত্বপূর্ণ নয় বরং প্রতিদিন কিছু না কিছু কার্যকলাপ করাও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির সাথে সাথে, ভারতীয়দের তাঁদের জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাস সম্পর্কে আরও সচেতন হতে হবে। বিশেষ করে শহুরে এবং শ্রমিক শ্রেণীর মানুষদের, যাদের এখন তাঁদের স্বাস্থ্যের প্রতি অগ্রাধিকার দিতে হবে।
No comments:
Post a Comment