কলকাতা, ২৭ জুন ২০২৫: কসবা কাণ্ডের কড়া সমালোচনা তৃণমূল কংগ্রেসের। সেইসঙ্গেই অপরাজিতা বিল পাস নিয়ে কেন্দ্রকে খোঁচা রাজ্যের শাসক দলের। উল্লেখ্য, দক্ষিণ কলকাতার কসবা এলাকায় অবস্থিত একটি আইন কলেজের ভেতরে এক ছাত্রীকে গণধর্ষণের অভিযোগ ওঠে। পুলিশের মতে, ২৫ জুন সন্ধ্যা ৭:৩০ থেকে ১০:৫০ টার মধ্যে কলেজ ক্যাম্পাসে এই ঘটনা ঘটে। ভুক্তভোগীর অভিযোগের ভিত্তিতে কসবা থানায় একটি এফআইআর দায়ের এবং তদন্ত শুরু করা হয়। এই ঘটনায় তিনজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে, যার মধ্যে একজন প্রাক্তন ছাত্র এবং দুইজন বর্তমান ছাত্র রয়েছে। গণধর্ষণের এই ঘটনার তীব্র সমালোচনা করেছে রাজ্যের শাসক দল।
শুক্রবার সমাজমাধ্যমে তৃণমূল কংগ্রেসের পেজে একটি পোস্টে লেখা হয়, "আমরা সাউথ ক্যালকাটা ল কলেজে ঘটে যাওয়া মর্মান্তিক ধর্ষণের ঘটনার তীব্র নিন্দা জানাই। কলকাতা পুলিশ দ্রুত পদক্ষেপ করে অভিযুক্ত তিনজনকেই গ্রেফতার করেছে এবং আগামীদিনেও দোষীদের বিরুদ্ধে আইনের সর্বোচ্চ কঠোরতা প্রয়োগ করে উপযুক্ত শাস্তি নিশ্চিত করা হবে।"
সেইসঙ্গে ধর্ষণ-বিরোধী অপরাজিতা বিলের প্রাসঙ্গিকতা মনে করিয়ে দেওয়া হয় ওই পোস্টে। "এই ভয়াবহ ঘটনা আবারও স্পষ্ট করে দিল, যৌন হেনস্থার বিরুদ্ধে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে তুলতে 'অপরাজিতা ধর্ষণ বিরোধী বিল' বাস্তবায়নের কতখানি প্রয়োজন আছে। দ্রুত তদন্ত, তাড়াতাড়ি বিচার এবং কঠোর শাস্তির মাধ্যমে অপরাধ দমন করতে এই বিল অপরিহার্য।" পাশাপাশি কেন্দ্রকে খোঁচা দিয়ে লেখা, "দুর্ভাগ্যজনকভাবে, কেন্দ্রের বিজেপি সরকার এখনও পর্যন্ত এই বিল কার্যকর করার জন্য কোনও উদ্যোগই নেয়নি।" প্রসঙ্গত, আরজি কর হাসপাতালে তরুণী চিকিৎসককে ধর্ষণ-খুনের ঘটনায় উত্তাল হয় দেশ। এই আবহে রাজ্য সরকার ধর্ষণ-বিরোধী অপরাজিতা বিল পাস করে। তবে, কেন্দ্রের অনুমোদন ছাড়া এটি প্রযোজ্য নয়।
পোস্টে আরও লেখা হয়েছে, "নির্যাতিতা যে গভীর মানসিক ও শারীরিক যন্ত্রণার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছেন, তাতে আমাদের হৃদয় ভারাক্রান্ত। মাননীয়া মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নেতৃত্বে রাজ্য প্রশাসন এই কঠিন সময়ে আক্রান্তকে সব রকম সহায়তা ও প্রয়োজনীয় সহানুভূতি প্রদানে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ন্যায়বিচার নিশ্চিতভাবেই হবে।"
অন্যদিকে এই গণধর্ষণ কাণ্ডে তৃণমূল কংগ্রেস ও রাজ্য সরকারকে কড়া নিশানা করেছে বিজেপি। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী ও বিজেপি আইটি সেলের প্রধান অমিত মালব্য সমাজমাধ্যমে একের পর এক তোপ দেগেছেন। এছাড়াও দোষীদের কঠোর শাস্তির দাবী ও নির্যাতিতার পাশে থাকার বার্তা দেওয়া হয়েছে।
উল্লেখ্য, পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, কলেজ ভবনের ভেতরেই গণধর্ষণের ঘটনাটি ঘটেছে। নির্যাতিতার প্রাথমিক মেডিক্যাল পরীক্ষা করা হয়েছে এবং বেশ কয়েকজন সাক্ষীর বক্তব্য রেকর্ড করা হয়েছে। অপরাধস্থল সুরক্ষিত করা হয়েছে এবং ফরেনসিক তদন্তের অপেক্ষায় রয়েছে। গ্রেফতার হওয়া তিন অভিযুক্তকে আলিপুর আদালতে হাজির করা হয়েছে। পুলিশ ১৪ দিনের হেফাজত চেয়েছিল, কিন্তু আদালত তাদের আগামী মঙ্গলবার পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া অভিযুক্তদের নাম মনোজিৎ মিশ্র (৩১ বছর), যিনি কলেজের প্রাক্তন ইউনিট সভাপতি ছিলেন, জায়েব আহমেদ (১৯ বছর) এবং প্রমিত মুখোপাধ্যায় (২০ বছর)। ২৬ জুন সন্ধ্যায় তালবাগান ক্রসিংয়ের কাছে মনোজিৎ ও জায়েবকে গ্রেফতার করা হয়। এরপর রাত ১২:৩০ টায় প্রমিতকে তার বাড়ি থেকে গ্রেফতার করা হয়। তিনজনের মোবাইল ফোনও বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
No comments:
Post a Comment