বিশ্ব পোহা দিবস: ইন্দোরবাসীদের হৃদস্পন্দন, জেনে নিন এর আকর্ষণীয় ইতিহাস

বিনোদন ডেস্ক, ০৭ জুন ২০২৫: সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর প্রথমেই যে প্রশ্নটি আসে তা হল, কী খাব? রবিবারের আরামদায়ক সকাল হোক, ব্যস্ত দিনের ব্যস্ত সকাল হোক বা দিনের যেকোনও সময়, অনেকেই আরাম করে খেতে পছন্দ করেন। এমনই একটি খাবার হল পোহা। পেঁয়াজ, আলু, চিনাবাদাম এবং লেবুর রস দিয়ে নরম পোহা খেলে সেরোটোনিনের মাত্রা বৃদ্ধি পায়, যা মেজাজ ভালো করে। এটি হালকা এবং সুস্বাদু। স্কুল হোক বা অফিসের লাঞ্চবক্স, এটি প্রায় সকলের প্রিয় খাবার। এই চ্যাপ্টা ভাত, যাকে আমরা পোহা বলি, এটি একটি সহজ জিনিস যা সবাই আন্তরিকভাবে গ্রহণ করে। ইন্দোরের কথা বলতে গেলে, পোহা সেখানকার পরিচয় হয়ে উঠেছে।

আমাদের দেশে লক্ষ লক্ষ মানুষের হৃদয়ে পোহার একটি বিশেষ স্থান রয়েছে। এর বিশেষত্ব হল এটি নিজের পছন্দ এবং স্বাদ অনুসারে তৈরি করা যায়। এটি একটি ফাঁকা ক্যানভাসের মতো যা আপনি যে উপাদানের সাথেই মেশান না কেন তার স্বাদ গ্রহণ করে। পেঁয়াজ, আলু এবং মশলা দিয়ে তৈরি ঝাল খাবার হোক বা গুড় এবং নারকেল দিয়ে তৈরি মিষ্টি খাবার, পোহা সব স্বাদের জন্য উপযুক্ত। তাই, আপনি উষ্ণ জলখাবার খুঁজছেন বা আরামদায়ক রাতের খাবারের জন্য আকাঙ্ক্ষা করুন না কেন, পোহা সর্বদা আপনার ক্ষিদে মেটাতে প্রস্তুত। এই শিল্প এবং জনপ্রিয়তার কারণে, প্রতি বছর ৭ জুন বিশ্ব পোহা দিবস পালিত হয় এবং এটি অত্যন্ত উৎসাহের সাথে পালিত হয়।

পোহা কীভাবে ইন্দোরের প্রাণ হয়ে উঠল

ইন্দোর, যা মিনি মুম্বাই নামেও পরিচিত, প্রতিটি ছোট দোকান এবং বড় রেস্তোরাঁয় পোহাকে একটি বিশেষ স্থান দেওয়া হয়েছে। মানুষ পোহার প্রতি পাগল। ইন্দোর থেকে শুরু হওয়া এই বিশেষ জলখাবার আজ সারা ভারতে বিখ্যাত হয়ে উঠেছে। এটি এতটাই সাশ্রয়ী যে প্রতিটি শ্রেণীর মানুষ এটি কিনে খেতে পারেন।

শিশু হোক বা বয়স্ক, বেশিরভাগ মানুষই পোহা পছন্দ করে। কিন্তু এটি কীভাবে ভারতের প্রতিটি কোণে পৌঁছেছে তার গল্পটি বেশ আকর্ষণীয়। পোহা হল ইন্দোর-বাসীদের জীবন এবং তাঁরা এটি খুব আগ্রহের সাথে খেতে পছন্দ করেন। বলা হয় যে, স্বাধীনতার প্রায় দুই বছর পরে পোহা ইন্দোরে এসেছিল। বিভিন্ন প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, মহারাষ্ট্রের বাসিন্দা পুরুষোত্তম জোশী যখন ইন্দোরে তাঁর মাসির বাড়িতে আসেন, তখন তাঁকে জলখাবারে পোহা পরিবেশন করা হয়। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি ইন্দোরের এই স্বাদ উপভোগ করেছিলেন। তিনি তিলক পথে 'উফার গৃহ' নামে একটি দোকান খুলে পোহা বিক্রি শুরু করেন। এখান থেকেই পোহার গল্প শুরু হয়।

পোহার বিভিন্ন নাম

বিশ্ব পোহা দিবস ৭ জুন পালিত হয়। এটি ইন্দোরের শিল্পী রাজীব নেমা শুরু করেছিলেন। পোহা বিভিন্ন রাজ্যে বিভিন্ন নামে পরিচিত। যেমন - মহারাষ্ট্র ও মধ্যপ্রদেশে এটি 'পোহে', বাংলা ও আসামে 'চিঁড়া', তেলেগুতে 'আতুকুলু' এবং গুজরাটে 'পাউয়া' নামে পরিচিত।

পোহার রেসিপি

পোহার কথা এত শুনে যদি আপনারও খেতে ইচ্ছে করে, তাহলে দ্রুত তৈরি হয়, এমন একটি রেসিপি জেনে নেওয়া যাক। 

পোহা তৈরির উপকরণ

পোহা/চিঁড়া - ১ কাপ

চিনাবাদাম - ২ চা চামচ

সরষে- ১ চা চামচ 

কারি পাতা- ৬-৮ টি

কাঁচা লঙ্কা কুঁচি- ৩-৪ 

পেয়াঁজ- ১ টি কুঁচি করে কাটা 

লবণ- স্বাদ অনুযায়ী 

টমেটো- ১ টি কুঁচি করে কাটা 

হলুদ গুঁড়ো - ১ চা চামচ 

মটরশুঁটি- ১/২ কাপ

ক্যাপসিকাম- ১/২ কুঁচি করে কাটা 

সাদা তেল- প্রয়োজন অনুযায়ী 

এলাচ ও দারুচিনি থেঁতো করা - ১/২ চা চামচ 

পদ্ধতি -

- প্রথমে পোহা ভালো করে ধুয়ে জল ঝরিয়ে রাখুন।

- এরপর একটি প্যানে তেল গরম করে সরিষা দানা দিন। সরিষা দানা ফাটতে শুরু করলে, পেঁয়াজ, কাঁচা লঙ্কা, কারি পাতা এবং বাদাম দিয়ে কিছুক্ষণ রান্না করুন।

- বাদাম ভাজা হয়ে গেলে, মটরশুঁটি, ক্যাপসিকাম এবং টমেটো যোগ করুন এবং ভালো করে মিশিয়ে নিন।

- এবার লবণ এবং হলুদ যোগ করে ঢেকে রাখুন এবং টমেটো গলে যাওয়া পর্যন্ত রান্না করুন।

- এর পরে ভেজানো পোহা যোগ করুন। যদি আপনি মশলাদার পছন্দ করেন তবে আপনি এতে লাল লঙ্কাও গুঁড়ো যোগ করতে পারেন।

- কিছু লোক এটি হালকা মিষ্টি পছন্দ করে, তাই আপনি চাইলে সামান্য চিনিও যোগ করতে পারেন। সবকিছু ভালো করে নাড়াচাড়া করুন এবং উপর থেকে থেঁতো করা এলাচ দারুচিনি ছড়িয়ে গ্যাসের আঁচ নিভিয়ে দিন। 

- পোহা প্রস্তুত, এখন এটি গরম গরম পরিবেশন করুন।

টিপস- আপনি চাইলে এতে সামান্য লেবুর রস ও ধনেপাতা কুঁচিও দিতে পারেন। এছাড়াও পছন্দের বিভিন্ন সবজি এতে যোগ করতে পারেন।