ভারতের চলচ্চিত্র ইতিহাসে শোলে একটি এমন নাম, যা শুধু সিনেমা নয়, এক ঐতিহাসিক অধ্যায়। এই ছবি ৫০ বছর পূর্ণ করেছে, তবুও এর জনপ্রিয়তা আজও অটুট। দর্শকের মনে ধর্মেন্দ্র-হেমা মালিনীর মিষ্টি রোমান্স, জয়া বচ্চনের নীরব উপস্থিতি কিংবা গব্বর সিংয়ের ভয়ঙ্কর সংলাপ যতটা দাগ কেটেছে, ততটাই দাগ কেটেছে অমিতাভ বচ্চনের অভিনীত জয় চরিত্রটি। কিন্তু খুব কম মানুষ জানেন, এই ছবির মাধ্যমেই বদলে গিয়েছিল তার ভাগ্য।
বারবার ব্যর্থতা আর হতাশা
শোলে আসার আগে অমিতাভ বচ্চনের জীবন খুব সহজ ছিল না। একের পর এক ছবি মুক্তি পাচ্ছিল, কিন্তু বক্স অফিসে ভরাডুবি ঘটছিল। তখনকার দিনে তিনি ছিলেন প্রায় ফ্লপ নায়ক। অনেকে মনে করতেন তার কণ্ঠস্বর খুব ভারী, চেহারায় সাধারণত্ব আছে, তাই দর্শক তাকে নায়ক হিসেবে মেনে নেবে না। অনেকেই পরামর্শ দিয়েছিলেন — “এই অভিনেতাকে দিয়ে কাজ করো না, তিনি সফল হবেন না।”
রমেশ সিপ্পির সাহসী সিদ্ধান্ত
কিন্তু পরিচালক রমেশ সিপ্পির চোখে অমিতাভের মধ্যে অন্যরকম কিছু ধরা পড়েছিল। তিনি দেখেছিলেন আনন্দ ছবিতে রাজেশ খান্নার পাশে শান্ত-গম্ভীর ডাক্তার চরিত্রে অমিতাভ কতটা স্বাভাবিক ছিলেন। আবার বোম্বে টু গোয়া ছবির এক গানে তার দেহভঙ্গি ও স্বাভাবিক ছন্দ আলাদা মাত্রা এনে দিয়েছিল। এই ছোট ছোট ঝলকই সিপ্পিকে বিশ্বাস করায় যে, ভেতরে এক অনন্য অভিনেতা লুকিয়ে আছে।
তবুও শোলে তৈরির আগে সবাই তাকে সতর্ক করেছিল — “অমিতাভকে নেবেন না, ভুল হবে।” কিন্তু সিপ্পি কারও কথা শোনেননি, নিজের অনুভূতি ও দূরদৃষ্টি দিয়ে তিনি অমিতাভকেই বেছে নিলেন।
জয় চরিত্রে সাফল্যের জাদু
শোলে-তে জয় চরিত্র ছিল চুপচাপ, সংযত কিন্তু শক্তিশালী। অমিতাভ সেই চরিত্রকে এমনভাবে ফুটিয়ে তুললেন, যা আজও দর্শক ভুলতে পারেনি। তার নীরব অভিব্যক্তি, গভীর দৃষ্টি আর সংলাপ বলার ভঙ্গি ছবিকে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গিয়েছিল। তিনি অন্য চরিত্রগুলোকেও উজ্জ্বল করে তুলেছিলেন নিজের শান্ত উপস্থিতির মাধ্যমে।
পরিচালকের মতে, ছবির যা যা চাহিদা ছিল, অমিতাভ নিখুঁতভাবে তা পালন করেছিলেন। তার অভিনয় এতটাই স্বাভাবিক ছিল যে দর্শক পর্দায় তাকে নিজের মতো করে গ্রহণ করেছিলেন।
ভাগ্যের মোড় ঘোরানো ছবি
শোলে-র সাফল্যের পর আর পিছনে তাকাতে হয়নি। অমিতাভ বচ্চন হয়ে ওঠেন “শতাব্দীর নায়ক”, আর রমেশ সিপ্পির সেই এক সাহসী সিদ্ধান্ত বলিউডকে উপহার দেয় তার সবচেয়ে বড় সুপারস্টারকে।
শোলে শুধু একটি কালজয়ী ছবি নয়, বরং প্রমাণ যে কখনও কখনও একজন পরিচালকের বিশ্বাস, সাহস আর ঝুঁকি একজন শিল্পীর জীবন পুরোপুরি বদলে দিতে পারে। রমেশ সিপ্পি যদি অমিতাভের উপর বাজি না ধরতেন, তাহলে হয়তো ভারতীয় সিনেমা আজ তার সবচেয়ে বড় নায়ককে পেত না।
No comments:
Post a Comment