আলঝাইমার এক ধরণের স্নায়বিক রোগ যেখানে মস্তিষ্কের কোষগুলি ধীরে ধীরে প্রভাবিত হতে শুরু করে। এর ফলে একজন ব্যক্তির স্মৃতিশক্তি দুর্বল হয়ে পড়ে, চিন্তাভাবনা ও বোঝার ক্ষমতা হ্রাস পায় এবং আচরণেও প্রভাব পড়ে। সাধারণত বয়স বাড়ার সাথে সাথে এই রোগ দেখা দেয়, তবে কখনও কখনও এটি ৫০ বছরেরও আগে দেখা দিতে পারে। এর প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে মস্তিষ্কে প্রোটিনের অস্বাভাবিক জমা, জেনেটিক কারণ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, মানসিক চাপ এবং খারাপ জীবনধারা। ধীরে ধীরে এই অবস্থা এতটাই গুরুতর হয়ে ওঠে যে ব্যক্তি স্বাভাবিক কাজ করতে, পরিবারকে চিনতে বা এমনকি নিজের যত্ন নিতেও অক্ষম হয়ে পড়ে।
আলঝাইমার কেবল স্মৃতিশক্তিকেই প্রভাবিত করে না, বরং ধীরে ধীরে পুরো শরীরেও গভীর প্রভাব ফেলে। প্রাথমিক পর্যায়ে, ব্যক্তি ছোট ছোট জিনিস ভুলে যাওয়ার অভ্যাসে পরিণত হয়। পরে, এই সমস্যাটি বৃদ্ধি পায় এবং বিভ্রান্তি, ভাষা সংক্রান্ত অসুবিধা এবং সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতাকে প্রভাবিত করে। রোগী ধীরে ধীরে খাওয়া, স্নান বা পোশাক পরার মতো দৈনন্দিন কাজগুলি ভুলে যেতে শুরু করে। অনেক সময় রোগী ভারসাম্য হারিয়ে ফেলে, হাঁটতে সমস্যা হয় এবং ঘুমের সমস্যা হয়। শেষ পর্যায়ে, রোগী সম্পূর্ণরূপে অন্যদের উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ে এবং তার জীবনযাত্রার মান ব্যাপকভাবে প্রভাবিত হয়।
বৃদ্ধ বয়সে পায়ের ব্যায়াম আলঝাইমারের ঝুঁকি কমায়
ফ্রন্টিয়ার্স ইন নিউরোসায়েন্স জার্নালে প্রকাশিত একটি গবেষণা অনুসারে, নিয়মিত পায়ের ব্যায়াম মস্তিষ্কের কার্যকারিতার উপর ইতিবাচক প্রভাব ফেলে। ব্যায়ামের সময় পায়ের বৃহৎ পেশীগুলির কার্যকলাপ মস্তিষ্কে প্রয়োজনীয় নিউরন এবং অক্সিজেন সরবরাহ উন্নত করে। এটি স্নায়ুতন্ত্রকে শক্তিশালী করে এবং মস্তিষ্কের কোষের ক্ষতি কমিয়ে দেয়। গবেষণায় আরও দেখা গেছে যে যারা বয়সের পরেও তাদের পায়ের ব্যায়াম চালিয়ে যান তাদের আলঝাইমার এবং ডিমেনশিয়ার ঝুঁকি অনেকাংশে হ্রাস পায়।
স্কোয়াট, হাঁটা, সাইকেল চালানো এবং লেগ প্রেসের মতো পায়ের শক্তির ব্যায়াম কেবল শরীরকে সুস্থ রাখে না, মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যেরও উন্নতি করে। এ ছাড়া, যোগব্যায়াম এবং প্রাণায়াম মস্তিষ্কের কোষগুলিকে রক্ষা করতেও সহায়ক হতে পারে। তাই, বয়স বাড়ার সাথে সাথে আপনার জীবনযাত্রায় নিয়মিত ব্যায়াম অন্তর্ভুক্ত করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
এই বিষয়গুলি মনে রাখবেন
প্রতিদিন কমপক্ষে 30 মিনিট পায়ের ব্যায়াম করুন।
হাঁটা, যোগব্যায়াম এবং সাইকেল চালানোকে আপনার রুটিনের অংশ করুন।
স্বাস্থ্যকর খাদ্য গ্রহণ করুন এবং পর্যাপ্ত ঘুম পান।
মদ্যপান এবং ধূমপান থেকে দূরে থাকুন।
মানসিকভাবে সক্রিয় থাকুন যেমন বই পড়া, ধাঁধা খেলা, নতুন জিনিস শেখা।
মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে ধ্যান করুন।
No comments:
Post a Comment