বিশ্বের অনেক দেশের উপর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের আরোপিত ভারী আমদানি শুল্কের প্রভাব এখন আমেরিকান ভোক্তাদের পকেটে স্পষ্টভাবে দৃশ্যমান। ব্লুমবার্গের এক প্রতিবেদন অনুসারে, জুলাই মাসে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মুদ্রাস্ফীতির সামান্য কিন্তু উল্লেখযোগ্য বৃদ্ধি রেকর্ড করা হয়েছে। খুচরা বিক্রেতারা ধীরে ধীরে আমদানিকৃত পণ্যের উপর বর্ধিত শুল্ক মূল্যের মধ্যে অন্তর্ভুক্ত করা শুরু করেছেন, যা সাধারণ ভোক্তার উপর ব্যয়ের বোঝা বাড়িয়ে তুলছে।
এই জিনিসপত্রের দাম বেড়েছে
ব্লুমবার্গের জরিপে অর্থনীতিবিদরা অনুমান করেছেন যে জুলাই মাসে মূল ভোক্তা মূল্য সূচক (CPI) 0.3% বৃদ্ধি পেয়েছে, যেখানে জুন মাসে এই বৃদ্ধি ছিল 0.2%। এই বছরের শুরু থেকে এটিই সবচেয়ে দ্রুত মাসিক বৃদ্ধি বলে মনে করা হচ্ছে। মূল CPI-তে খাদ্য ও জ্বালানির দাম অন্তর্ভুক্ত নয়। সস্তা পেট্রোলের কারণে জুলাই মাসে প্রধান CPI 0.2%-এ সীমাবদ্ধ ছিল, যা সামগ্রিক মুদ্রাস্ফীতির হার নিয়ন্ত্রণ করে। তবে গৃহস্থালির সাজসজ্জা এবং বিনোদন সামগ্রীর দামে শুল্কের প্রভাব দেখা দিতে শুরু করেছে। মূল পরিষেবা খাতে মুদ্রাস্ফীতি বর্তমানে স্থিতিশীল, তবে বিশেষজ্ঞরা বিশ্বাস করেন যে আগামী মাসগুলিতে শুল্কের প্রভাব আরও গভীর হবে।
ফেডারেল রিজার্ভের জন্য নতুন দ্বিধা
মার্কিন কেন্দ্রীয় ব্যাংক ফেডারেল রিজার্ভ এখন সুদের হার স্থিতিশীল রাখার চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি, একই সাথে বর্ধিত শুল্ক মুদ্রাস্ফীতি দীর্ঘ সময়ের জন্য উচ্চ রাখতে পারে কিনা তা মূল্যায়ন করার সময়। শ্রমবাজারে মন্দার লক্ষণগুলির মধ্যে, অনেক কোম্পানি মূল্য-সংবেদনশীল গ্রাহকদের উপর শুল্কের সম্পূর্ণ বোঝা চাপানো এড়াতে উপায় খুঁজছে। জুলাইয়ের খুচরা বিক্রয়ের তথ্যে একটি ভাল বৃদ্ধি আশা করা হচ্ছে, যা যানবাহন বিক্রয় এবং অ্যামাজন প্রাইম ডে-এর মতো অনলাইন বিক্রয়ের উপর প্রণোদনা প্রদানে অবদান রেখেছে। তবে, বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন যে এই শক্তিটি অতিমাত্রায় হতে পারে, কারণ জুন মাসে প্রকৃত আয় বৃদ্ধি হ্রাস পেয়েছে।
ভারতের উপর ৫০% শুল্ক আরোপ
আমেরিকা ও চীনের মধ্যে অস্থায়ী বাণিজ্য যুদ্ধবিরতি শীঘ্রই শেষ হতে চলেছে, কিন্তু ট্রাম্প প্রশাসন ইতিমধ্যেই ভারতের উপর কঠোর অবস্থান নিয়েছে। রাশিয়া থেকে ভারতের বৃহৎ আকারে তেল ক্রয়ের ফলে ক্ষুব্ধ হয়ে ট্রাম্প প্রথমে ২৫% এবং তারপরে অতিরিক্ত ২৫% শুল্ক আরোপ করেন। এর ফলে মোট শুল্ক ৫০% এ পৌঁছে যা কোনও প্রধান বাণিজ্যিক অংশীদারের উপর আমেরিকার আরোপিত সর্বোচ্চ শুল্ক।
এই পদক্ষেপ ভারতের রপ্তানিকারকদের, বিশেষ করে রত্ন ও অলংকার শিল্পের জন্য বিরাট ধাক্কা বলে আশা করা হচ্ছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ভারতীয় অলংকারগুলির জন্য একটি প্রধান বাজার এবং মুম্বাইয়ের SEEPZ থেকে উৎপাদিত পণ্যের ৮০৮৫% মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা হয়। এই খাতে প্রায় ৫০,০০০ লোক নিয়োগ করা হয়। বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করছেন যে এই শুল্ক ভারতের রপ্তানি প্রতিযোগিতামূলকতাকে দুর্বল করবে এবং জিডিপি প্রবৃদ্ধির উপরও প্রভাব ফেলতে পারে।
No comments:
Post a Comment