নিজস্ব সংবাদদাতা, বারাসত, ১০ আগস্ট ২০২৫: 'জনপ্রিয়তা কমছে, আগের মত ভিড় হয় না।' আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনে বারাসত কেন্দ্রে তৃণমূলের জয় নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে এমন মন্তব্য করলেন বারাসতের বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। ফের প্রার্থী হওয়া নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন বলে জানান চিরঞ্জিত।
২১ সালের বিধানসভা নির্বাচনের সময় থেকে প্রার্থী হতে না চাওয়ার কথা প্রকাশ্যে বলার পরেও তৃতীয় বার প্রার্থী হয়ে বারাসত থেকে জিতেছেন অভিনেতা চিরঞ্জিত চক্রবর্তী। দু মাস আগে বারাসতে এসে বলেন, যারা রাজনীতি করেন তাদের কাউকে প্রার্থী করা উচিৎ। গত বুধবার বিরোধীতা দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বারাসতে কন্যা সুরক্ষা মিছিল করতে এসে বলেন, "ভোটের সময় বারাসতের বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তীকে দেখা যায়। ভোটের পর দেখা যায় না।বারাসত এবার আমরা জিতব।"
তৃণমূলের অন্দরে গুঞ্জন, সাংসদ কাকলি ঘোষদস্তিদারের ছেলে বৈদ্যনাথ ঘোষ দস্তিদার ২৬ সালে প্রার্থী হতে পারেন বারাসত কেন্দ্র থেকে। চিরঞ্জিত চক্রবর্তী এবার প্রার্থী হচ্ছেন না। সূত্রের খবর, তৃণমূলের পরামর্শ দাতা সংস্থা আইপ্যাক- এর সমীক্ষায় উঠে এসেছে বারাসতের বিধায়কের ওপর খুশি নন ভোটাররা। তৃণমূল সূত্রের আরও দাবী, তৃণমূলের বারাসত সাংগঠনিক জেলার চেয়ারম্যান সব্যসাচী দত্ত, হাবড়ার বিধায়ক জিযোতিপ্রিয় মল্লিক, অশোকনগরের বিধায়ক নারায়ণ গোস্বামী ছাড়াও দুই চিকিৎসক চেষ্টা করছেন প্রার্থী হতে, যাদের একজন সাংসদ কাকলি পুত্র বৈদ্যনাথ ঘোষদস্তিদার।
তৃণমূলের সাংগঠনিক সূত্রের খবর, বারাসতের মানুষ চাইছে বারাসতের ভূমি পুত্র কেউ প্রার্থী হোক। যাদের নাম ভাসছে তারা কেউই বারাসতের বাসিন্দা নন। সেক্ষেত্রে বারাসত পৌরসভার চেয়ারম্যান অশনি মুখোপাধ্যায় এবং ভাইস চেয়ারম্যান তথা তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি তাপস দাশগুপ্ত বারাসতে পরিচিত মুখ। তৃণমূলের একাংশের দাবী, অশনি ও তাপসের বিরুদ্ধে এমন কিছু অভিযোগ দলের শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পৌঁছেছে তাতে করে টিকিট পাওয়া প্রায় অসম্ভব। তাদের আরও দাবী, বারাসত সাংগঠনিক জেলার সভাপতি কাকলির সুনজরেও নেই তারা। কাকলি নিজের ছেলেকে প্রার্থী করতে উদ্যোগী হয়েছেন। এমন গুঞ্জন তৃণমূলের সংগঠনের বাইরে প্রকাশ্যে ঘুরছে মানুষের মুখে মুখে।
এদিন (রবিবার) বারাসত পৌরসভার ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুমিত সাহার রক্তদান শিবিরে আসেন চিরঞ্জিত। সেখানে বক্তব্য রাখতে গিয়ে নিজেই বলেন, 'মাসে আট দিন তিনি বারাসত আসেন। অভিনয় জগত থেকে আসা জনপ্রতিনিধি কেউই এতটা সময় দেয় না। আমি কি করে জিতি জানি না। কেন আমাকে ভোট দেন ভোটাররা জানিনা। তবুও জিতে আসছি পরপর তিন বার। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ডেকেছেন চলতি মাসের ১৯ তারিখ। বেশি কিছু চাইলে দিতে পারব না। দেখা যাক মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কি করেন।'
পরে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে বলেন, "আগেই বলেছি রাজনীতির লোকেদেরই বিধায়ক হওয়া উচিৎ বলে মনে করি। আমাকে নেত্রী বললে আমি না করতে পারি না। অভিষেক ডেকেছে দেখা যাক কি বলে। শুভেন্দু অধিকারী আমাকে সচ্ছ ইমেজের কথা বলেছেন বিধানসভায়। রাজনীতি করতে গেলে বিরোধীরা বলবে। উনি তেমনই বলেছেন।"
কাকলি পুত্রের প্রার্থী হওয়া নিয়ে বলেন, "শুধু ও কেন ৩৫ জন আছে। আমি না দাঁড়ালে সংখ্যাটা ৪০ জন হতে পারে। কে দাঁড়াবে দেখা যাবে।" এদিনের অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন খাদ্যমন্ত্রী রথীন ঘোষ। তিনি বলেন, "দল সিদ্ধান্ত নেবে কে প্রার্থী হবে। চিরঞ্জিত নিজের বক্তব্য বলেছেন।"
চিরঞ্জিত নবান্ন চলো অভিযানে নির্যাতিতার মা আহত হওয়া নিয়ে চিরঞ্জিত বলেন, "ঘটনায় আমি মর্মাহত। তবে কে বা কারা করেছে সে সম্পর্কে আমি অবগত নয়। যারা নিয়ে গেছিল এই অভিযানে তারা ঠিক মতন নিরাপত্তা দিতে পারেনি। তবে এ ধরনের ঘৃণ্যতম ঘটনার সঠিক বিচার ডেফিনেটলি হওয়া উচিৎ। কারণ আমিও মনে করছি সঠিকভাবে তদন্ত হয়নি, এ ঘটনায় একা কেউ অভিযুক্ত নয় তদন্ত আরো সুস্পষ্ট হওয়া উচিৎ। সিবিআইয়ের যথেষ্ট গাফিলতি আছে বলে আমি মনে করছি। চিরঞ্জিত বলেন, "সংবাদ মাধ্যম প্রকাশ্যে এনেছে প্লেস অফ অকারেন্সে সিবিআই কোন তদন্ত করেনি। তাহলে সঠিক তদন্ত হয় কিভাবে।"
এদিন বারাসত রামকৃষ্ণপুর বর্ণালী সংঘের রক্তদান শিবিরে এসে বিধায়ক চিরঞ্জিত চক্রবর্তীর করা বিস্ফোরক মন্তব্যের পর তৃণমূলের অন্দরে উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। তিনি বলেন, আমি জানি আমার বিধানসভার মানুষগুলো কষ্ট পাচ্ছে। কিন্তু আমার এতে কিছু করার নেই বারাসতের উপর দিয়ে বয়ে যাওয়া কৃষ্ণনগর জাতীয় সড়ক (NH 12)ও যশোর রোড(NH 112) নিয়ে সরব হন তিনি। তিনি বলেন, "আমি নিজেও যশোর রোড দিয়ে যাতায়াত করে এসেছি সত্যিই আশঙ্কাজনক অবস্থা কিন্তু এটি কেন্দ্রের, কেন্দ্র না করলে আমার কিছু করার নেই। আমি ইতিমধ্যেই এ নিয়ে নিয়মিত কেন্দ্রীয় একাধিক দপ্তরে অভিযোগ জমা দিয়েছি। গত ৬ ই আগস্ট নারী সুরক্ষা যাত্রায় রাজ্যের বিরোধী দলনেতা বারাসাতে এসে সভামঞ্চ থেকে দাঁড়িয়ে বলেছিলেন বারাসাত বিধানসভা কেন্দ্রের বিধায়ক *বসন্তের কোকিল* সঠিক সময় মানুষটিকে দেখা যায় না।"
এ প্রসঙ্গে বিধায়ক পাল্টা বলেন, "আমি সপ্তাহে ২ বার অর্থাৎ মাসে ৮ বার এবং বছরে ৯৬ থেকে ১০০ বার আসি। এবার ১৫ বছরের হিসাবটা আমার মানুষই করুক কতবার আমি এসেছি। একজন অভিনেতা বিধায়ক হয়ে কে কতবার তার অ্যাসেম্বলি ঘুরে আমার জানা নেই তবে আমি আমার সর্বাগ্রে চেষ্টা করি।" তিনি এও বলেন, শুভেন্দু এবং আমার বন্ধুত্বের সম্পর্ক তিনি নিজে বলেছেন আমি স্বচ্ছ। পাল্টা তিনি এও বলেন কুণাল ঘোষ ও বলেছিলেন শুভেন্দু স্বচ্ছ। আমার এবং শুভেন্দু অধিকারীর বন্ধুত্বের সম্পর্ক। আমাদের সকলেরই বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে। কিন্তু রাজনীতির ময়দানে একে অপরের ভিন্ন প্রতিদ্বন্দী। তবে ২০১১ সালে ভোটে দাড়ানোর সময় যে পপুলারিটিটা আমি পেয়েছিলাম সেটা আস্তে আস্তে কমছে। এটাও আমি বুঝতে পারছি। আমার ভোটে দাঁড়ানোর কোনও ইচ্ছা নেই ২০২৬ এ।
তবে মমতা যদি বলেন তাঁর কথাই শেষ কথা, তিনি রাজ্যের স্টেটসম্যান। তবে ২৬ এর নির্বাচনের প্রাক্কালে বহুবার বিতর্ক হয়েছে বারাসাত লোকসভার তৃণমূল প্রার্থীকে কেন্দ্র করে কখনও নাম উঠে এসেছে এই লোকসভা কেন্দ্রের সংসদের ছেলে বৈদ্যনাথ ঘোষ দস্তিদারের আবার কখনও জেলা সভাধিপতি নারায়ণ গোস্বামী বা বিধায়ক জ্যোতিপ্রিয় মল্লিক সহ অন্যান্যদের। ভোট বৈতরণীতে কে হবে বারাসাতে শেষ তরুপের তাস তা মমতার হাতে রয়েছে বলেই জানান বারাসাতের বিধায়ক চিরঞ্জিত। তিনি এও বলেন, বারাসাতে তিনি না দাঁড়ালেন শুধুমাত্র সাংসদের ছেলেই নয়, আরও এরকম ৪০ জন রয়েছে। তবে শেষ সিদ্ধান্ত সুপ্রিমো নেবেন।
No comments:
Post a Comment