উচ্চ রক্তচাপ বা হাইপারটেনশন এখন সারা বিশ্বের অন্যতম সাধারণ স্বাস্থ্য সমস্যা। চিকিৎসকদের মতে, এটি ‘নীরব ঘাতক’ নামে পরিচিত, কারণ অনেক সময় রোগীরা প্রাথমিক অবস্থায় কোনো লক্ষণই টের পান না। অথচ অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে হৃদরোগ, স্ট্রোক, কিডনি ড্যামেজ এবং চোখের সমস্যা পর্যন্ত দেখা দিতে পারে। তবে সুখবর হলো, জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনলেই উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব।
বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো সঠিক খাদ্যাভ্যাস। অতিরিক্ত লবণ বা নোনতা খাবার এড়িয়ে চলা জরুরি। কারণ লবণ শরীরে অতিরিক্ত সোডিয়াম জমিয়ে রাখে, যা রক্তচাপ দ্রুত বাড়িয়ে দেয়। এর পরিবর্তে খাবারে লেবু, আদা, মশলা বা ভেষজ ব্যবহার করলে স্বাদ বজায় থাকে আবার ক্ষতিও হয় না। পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত খাবার যেমন ফাস্টফুড, ক্যানজাত স্যুপ বা প্যাকেটজাত স্ন্যাকস এড়িয়ে চলা প্রয়োজন, কারণ এগুলোতে লুকানো লবণের মাত্রা অত্যধিক থাকে।
প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় বেশি করে শাকসবজি, ফল, ডাল, বাদাম ও আঁশযুক্ত খাবার রাখার পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকেরা। বিশেষ করে কলা, কমলা, পালং শাক, মিষ্টি আলু ও টমেটোর মতো পটাশিয়ামসমৃদ্ধ খাবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক। তাছাড়া পর্যাপ্ত পরিমাণে দানা শস্য যেমন ওটস বা লাল চাল খাওয়া উচিত, যা শরীরকে শক্তি দেয় এবং রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক রাখে।
খাবারের পাশাপাশি নিয়মিত শারীরিক পরিশ্রমও অত্যন্ত জরুরি। প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট দ্রুত হাঁটা, সাইক্লিং, সাঁতার বা হালকা ব্যায়াম করলে হৃদযন্ত্র সক্রিয় থাকে এবং রক্তচাপ স্বাভাবিক মাত্রায় আসে। যাঁরা দীর্ঘ সময় অফিসে বসে কাজ করেন, তাঁদের উচিত মাঝেমধ্যে উঠে দাঁড়ানো, হাঁটা বা হালকা স্ট্রেচিং করা। এতে শরীরের চাপ কমে যায় এবং রক্ত চলাচল সহজ হয়।
মানসিক চাপ বা স্ট্রেসও উচ্চ রক্তচাপ বাড়িয়ে দেয়। আধুনিক জীবনযাত্রায় অতিরিক্ত দুশ্চিন্তা ও অনিয়মিত ঘুমের কারণে অনেক তরুণ-তরুণীর মধ্যেও এখন হাইপারটেনশন দেখা দিচ্ছে। তাই মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য মেডিটেশন, যোগব্যায়াম বা পছন্দসই কোনো শখকে সময় দেওয়া ভালো ফল দেয়।
অতিরিক্ত ওজনও রক্তচাপ বাড়ানোর অন্যতম কারণ। শরীরের ওজন স্বাভাবিক মাত্রায় রাখতে নিয়মিত ব্যায়াম ও স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া দরকার। পাশাপাশি ধূমপান ও মদ্যপান পুরোপুরি এড়িয়ে চলার পরামর্শ দেন বিশেষজ্ঞরা। কারণ এগুলো শুধু রক্তচাপ নয়, হৃদযন্ত্র ও ফুসফুসের জন্যও মারাত্মক ক্ষতিকর।
সবশেষে চিকিৎসকেরা মনে করিয়ে দেন, নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা অত্যন্ত জরুরি। অনেক সময় লক্ষণ না থাকলেও চাপ বেড়ে যেতে পারে। তাই নিজের স্বাস্থ্যের সঠিক অবস্থা জানতে মাসে অন্তত একবার রক্তচাপ মাপা উচিত। সময়মতো সচেতনতা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনই উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধের সবচেয়ে কার্যকর উপায়।

No comments:
Post a Comment