আজকাল মৃত্যুর প্রধান কারণ হলো হৃদরোগ, এবং হার্ট অ্যাটাক হল সবচেয়ে সাধারণ কারণ। আগে বিশ্বাস করা হত যে লাল মাংস, মাখন এবং ভাজা খাবারের কারণে হার্ট অ্যাটাক হয়, কিন্তু নতুন গবেষণায় দেখা গেছে যে আসল ঝুঁকি অন্যত্র। হার্ট অ্যাটাকের আসল কারণ আমাদের খারাপ খাদ্যাভ্যাস এবং জীবনযাত্রা, যা ধীরে ধীরে আমাদের শরীরের ক্ষতি করে।
নাইট্রিক অক্সাইড: হৃদরোগের জন্য অপরিহার্য
ডাক্তার এবং বিশেষজ্ঞদের মতে, আমাদের শরীরে নাইট্রিক অক্সাইড নামে একটি বিশেষ অণু থাকে। এই অণু আমাদের রক্তনালীগুলিকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে। এটি রক্তনালীগুলিকে শিথিল করে, রক্ত সঞ্চালন উন্নত করে এবং ধমনীতে প্লাক (চর্বি) জমা হতে বাধা দেয়। যখন শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডের ঘাটতি থাকে, তখন রক্তচাপ বেড়ে যায়, যা হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকি বাড়ায়।
কোন অভ্যাস নাইট্রিক অক্সাইড কমায়?
পরিশোধিত চিনি (সাদা চিনি)
মিষ্টি, কোমল পানীয়, প্যাকেটজাত খাবার, সস এবং সিরিয়ালে পাওয়া পরিশোধিত চিনি নাইট্রিক অক্সাইডের সবচেয়ে বড় শত্রু। এটি দ্রুত রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায় এবং রক্তনালীতে প্রদাহ সৃষ্টি করে, যার ফলে নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা হ্রাস পায়। দীর্ঘমেয়াদী সেবন হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
পরিশোধিত স্টার্চ (সাদা ময়দা)
সাদা ময়দা দিয়ে তৈরি রুটি, বিস্কুট এবং পেস্ট্রি দ্রুত চিনিতে রূপান্তরিত হয়, যা দ্রুত রক্তে শর্করার পরিমাণ বাড়ায়। এটি রক্তনালীতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলে এবং নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা হ্রাস করে, যার ফলে হৃদরোগের স্বাস্থ্য খারাপ হয়।
শিল্পজাত বীজ তেল
সয়াবিন তেল, ভুট্টার তেল এবং সূর্যমুখী তেল প্রায়শই ফাস্ট ফুড এবং প্যাকেজজাত খাবারে ব্যবহৃত হয়। এই তেলগুলিতে উচ্চ পরিমাণে ওমেগা-৬ ফ্যাটি অ্যাসিড থাকে, যা শরীরে প্রদাহ বাড়ায়। এই তেলগুলিকে অতিরিক্ত গরম করলে এগুলি ক্ষয়প্রাপ্ত হতে পারে এবং বিষাক্ত যৌগ তৈরি হতে পারে যা হৃদরোগে অবদান রাখতে পারে।
ধূমপান
ধূমপান (সিগারেট, বিড়ি) শরীরে নাইট্রিক অক্সাইডের পরিমাণ হ্রাস করে। ধূমপানের ফলে মুক্ত র্যাডিকেল তৈরি হয় যা নাইট্রিক অক্সাইড ধ্বংস করে এবং রক্তনালীগুলিকে ক্ষতিগ্রস্ত করে। এটি হৃদরোগের উপর মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
ব্যাকটেরিয়ারোধী মাউথওয়াশ
কিছু মাউথওয়াশে এমন রাসায়নিক থাকে যা মুখের ভালো ব্যাকটেরিয়াকে মেরে ফেলে। এই ব্যাকটেরিয়া নাইট্রিক অক্সাইড তৈরিতে সাহায্য করে। অতএব, মাউথওয়াশের অতিরিক্ত ব্যবহার রক্তচাপ বাড়াতে পারে এবং হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়াতে পারে।
নাইট্রিক অক্সাইড বাড়ানোর জন্য কী করবেন?
সবুজ শাকসবজি: পালং শাক, আরগুলা এবং কেল জাতীয় সবুজ শাকসবজি নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
বিটরুট এবং এর রস: বিটরুটে নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদনকারী যৌগ থাকে এবং এর রস হৃদরোগের জন্য খুবই উপকারী।
রসুন এবং পেঁয়াজ: রসুন এবং পেঁয়াজ প্রাকৃতিকভাবে নাইট্রিক অক্সাইড বৃদ্ধি করার ক্ষমতা রাখে।
কমলা, লেবু এবং ডালিম: এই ফল এবং এর রসে ভিটামিন সি থাকে, যা নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন বাড়ায়।
বাদাম এবং বীজ: বাদাম (বাদাম, আখরোট) এবং বীজ, যেমন আর্জিনিন সমৃদ্ধ, নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
ডার্ক চকোলেট (কোকো): ডার্ক চকোলেটে ফ্ল্যাভোনয়েড থাকে যা নাইট্রিক অক্সাইড উৎপাদন বাড়ায়।
নিয়মিত অ্যারোবিক ব্যায়াম: দ্রুত হাঁটা, দৌড়ানো এবং সাঁতার কাটার মতো অ্যারোবিক ব্যায়াম নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা বাড়ায়।
ভালো ঘুমান এবং মানসিক চাপ কমাতে পর্যাপ্ত এবং মানসম্পন্ন ঘুম পান এবং চাপ কমাতে গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, ধ্যান এবং প্রকৃতিতে হাঁটার মতো অভ্যাস গ্রহণ করুন।
রোদে সময় কাটান: প্রতিদিন রোদে সময় কাটালে শরীরে ভিটামিন ডি তৈরি হয়, যা নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা বাড়াতে সাহায্য করে।
যদি আপনি হৃদরোগ এড়াতে চান, তাহলে আপনার জীবনধারা এবং খাদ্যাভ্যাস উন্নত করা গুরুত্বপূর্ণ। নাইট্রিক অক্সাইডের মাত্রা বাড়ানোর জন্য স্বাস্থ্যকর খাদ্যাভ্যাস, নিয়মিত ব্যায়াম এবং স্বাস্থ্যকর অভ্যাস গ্রহণ অপরিহার্য।
বিঃদ্রঃ: এই তথ্যটি সাধারণ স্বাস্থ্য সচেতনতার জন্য। যদি আপনার হৃদরোগ বা অন্যান্য রোগের ঝুঁকি থাকে, তাহলে আপনার ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করুন।
No comments:
Post a Comment