আজকের পৃথিবীতে ফ্যাটি লিভার একটি সাধারণ কিন্তু গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। এই রোগটি প্রায়শই নীরবে বৃদ্ধি পায় এবং যখন একজন ব্যক্তি এটি সম্পর্কে সচেতন হন, তখন অবস্থাটি গুরুতর হয়ে ওঠে।
ফ্যাটি লিভার বলতে বোঝায় যে লিভারে অতিরিক্ত চর্বি জমা হয়। যদি এই চর্বি লিভারের মোট ওজনের ৫-১০ শতাংশের বেশি হয়, তবে একে ফ্যাটি লিভার বলা হয়। আয়ুর্বেদে, এই অবস্থাকে লিভার-মেডোরোগা বলা হয়, যেখানে লিভারের অগ্নি (আগুন) দুর্বল হয়ে পড়ে এবং চর্বি সঠিকভাবে হজম হতে পারে না।
ফ্যাটি লিভারের প্রধান কারণগুলির মধ্যে রয়েছে অতিরিক্ত অ্যালকোহল গ্রহণ, স্থূলতা, উচ্চ চর্বিযুক্ত, ভাজা বা ফাস্ট ফুড খাওয়ার অভ্যাস, ডায়াবেটিস এবং ইনসুলিন প্রতিরোধ ক্ষমতা, কম শারীরিক কার্যকলাপ, নির্দিষ্ট ওষুধের অতিরিক্ত ব্যবহার, মানসিক চাপ এবং অনিয়মিত জীবনধারা। এই কারণগুলি লিভারের উপর অতিরিক্ত চাপ সৃষ্টি করে এবং শরীরের জৈবিক ঘড়িকে প্রভাবিত করে। আয়ুর্বেদের মতে, যখন শরীরের চর্বি বৃদ্ধি পায় এবং অগ্নি (আগুন) দুর্বল হয়ে যায়, তখন লিভারের কোষগুলি চর্বি ভাঙতে অক্ষম হয়, যার ফলে ফ্যাটি লিভার হয়।
ফ্যাটি লিভারকে একটি নীরব রোগ বলা হয় কারণ এটি ধীরে ধীরে খারাপ হতে পারে। প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয় এবং জীবনযাত্রার পরিবর্তন এটি প্রতিরোধ করতে পারে। নিয়মিত ব্যায়াম, সুষম খাদ্যাভ্যাস এবং চাপমুক্ত জীবনধারা ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধ করতে পারে এবং লিভারের কার্যকারিতা বজায় রাখতে পারে।
ঘরোয়া প্রতিকারও ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণে কার্যকর। প্রথমত, আমলকী (ভারতীয় আমলকী) খাওয়া গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি লিভারকে বিষমুক্ত করে এবং হজমের আগুনকে শক্তিশালী করে। প্রতিদিন খালি পেটে আমলকী রস পান করা উপকারী। হলুদ খাওয়াও লিভারের প্রদাহ কমায়। হালকা গরম দুধের সাথে হলুদ মিশিয়ে রাতে পান করা উপকারী। ত্রিফলা গুঁড়ো লিভার পরিষ্কার করতে এবং কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সাহায্য করে। উপরন্তু, নিম এবং গুলঞ্চের মতো ভেষজ লিভারকে বিষমুক্ত করে। পেঁপে এবং রসুন খাওয়াও লিভারের উপর বোঝা কমায় এবং ফ্যাটি লিভারের জন্য উপকারী।
জীবনধারার পরিবর্তনও গুরুত্বপূর্ণ। প্রতিদিন কমপক্ষে 30 মিনিট হাঁটা, যোগব্যায়াম, প্রাণায়াম এবং ধ্যান অনুশীলন করা উচিত। অ্যালকোহল এবং ধূমপান সম্পূর্ণরূপে এড়িয়ে চলুন এবং তৈলাক্ত, মশলাদার এবং জাঙ্ক খাবার সীমিত করুন। মানসিক চাপ কমাতে ধ্যান এবং প্রাণায়াম অনুশীলন করুন। আপনার খাদ্যতালিকায় সবুজ শাকসবজি, মৌসুমী ফল, গোটা শস্য এবং প্রোটিন সমৃদ্ধ খাবার অন্তর্ভুক্ত করুন। ঠান্ডা পানীয় এবং প্যাকেজজাত জুসের মতো চিনিযুক্ত পানীয় এড়িয়ে চলুন এবং প্রচুর পরিমাণে জল পান করুন।
No comments:
Post a Comment