আধুনিক জীবনে মানসিক চাপ বা স্ট্রেস একটি অস্বীকার করা যায় না এমন বাস্তবতা। কাজের চাপ, অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তা, সম্পর্কের টানাপোড়েন, দীর্ঘ সময় ধরে মোবাইল ও কম্পিউটারের ব্যবহার—সব মিলিয়ে মানুষের জীবনে স্ট্রেস বেড়েই চলেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, অতিরিক্ত মানসিক চাপ কেবল মানসিক সুস্থতাই নয়, শারীরিক স্বাস্থ্যের ওপরও ভয়ঙ্কর প্রভাব ফেলে।
মানসিক চাপ ও শরীরের সম্পর্ক
স্ট্রেসের সময় শরীর থেকে কর্টিসল নামক হরমোন নিঃসৃত হয়। স্বাভাবিক মাত্রায় কর্টিসল শরীরকে সাময়িকভাবে সতর্ক রাখে। কিন্তু এই হরমোন দীর্ঘসময় ধরে অতিরিক্ত নিঃসৃত হলে তা শরীরের বিভিন্ন অঙ্গ-প্রত্যঙ্গে মারাত্মক প্রভাব ফেলে।
স্ট্রেসের ফলে শরীরে যে সমস্যাগুলো দেখা দেয়
হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে: অতিরিক্ত মানসিক চাপ রক্তচাপ বৃদ্ধি করে, ধমনী সংকুচিত হয় এবং হার্ট অ্যাটাকের সম্ভাবনা তৈরি হয়।
চুল পড়া ও ত্বকের সমস্যা: কর্টিসলের প্রভাবে চুলের গোড়া দুর্বল হয়ে যায়, ফলে দ্রুত চুল পড়ে যায়। একই সঙ্গে ত্বকে ব্রণ, ফুসকুড়ি বা অ্যালার্জি দেখা দিতে পারে।
হজমে সমস্যা: দীর্ঘদিন স্ট্রেস থাকলে পেটে অ্যাসিড বেড়ে যায়, আলসার বা গ্যাস্ট্রিকের ঝুঁকি বাড়ে।
হরমোনের অসামঞ্জস্য: বিশেষ করে নারীদের মধ্যে হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট হয়ে ঋতুচক্রে অনিয়ম দেখা দেয়।
ঘুমের ব্যাঘাত: স্ট্রেসের কারণে অনিদ্রা, দুঃস্বপ্ন বা অস্থির ঘুম হতে পারে।
ইমিউন সিস্টেম দুর্বল হয়: দীর্ঘদিন স্ট্রেস থাকলে শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়, ফলে সহজেই অসুখে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বাড়ে।
গবেষণার তথ্য
বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণায় দেখা গেছে, যারা নিয়মিত অতিরিক্ত মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন, তাদের হৃদরোগ, ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপের ঝুঁকি তুলনামূলকভাবে দ্বিগুণ। এক গবেষণায় উল্লেখ করা হয়েছে, কর্মক্ষেত্রের চাপজনিত মানসিক সমস্যায় আক্রান্ত ব্যক্তিদের মধ্যে হার্ট অ্যাটাকের হার সাধারণ মানুষের তুলনায় ৪০% বেশি।
বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ
চিকিৎসক ও মনোবিজ্ঞানীরা বলছেন, স্ট্রেসকে অবহেলা করলে ভবিষ্যতে তা বড়ো রোগের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই জীবনযাপনে কিছু পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন—
নিয়মিত ব্যায়াম করা
পর্যাপ্ত ও শান্তিপূর্ণ ঘুম
যোগব্যায়াম ও ধ্যান চর্চা
সুষম খাদ্য গ্রহণ
অ্যালকোহল, ধূমপান ও ক্যাফেইন কমানো
পরিবার ও বন্ধুদের সঙ্গে সময় কাটানো
প্রয়োজনে মনোবিদ বা চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া
অতিরিক্ত মানসিক চাপকে অনেকেই সাধারণ সমস্যা মনে করেন। কিন্তু বাস্তবে এটি শরীরের ভেতরে এক নীরব শত্রুর মতো কাজ করে, যা ধীরে ধীরে বড়ো রোগে রূপ নেয়। তাই এখনই সচেতন হওয়া জরুরি। মানসিক চাপ নিয়ন্ত্রণে আনলে শুধু মন নয়, শরীরও সুস্থ ও প্রাণবন্ত থাকবে।

No comments:
Post a Comment