মিগ-২১-এর সফরনামা: আমেরিকার চাল ব্যর্থ, ‘উইডোমেকার’ থেকে রক্ষা পেল ভারত, ভারতীয় আকাশে নতুন রক্ষক হয়ে উঠল ‘জটায়ু’ - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, September 26, 2025

মিগ-২১-এর সফরনামা: আমেরিকার চাল ব্যর্থ, ‘উইডোমেকার’ থেকে রক্ষা পেল ভারত, ভারতীয় আকাশে নতুন রক্ষক হয়ে উঠল ‘জটায়ু’


 ১৯৬০-এর দশক ছিল ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে তীব্র উত্তেজনার সময়। ১৯৬২ সালের যুদ্ধের পর, উভয় দেশের সেনাবাহিনী সকল ফ্রন্টে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে ছিল। এই পরিস্থিতিতে, ভারতীয় বিমান বাহিনীর (IAF) এমন একটি সুপারসনিক যুদ্ধবিমানের প্রয়োজন ছিল যা কেবল শত্রুর বিরুদ্ধে সিদ্ধান্তমূলক প্রতিক্রিয়া জানাতে পারে না বরং ভারতের সামরিক শক্তিকে নতুন উচ্চতায় উন্নীত করতে পারে। কিন্তু গল্পে মোড় আসে যখন মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পাকিস্তানকে তার F-104 স্টারফাইটার উপহার দেয়। এই খবরটি ভারতের সামরিক কৌশলবিদদের জন্য একটি বড় মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। এখন প্রশ্ন ছিল ভারতের কোন জেটটি বেছে নেওয়া উচিত যা শক্তিশালী এবং ব্যয়বহুল উভয়ই হবে।



সেই সময়, ভারত তিনটি সুপারসনিক যুদ্ধবিমান বিবেচনা করেছিল: মার্কিন F-104 স্টারফাইটার, ফরাসি মিরাজ এবং সোভিয়েত ইউনিয়নের MiG-21। তবে, ভারতের একটি নির্দিষ্ট শর্ত ছিল: যেকোনো চুক্তিতে প্রযুক্তি হস্তান্তর জড়িত থাকতে হবে। তদুপরি, জেটের সমাবেশ এবং পরবর্তী উৎপাদন ভারতেই করতে হবে। পাকিস্তানের সাথে বন্ধুত্ব বজায় রাখার জন্য ব্যস্ত থাকা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র F-104 চুক্তিতে খুব কম আগ্রহ দেখায়। ফ্রান্সও তার মিরাজ প্রযুক্তি ভাগ করে নিতে অনিচ্ছুক ছিল। তবে, সোভিয়েত ইউনিয়ন (বর্তমান রাশিয়া) ভারতকে সমর্থন করে এবং MiG-21 চুক্তি চূড়ান্ত হয়। এই চুক্তির মাধ্যমে, হিন্দুস্তান অ্যারোনটিক্স লিমিটেড (HAL)ও MiG-21 তৈরির লাইসেন্স পায়। এটি ভারতের জন্য একটি গেম-চেঞ্জার প্রমাণিত হয়েছিল।


মিগ-২১ আকাশের সুপারস্টার হয়ে ওঠে।

মিগ-২১ কোনও সাধারণ যুদ্ধবিমান ছিল না। এর নকশা ছিল সহজ, নির্ভরযোগ্য এবং খরচ কম ছিল। পশ্চিমা সুপারসনিক জেটের তুলনায় এটি অনেক সস্তা ছিল, তবুও এর কর্মক্ষমতা ছিল অতুলনীয়। উচ্চ গতি, দ্রুত উচ্চতা অর্জনের ক্ষমতা এবং চটপটে উড়ান—এই গুণাবলীই মিগ-২১ কে একটি শক্তিশালী ইন্টারসেপ্টর করে তুলেছিল। চোখের পলকে শত্রু বিমান ধরা এবং আকাশে তার আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করা মিগ-২১ এর ট্রেডমার্ক হয়ে ওঠে। এই গুণাবলী এটিকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর প্রিয় করে তোলে।

আমেরিকান এফ-১০৪ "বিধবা নির্মাতা" হয়ে ওঠে
মিগ-২১ বেছে নিয়ে ভারত কেবল সঠিক সিদ্ধান্তই নেয়নি বরং আমেরিকার ফাঁদ থেকেও রক্ষা পেয়েছে। আমেরিকান এফ-১০৪ স্টারফাইটার, যাকে ভারত গর্বের সাথে "গেম-চেঞ্জার" বলে অভিহিত করেছিল, আসলে "বিধবা নির্মাতা" হয়ে ওঠে। ১৯৫০-এর দশকে নির্মিত এই জেটটি তার ত্রুটির কারণে বারবার বিধ্বস্ত হতে থাকে। জার্মানি এফ-১০৪-এর কাছে ৩০০ জনেরও বেশি পাইলটকে হারিয়েছে। ভারত সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছে, অন্যথায় আমাদেরও ক্ষতি হতে পারত।



'আকাশের আলেকজান্ডার'-এর প্রথম উড্ডয়ন

১৯৬৩ সালে, ভারতের 'জটায়ু', মিগ-২১, প্রথমবারের মতো ভারতের আকাশে উড়েছিল। ১৯৬৩ সালের এপ্রিলে, সোভিয়েত ইউনিয়ন থেকে মুম্বাই হয়ে ছয়টি মিগ-২১ যুদ্ধবিমান চণ্ডীগড়ে পৌঁছায়। এই বিমানগুলি অংশে ভাগ করা হয়েছিল, যা সোভিয়েত ইঞ্জিনিয়াররা চণ্ডীগড়ে একত্রিত করেছিলেন। সোভিয়েত পাইলটরা ভারতীয় পাইলটদের প্রশিক্ষণ দিয়েছিলেন। মিগ-২১ ভারতীয় বিমানবাহিনীকে রূপান্তরিত করেছিল। ১৯৬৫ এবং ১৯৭১ সালের যুদ্ধে, এটি শত্রুকে কঠিন সময় দিয়েছিল। কার্গিল যুদ্ধে, মিগ-২১ও তার শক্তি প্রদর্শন করেছিল এবং শত্রুরা পরাজিত হয়েছিল।

মিগ-২১ ভারতীয় বিমানবাহিনীর গর্ব হয়ে ওঠে।

মিগ-২১ কেবল একটি যুদ্ধবিমান নয়, বরং ভারতের সামরিক শক্তির প্রতীক হয়ে ওঠে। HAL দ্বারা ভারতে তৈরি মিগ-২১, কেবল বিমানবাহিনীকে শক্তিশালী করেনি, বরং দেশকে প্রযুক্তিগতভাবে স্বনির্ভরও করে তুলেছিল। এর সরলতা, শক্তি এবং সাশ্রয়ী মূল্য এটিকে ভারতীয় বিমান বাহিনীর "আলেকজান্ডার" করে তুলেছিল। আজও, মিগ-২১-এর গল্প প্রতিটি ভারতীয়কে গর্বিত করে, কারণ এটিই সেই জেট যা আকাশে ভারতের পতাকা উত্তোলন করেছিল।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad