ফুল গাছ মানেই শুধু সৌন্দর্য নয়, অনেকের কাছে এটি এক ধরনের ভালোবাসা ও মানসিক শান্তির জায়গা। তবে গাছকে সুস্থ রাখার জন্য নিয়মিত পরিচর্যার পাশাপাশি সঠিক খাদ্যও দরকার। বাজারের রাসায়নিক সার অনেক সময় দামি হয়ে যায়, আবার দীর্ঘদিন ব্যবহার করলে মাটির স্বাভাবিক গুণ নষ্ট হয়। তাই আজকাল অনেকেই ঝুঁকছেন ঘরোয়া সার ব্যবহারের দিকে। এগুলো সহজলভ্য, খরচ কম এবং গাছের জন্যও একেবারে নিরাপদ।
ঘরোয়া সারের গুরুত্ব
যদি ফুল গাছ প্রয়োজনীয় খাদ্য না পায়, তবে পাতায় হলদে ভাব আসে, কুঁড়ি শুকিয়ে যায়, কিংবা ফুলের সংখ্যা কমতে থাকে। মাটির উর্বরতা বজায় রাখতে এবং গাছকে দীর্ঘদিন সতেজ রাখতে প্রাকৃতিক সার দারুণ ভূমিকা রাখে। এগুলো গাছের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাও বাড়ায়।
কিছু জনপ্রিয় ঘরোয়া সার
1. চায়ের পাতা
ব্যবহৃত চায়ের পাতা শুকিয়ে মাটিতে মিশিয়ে দিলে গাছের জন্য প্রয়োজনীয় নাইট্রোজেন সরবরাহ হয়, যা বৃদ্ধি বাড়ায়।
2. ডিমের খোসা
খোসা শুকিয়ে গুঁড়ো করে দিলে ক্যালসিয়ামের ঘাটতি মেটে। এতে শিকড় মজবুত হয় এবং গাছ দ্রুত ফুল ফোটায়।
3. কলা খোসা
কলার খোসা পটাশ সমৃদ্ধ। মাটিতে মেশালে গাছে বেশি কুঁড়ি আসে এবং ফুল দীর্ঘস্থায়ী হয়।
4. সবজি ও ফলের উচ্ছিষ্ট
এগুলো পচিয়ে কম্পোস্ট তৈরি করলে অসাধারণ সার হয়। এতে নানা ধরনের খনিজ উপাদান থাকে, যা গাছকে সুস্থ রাখে।
5. চালের ঝোল
চাল ধোয়ার পর ফেলে দেওয়া ঝোল মাটিতে ব্যবহার করলে গাছ সতেজ থাকে এবং দ্রুত বৃদ্ধি পায়।
6. কফির গুঁড়ো
এটি মাটির অম্লতা বাড়ায়, যা গোলাপ বা জুঁইয়ের মতো অ্যাসিডপ্রেমী গাছের জন্য বিশেষভাবে উপকারী।
7. সরিষার খোল
ভিজিয়ে রেখে তৈরি করা তরল অংশ গাছে দিলে তা শক্তিশালী প্রাকৃতিক সার হিসেবে কাজ করে। ফুল ও পাতার জন্য এটি অত্যন্ত ভালো।
ব্যবহার করার সময় সতর্কতা
ঘরোয়া সার অতিরিক্ত ব্যবহার করা ঠিক নয়, সপ্তাহে একবারই যথেষ্ট।
সারের সঙ্গে পর্যাপ্ত আর্দ্রতা বজায় রাখতে হবে, না হলে শিকড়ে সমস্যা হতে পারে।
পচনশীল উচ্ছিষ্ট ব্যবহারের আগে ভালোভাবে শুকিয়ে বা গন্ধমুক্ত করে নিতে হবে, যাতে পোকামাকড় না আসে।
ঘরোয়া সার ব্যবহারের সবচেয়ে বড় সুবিধা হলো—এগুলো একেবারে প্রাকৃতিক এবং সহজে পাওয়া যায়। নিয়মিত যত্ন আর সঠিক পদ্ধতিতে প্রয়োগ করলে আপনার বাগানের ফুল গাছ সবসময় সতেজ, সবুজ ও রঙিন থাকবে। রাসায়নিক সার ছাড়াই সুন্দর ফুল ফোটানো সম্ভব—শুধু একটু যত্ন আর ভালোবাসাই যথেষ্ট।
No comments:
Post a Comment