ইংরেজি-সহ ছয়টি বিষয়ে এমএ পাশ প্রাথমিকের শিক্ষক পড়ুয়া অভিভাবকদের কাছে রোল মডেল - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Friday, September 5, 2025

ইংরেজি-সহ ছয়টি বিষয়ে এমএ পাশ প্রাথমিকের শিক্ষক পড়ুয়া অভিভাবকদের কাছে রোল মডেল


নিজস্ব সংবাদদাতা, উত্তর ২৪ পরগনা, ০৫ সেপ্টেম্বর ২০২৫: গরিব-দুঃস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েদের বিনা পারিশ্রমিকে পড়াতে ইংরেজি সহ ছয়টি বিষয়ে এমএ পাশ করেছেন এক প্রাথমিকের শিক্ষক। স্কুল ছুট পড়ুয়াদের স্কুলে আনতে সহ শিক্ষকরা ওই শিক্ষককে সামনে রেখে বোঝান।পড়ুয়াদের পড়াশোনায় আগ্রহ তৈরি করতে দেগঙ্গা সার্কেলের কেয়াডাঙা এফপি স্কুলের শিক্ষক লক্ষন পাল শিক্ষকদের কাছে রোল মডেল। 


দত্তপুকুর থানার রামমনি বাগান এলাকার বাসিন্দা লক্ষন পাল দেগঙ্গা সার্কেলের কেয়াডাঙা এফপি স্কুলে শিক্ষাকতা করেন। ২০১০ সালে প্রাথমিকে চাকরি পাওয়ার আগে তিনি গৃহ শিক্ষকতার পাশাপাশি বারাসত ১ ব্লকের দত্তপুকুরের গঙ্গাপুর অঞ্চলে একটি সাহায্যকারী শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাকতার কাজ শুরু করেন। ১৯৯২ সালে দত্তপুকুর এলাকার নিবাধুই উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সুব্রত বসু অবসর নেওয়ার পর এলাকার গরিব দুঃস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েদের বিনা পারিশ্রমিকে পড়াতে একটি সেন্টার চালু করেন। ওই বছর অবসর নেওয়ার আগে তিনি জাতীয় শিক্ষকের মর্যাদা পান ভারত সরকারের থেকে। সুব্রত বসুর প্রিয় ছাত্র ছিলেন লক্ষণ পাল। ওই সময় এলাকায় ইংরেজি শিক্ষকের অভাব থাকায় অল্প সময়ের মধ্যে তিনি সুনাম অর্জন করেন। লক্ষণ পাল কোনও বিষয়ে অনার্স ছাড়াই বিএ পাশ করায় প্রধান শিক্ষক সুব্রত বসুর পরামর্শে দূর শিক্ষায় ইংরেজি বিষয়ে অনার্স ও এম পাশ করে ২০১০ সালে প্রাথমিকে চাকরি পাওয়ার আগে পর্যন্ত গৃহ শিক্ষকতা এবং বিনা পারিশ্রমিকের শিক্ষা দান প্রতিষ্ঠানে শিক্ষাকতা করেন। বাড়ি থেকে ৩৫ কিলোমিটার দূরে দেগঙ্গা থানার কেয়াডাঙা এফপি স্কুলে চাকরি পাওয়ার পর সময়ের অভাবে গৃহ শিক্ষকতা ছাড়েন তিনি। তবে এলাকার পড়ুয়াদের অভিভাবকদের অনুরোধে ও তাঁর প্রধান শিক্ষকের পরামর্শে স্কুল থেকে ফিরে বিনামূল্যের শিক্ষাদান প্রতিষ্ঠানে পড়ানো ফের শুরু করেন। 


এসময় এলাকার মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের কলা বিভাগের ইতিহাস, ভূগোল ও দর্শন পড়াতে হত। নিজে পড়াশোনা করে নোট তৈরি করতেন রাতের পর রাত জেগে।পড়ুয়াদের পড়ানোর আগে নিজের পড়াশোনা সময় ইচ্ছে জাগে ফের এমএ করবেন। সেই মত তিনি ইংরেজি পড়ার অনুকরণে দূর শিক্ষায় ইতিহাস, বাংলা, ভূগোল, দর্শন ও ভাষাতত্ত্বে এমএ পাশ করেন লক্ষণ বাবু। একথা দত্তপুকুর থেকে দেগঙ্গা সার্কেলের কেয়াডাঙা এফপি স্কুল এলাকায় জানাজানি হতেই শিক্ষক থেকে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের মধ্যে জনপ্রিয় হয়ে সুনাম অর্জন করেন। 


বিগত কয়েক বছর ধরে রাজ্যের বিভিন্ন সার্কেলের স্কুল গুলোর মত কেয়াডাঙা স্কুলেও পড়ুয়াদের সংখ্যা কমতে থাকে। লক্ষণ বাবু স্কুল শেষে পড়ুয়াদের বাড়ি গিয়ে অভিভাবক ও পড়ুয়াদের বোঝাতে শুরু করেন। লক্ষণ স্যারের উদ্যোগ দেখে সহ শিক্ষকরাও তার সাথে যেতেন স্কুল ছুট পড়ুয়াদের বাড়ি। লক্ষণ বাবুর পড়াশোনার উদাহরণ দিতেন তারা। স্কুল ছুট পড়ুয়াদের অনেকেই বিদ্যালয়ে আসে। কেয়াডাঙা এফপি স্কুলের প্রধান শিক্ষক সমীর কুমার গাইন বলেন, "আমাদের স্কুলে স্কুল ছুটের সংখ্যা নেই বললেই চলে। আমরা শিক্ষকরা পড়ুয়া ও অভিভাবকদের বোঝানোর সময় লক্ষণ স্যারের পড়াশোনায় আগ্রহ ও ধৈর্য সম্পর্কে বলি। উদ্বুদ্ধ করি। উনি এই এলাকার সবার কাছে রোল মডেল। "


দেগঙ্গা সার্কেলের বড় বিশ্বেশ্বরপুর এফপি স্কুলের সুভাষ চন্দ্র দাস বলেন, "আমাদের সার্কেলে জনপ্রিয় শিক্ষক লক্ষন পাল ।আমরা পড়ুয়াদের উদ্বুদ্ধ করতে লক্ষণ স্যারের কথা বলি ক্লাসে ও অভিভাবকদের। উনি উত্তর ২৪ পরগনা জেলার প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষকদের মধ্যে এক মাত্র ব্যক্তি যিনি ছয়টি বিষয়ে এমএ পাশ করেছেন।"


শিক্ষক লক্ষণ পাল বলেন, "গরিব দুঃস্থ পরিবারের ছেলেমেয়েদের পড়ানোর জন্য নিজে পড়াশোনা করছিলাম তখন আমার হাই স্কুলের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক সুব্রত বসু আমাকে পরামর্শ দেন দূর শিক্ষায় ডিগ্রী অর্জন করতে। সেই থেকে আজ পর্যন্ত মোট ছয়টি বিষয়ে এমএ করেছি। পড়ুয়া থেকে অভিভাবকদের বোঝানোর চেষ্টা করি জীবন তৈরি করতে পড়াশোনা গুরুত্ব কতটা। শিক্ষক দিবস দিনে ও অন্যত্র সবাই আমাকে সম্মান জানায়। এই অর্জন আমার জীবনের সেরা প্রাপ্তি। "

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad