ভগবান কৃষ্ণকে কেন দেওয়া হয় ৫৬ ভোগ? জানুন গোবর্ধন পূজার অজানা কাহিনি ও পদগুলির তালিকা - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday, October 19, 2025

ভগবান কৃষ্ণকে কেন দেওয়া হয় ৫৬ ভোগ? জানুন গোবর্ধন পূজার অজানা কাহিনি ও পদগুলির তালিকা

 


প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ১৯ অক্টোবর ২০২৫, ০৯:০০:০১ : দীপাবলির পরের দিন সারা দেশজুড়ে পালিত হয় এক বিশেষ উৎসব গোবর্ধন পূজা। এই দিনটি ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে উৎসর্গ করা হয় এবং এটি অত্যন্ত পবিত্র বলে মনে করা হয়। পুরাণ মতে, এই পূজা সেই অলৌকিক ঘটনার স্মৃতি বহন করে, যখন শ্রীকৃষ্ণ ইন্দ্রদেবের অহংকার ভাঙার জন্য নিজের কনিষ্ঠ আঙুলে গোবর্ধন পর্বত তুলে ধরেছিলেন এবং তীব্র বর্ষা থেকে সমগ্র ব্রজবাসীদের রক্ষা করেছিলেন।

এই দিনে ভক্তরা ভগবানকে ৫৬ প্রকারের পদার্থ, অর্থাৎ ছাপ্পান ভোগ নিবেদন করেন। কিন্তু জানেন কি, কেন কৃষ্ণভক্তরা ঠিক ৫৬ প্রকার ভোগই অর্পণ করেন? এর পেছনে রয়েছে এক মনোমুগ্ধকর পৌরাণিক কাহিনি ও গভীর আধ্যাত্মিক তাৎপর্য।

ছাপ্পান ভোগের পেছনের পৌরাণিকa কাহিনি

বলা হয়, গোকুলে থাকার সময় ভগবান শ্রীকৃষ্ণ প্রতিদিন ৮ বার আহার করতেন। মা যশোদা প্রতিবারই স্নেহভরে তাঁর জন্য নতুন নতুন পদ রান্না করতেন। কিন্তু একদিন, যখন গোকুলবাসীরা ইন্দ্রদেবের পূজা বাদ দিয়ে গোবর্ধন পর্বতের পূজা শুরু করেন, তখন ক্রুদ্ধ ইন্দ্র প্রবল বর্ষণ শুরু করেন।

তখন কৃষ্ণ তাঁর ভক্তদের রক্ষার জন্য টানা ৭ দিন ও ৭ রাত ধরে গোবর্ধন পর্বত নিজের আঙুলে ধরে রাখেন। সেই সময় তিনি কিছুই খাননি।

যখন বৃষ্টি থেমে গেল এবং ইন্দ্রদেবের অহংকার ভেঙে গেল, তখন গোকুলবাসীরা ভাবলেন শ্রীকৃষ্ণ প্রতিদিন ৮ বার আহার করতেন, কিন্তু ৭ দিন কিছু খাননি। অর্থাৎ ৭ × ৮ = ৫৬ আহার বাদ পড়েছে। তাই তারা ৫৬ প্রকারের নানা পদ রান্না করে শ্রীকৃষ্ণকে কৃতজ্ঞতা স্বরূপ নিবেদন করলেন। তখন থেকেই শুরু হলো ছাপ্পান ভোগের ঐতিহ্য।

ছাপ্পান ভোগের আধ্যাত্মিক অর্থ

ছাপ্পান ভোগ অর্পণ মানে শুধুমাত্র খাবার নয়, এটি ভক্তির এক অনন্য প্রকাশ। প্রতিটি পদ ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা দিয়ে তৈরি হয়, যাতে তা ভগবানের জন্য প্রসাদ হয়ে ওঠে।

বিশ্বাস করা হয়, যখন কেউ নিঃস্বার্থ ভক্তি ও কৃতজ্ঞতার সঙ্গে ভগবানের জন্য আহার প্রস্তুত করে, তখন সেই আহার প্রসাদে পরিণত হয়—যা অমৃতের সমান পবিত্র।

ছাপ্পান ভোগ প্রতীক সমৃদ্ধি ও কৃতজ্ঞতার। এটি আমাদের শেখায় যে জীবনে যা কিছু পেয়েছি, তা ভগবানের আশীর্বাদেই সম্ভব।

ছাপ্পান ভোগে থাকে নানা রকম পদ

ছাপ্পান ভোগে থাকে— পুরি, তরকারি, ডাল, ভাত, ক্ষীর, হালুয়া, পেড়া, লাড্ডু, মিষ্টি মাখন, ফলমূল, চাটনি ও নানা দুধজাত মিষ্টান্ন।
এই সমস্ত পদ সুন্দর থালায় সাজিয়ে শ্রীকৃষ্ণকে অর্পণ করা হয়। বিশেষ করে মাখন ও মিষ্টি, যা শ্রীকৃষ্ণের অতি প্রিয়। এরপর অনুষ্ঠিত হয় আরতি ও প্রসাদ বিতরণ।

ভক্তির সত্য বার্তা

ছাপ্পান ভোগ শুধুমাত্র ঐশ্বর্যের প্রতীক নয়, এটি এক আন্তরিক ভালোবাসার উৎসব।
ভগবান ধন-সম্পদে নয়, ভক্তের হৃদয়ের পবিত্রতায় সন্তুষ্ট হন।
যখন আমরা কৃতজ্ঞচিত্তে যা পেয়েছি, তা ঈশ্বরকে ভালোবাসা দিয়ে ফিরিয়ে দিই—সেই মুহূর্তেই তা হয়ে ওঠে সত্যিকারের ভক্তি।

এইভাবেই গোবর্ধন পূজা আমাদের শেখায়—কৃতজ্ঞতাই শ্রেষ্ঠ পূজা।
ভগবানকে ছাপ্পান ভোগ নিবেদন করা আসলে ভক্তির, ভালোবাসার ও কৃতজ্ঞতার এক চিরন্তন প্রতীক, যা এই উৎসবকে করে তোলে সত্যিই দিব্য ও কালজয়ী।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad