কলকাতা, ০৭ অক্টোবর ২০২৫: বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন বিজেপির সাংসদ-বিধায়করা। এই হামলার কড়া প্রতিক্রিয়া দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী, এর পাল্টা আক্রমণ শানিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সমাজ মাধ্যমে লম্বা-চওড়া পোস্ট করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর অভিযোগ, প্রাকৃতিক বিপর্যয় নিয়ে প্রধানমন্ত্রী রাজনীতি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তাও উপযুক্ত অনুসন্ধানের অপেক্ষা না করেই।
মমতা লিখেছেন, 'প্রধানমন্ত্রীর এ ধরণের রাজনীতির চেষ্টা দুর্ভাগ্যজনক ও গভীর উদ্বেগের। তাও যখন উত্তরবঙ্গের মানুষ ভয়াবহ বন্যা ও ধসের সঙ্গে যুঝছেন।' তিনি লেখেন, 'যখন সমগ্র স্থানীয় প্রশাসন ও পুলিশ ত্রাণ ও উদ্ধারের কাজে ব্যস্ত হয়ে আছে, তখন বিজেপি নেতারা ক্ষতিগ্রস্ত এলাকায় গিয়েছিলেন বিপুল সংখ্যক গাড়ির কনভয় নিয়ে, কেন্দ্রীয় বাহিনীর নিরাপত্তা নিয়ে এবং স্থানীয় পুলিশ ও প্রশাসনকে কোনও খবর না দিয়ে। রাজ্য প্রশাসন, স্থানীয় পুলিশ বা তৃণমূল কংগ্রেসকে কীভাবে এই ঘটনার জন্য দায়ী করা যাবে?'
তিনি লেখেন, প্রধানমন্ত্রী, তৃণমূল কংগ্রেস এবং পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ওপর দোষারোপ করেছেন কিছুমাত্র প্রমাণ ছাড়া, আইনানুগ কোনও তদন্ত ছাড়া এবং কোনও প্রশাসনিক রিপোর্ট ছাড়া। এটা শুধু রাজনৈতিক নিম্নতা স্পর্শ করল না, যে সাংবিধানিক নৈতিকতা তুলে ধরতে প্রধানমন্ত্রী শপথ নিয়েছেন, সেই নৈতিকতারও লঙ্ঘন হল।
সংশ্লিষ্ট ঘটনা ঘটেছিল একটি কেন্দ্রে, যেখানে মানুষ নিজেরাই বিজেপির একজন বিধায়ককে নির্বাচন করেছেন। তথাপি এই ঘটনায় তৃণমূল কংগ্রেসের তথাকথিত ‘শক্তিমত্তা' দেখায় প্রধানমন্ত্রী দ্বিচারিতা অনুভব করলেন না। এই ধরণের অসার এবং অতি- সরলীকৃত সাধারণীকরণ শুধু অপরিণতই নয়, তা দেশের সর্বোচ্চ পদের সঙ্গে মানানসইও নয়।'
'যে প্রধানমন্ত্রী মণিপুরে জাতি-হিংসা শুরু হবার ৯৬৪ দিন পরে সেখানে যাওয়ার অবকাশ পেয়েছিলেন, তাঁর কাছ থেকে বাংলার জন্য এই সহসা উদ্বেগ কোনও সমবেদনার পরিচয় নয় বরঞ্চ, এটাকে সুবিধাবাদী রাজনৈতিক নাট্যের মতো মনে হচ্ছে। হ্যাঁ, আমরা সবাই দ্বিধাহীনভাবে হিংসার নিন্দা করি। কিন্তু এটা রাজনৈতিক বুক-চাপড়ানোর সময় নয়। এটা সহায়তা ও নিরাময়ের সময়।'
মমতার বার্তা, "প্রধানমন্ত্রীকে বলি: নির্বাচিত রাজ্য সরকারের কথা শুনুন, শুধু নিজের দলের লোকের কথা শুনবেন না। আপনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী, কেবল বিজেপির নন। আপনার দায়িত্ব দেশ-নির্মাণ, কাহিনি নির্মাণ নয়। সঙ্কটের এই মুহূর্তে,আমরা যেন বিভাজন না বাড়াই। আমাদের একত্রিত হতে হবে, দলীয় লাইনের ঊর্ধ্বে মানুষের সেবায় – যে মানুষ এখন আমাদের সেবা সবচেয়ে বেশি চাইছে। রাজনীতি আরেকদিন হোক।'
উল্লেখ্য, শনিবার রাত থেকে প্রবল বৃষ্টি, ধসে বিপর্যস্ত উত্তরবঙ্গ। পাহাড় থেকে সমতল, ডুয়ার্সের একাধিক এলাকা বানভাসি। এই আবহে সোমবার বন্যা দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন বিজেপির সাংসদ-বিধায়করা। এদিন নাগরাকাটার বামনডাঙ্গায় ঢোকার মুখে হঠাৎ একদল উত্তেজিত লোক তাঁদের ঘিরে ধরে। অভিযোগ, ওই সময় ইট-পাথরের বৃষ্টি শুরু হয়। মুহূর্তের মধ্যেই ভাঙচুর চালানো হয় শংকর ঘোষের গাড়িতে। গাড়ির জানলার কাঁচ চূর্ণবিচূর্ণ হয়ে যায়। আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে চারপাশে। গাড়িতে পাথর, লাঠি, জুতো পর্যন্ত ছোঁড়া হয়। বিক্ষোভের মুখে এলাকা ছাড়তে বাধ্য হন বিজেপির সাংসদ-বিধায়করা। এলাকার কিছু মানুষের রোষে রীতিমতো নাকাল হতে হয় তাঁদের। প্রচণ্ড মারে মাথা, নাক-মুখ ফেটে যায় সাংসদ খগেন মূর্মূর। মুখ ভিজে যায় রক্তে। ধাক্কা মারা হয় বিধায়ক শঙ্কর ঘোষকে।
এই ঘটনায় কড়া প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। সোমবার রাতে সমাজমাধ্যমে তিনি লেখেন, "যেভাবে আমাদের দলের সহকর্মীরা—যাদের মধ্যে একজন বর্তমান সাংসদ ও বিধায়কও রয়েছেন—পশ্চিমবঙ্গে বন্যা ও ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবা করতে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছেন, তা অত্যন্ত নিন্দনীয়। এটি তৃণমূল কংগ্রেসের অসংবেদনশীলতা এবং রাজ্যের আইন-শৃঙ্খলার করুণ রূপের স্পষ্ট প্রতিফলন।"
তিনি আরও লেখেন, "আমার একান্ত কামনা পশ্চিমবঙ্গ সরকার ও তৃণমূল কংগ্রেস এই কঠিন পরিস্থিতিতে হিংসায় লিপ্ত না হয়ে মানুষের সাহায্যে আরও মনোযোগী হোক। আমি বিজেপি কার্যকর্তাদের আহ্বান জানাই, তাঁরা যেন জনগণের পাশে থেকে চলতি উদ্ধার কাজে সহায়তা করে যান।"
প্রধানমন্ত্রীর এই পোস্টের কিছু সময় পরেই পাল্টা দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
No comments:
Post a Comment