ফিল্ম অভিনেতা ধর্মেন্দ্র যেমন বড় মাপের অভিনেতা ছিলেন, মানুষের হিসেবে তিনি তার থেকেও আরও বড় ছিলেন।
তার এই দুর্দান্ত ব্যক্তিত্বই পর্দায় মানুষের হৃদয় স্পর্শ করত। ধর্মেন্দ্রর মতো ব্যক্তিত্ব আরও অনেক অভিনেতার ছিল—দারা সিং, বিনোদ খন্না, ফিরোজ খান, শত্রুঘ্ন সিনহার মতো তারকারাও সুঠাম দেহ ও বলিষ্ঠ চেহারার অধিকারী ছিলেন, কিন্তু পর্দায় ধর্মেন্দ্রর মতো প্রভাব কেউই সৃষ্টি করতে পারেননি। এর বড় কারণ ছিল ধর্মেন্দ্রর প্রাণবন্ত, উদার ও জিন্দাদিল স্বভাব। শেষ বয়স পর্যন্ত এই জিন্দাদিলি তার মধ্যে অটুট ছিল। বয়সের কারণে বড় পর্দায় কম দেখা গেলেও সোশ্যাল মিডিয়ায় তার প্রতি মানুষের ভালোবাসা ছিল বিপুল।
দুই প্রজন্মের সুপারস্টার
অর্ধশতাব্দীরও বেশি দীর্ঘ ক্যারিয়ারে ধর্মেন্দ্র অন্তত দুই প্রজন্মের প্রিয় তারকা ছিলেন। তার উচ্ছ্বসিত স্বভাব ও প্রাণবন্ত ব্যক্তিত্বের কারণে রোমান্টিক চরিত্রেও তিনি সমানভাবে মানিয়ে যেতেন। যেখানে ভারী-চেহারার অন্য অভিনেতাদের ক্ষেত্রে এই রোমান্টিক ইমেজটি অনেক সময়ই অপ্রাকৃতিক লাগত। বিনোদ খন্না ও ফিরোজ খানের সঙ্গে রোমান্টিক চরিত্র মানালেও, কমেডির ক্ষেত্রে তারা ধর্মেন্দ্রর মতো গ্রহণযোগ্যতা পেতেন না।
দুষ্টুমি-প্রিয় কিন্তু সৎ মানুষ
ধর্মেন্দ্র নিজেও বলেছেন—তিনি 'সৎ দুষ্টুমি-প্রিয়' মানুষ ছিলেন। হাসি-মজার মধ্যেই তার স্বভাবগত খুনসুটি লুকিয়ে ছিল। স্ত্রী প্রকাশ কৌর থাকা অবস্থায় তার পছন্দের নায়িকা ছিলেন মীনা কুমারী। মীনা কুমারীর সঙ্গে তার ঘনিষ্ঠতা নিয়ে সে সময় নানা কথা শোনা যেত।
একবার কামাল আমরোহার প্রসঙ্গে প্রশ্ন করা হলে ধর্মেন্দ্র সহজভাবেই বলেছিলেন—“মানুষ তো জেলাস হয়।”
মীনা কুমারীর স্বামী কামাল আমরোহি নাকি এই ঘনিষ্ঠতার কারণে এক ছবিতে ধর্মেন্দ্রকে নেননি।
ধর্মেন্দ্রর ব্যক্তিত্বের আরেক দিক—প্রকাশ কৌরকে না ছেড়ে তিনি পরে হেমা মালিনীকে বিয়ে করেন, তবুও প্রকাশ কৌর তার প্রতি কোনো অভিযোগ রাখেননি। দু’জনকেই তিনি দায়িত্ব নিয়ে সামলেছিলেন।
পাঞ্জাবের গ্রাম থেকে পর্দার জেন্টলম্যান, আবার ভয়ঙ্কর ডাকাত—প্রতিটি চরিত্রেই সমান দক্ষ
পাঞ্জাবের গ্রামীণ রুক্ষ পরিবেশ থেকে উঠে আসা যৌবনের ধর্মেন্দ্র পর্দায় স্মার্ট জেন্টলম্যানের ভূমিকায় যেমন দুর্দান্ত ছিলেন, তেমনই ডাকাত চরিত্রেও তিনি দর্শকদের অভূতপূর্ব অভিজ্ঞতা দিয়েছিলেন।
ডাকাত চরিত্রে ঘোড়ায় চেপে অস্ত্র হাতে ধর্মেন্দ্রকে দেখে দর্শকদের সত্যিই মনে হয়েছিল—পুরনো দিনের ডাকাতেরা এমনই হতেন।
বাড়ি থেকে পালিয়ে মুম্বইয়ে আসা এই পাঞ্জাবি জাট বহু সংগ্রামের পর ১৯৬০ সালে প্রথম সুযোগ পান “দিল ভি তেরা হাম ভি তেরে” ছবিতে। এরপর একের পর এক চলচ্চিত্র— অনায়াস, বন্দিনী, পূজা কে ফুল, হকিকত, অনুভব, দিল নে ফির ইয়াদ কিয়া —তার ক্যারিয়ারকে দৃঢ় করে তোলে।
১৯৬৬ সালে “ফুল অউর পাথর” তাকে আলাদা পরিচিতি দেয়। রোমান্টিক ইমেজ থেকে বেরিয়ে এখানে তিনি অ্যাকশন হিরো বা বলিউডের “হি-ম্যান” হিসেবে প্রতিষ্ঠা পান। নায়িকা ছিলেন মীনা কুমারী।
‘সত্যকাম’—ধর্মেন্দ্রর অন্যতম সেরা অভিনয়
পরবর্তীতে “সত্যকাম” চলচ্চিত্রে তার অভিনয় দর্শকদের গভীরভাবে ছুঁয়ে যায়। ছবিটি খুব বড় ব্যবসা না করলেও, এটি হিন্দি সিনেমার ইতিহাসে এক মাইলফলক।
আদর্শবাদী এক যুবকের আভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব, সমাজের বাস্তবতা এবং সময়ের টানাপোড়েন—এসব কিছু অত্যন্ত সূক্ষ্মভাবে ফুটে উঠেছিল ছবিতে। তার চরিত্রের যন্ত্রণা ও আত্মসমালোচনা আজও দর্শকদের মনে দাগ কেটে আছে।
ধর্মেন্দ্র যখন “শোলে” করলেন—তখন তার ক্যারিয়ার আরও উঁচুতে উঠল। নিজস্ব স্বতঃস্ফূর্ততা তার চরিত্র 'বীরু'কে আরও জীবন্ত করে তুলেছিল।
বহুমুখী অভিনয়ের সম্রাট
ধর্মেন্দ্র যত বৈচিত্র্যময় চরিত্র করেছেন, তার সমসাময়িক খুব কম অভিনেতাই তা করতে পেরেছেন। আরও বড় কথা—দর্শকরা তাকে প্রতিটি চরিত্রে হাততালি দিয়ে গ্রহণ করেছেন।

No comments:
Post a Comment