শীতকালে আগুনের সামনে হাত গরম করা বা হিটার ব্যবহার করা একটি সাধারণ অভ্যাস। কিন্তু এই অভ্যাস কি স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর হতে পারে? আসলে, বেশিরভাগ মানুষই শরীর উষ্ণ রাখতে অথবা আগুনের সামনে হাত গরম করে আরাম পেতে হিটার ব্যবহার করেন। ঠান্ডা আবহাওয়ায়, হাত-পা অসাড় হয়ে যায়, বাতাস কম আর্দ্র হয়ে যায় এবং শরীর দ্রুত ঠান্ডা লাগে। এই ধরনের পরিস্থিতিতে, সামান্য উষ্ণতা তাৎক্ষণিকভাবে আরাম দেয় এবং ক্লান্তি কমায়।
যদিও বাড়িতে, গ্রামে এবং খোলা জায়গায় বৈদ্যুতিক হিটার, গ্যাস হিটার বা ব্লোয়ার ব্যবহার করা হয়, তবুও লোকেরা কাঠের আগুন জ্বালিয়ে তার চারপাশে বসে থাকে। এই পদ্ধতিগুলি তাৎক্ষণিক উষ্ণতা প্রদান করে, তবে এর ব্যবহার ক্ষতিকারকও হতে পারে। অতএব, প্রতিকূল স্বাস্থ্যগত প্রভাব এড়াতে কিছু সতর্কতা অবলম্বন করা গুরুত্বপূর্ণ।
হিটার বা আগুনের সামনে হাত-পা গরম করার ক্ষতিকর প্রভাব?
আরএমএল হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ডাঃ সুভাষ গিরি ব্যাখ্যা করেন যে হিটার থেকে নির্গত গরম বাতাস ঘরের আর্দ্রতা দ্রুত হ্রাস করে, যার ফলে ত্বক এবং চোখ শুষ্ক হয়ে যায়। হিটারের ক্রমাগত ব্যবহার নাকের ঝিল্লি শুকিয়ে যায়, যার ফলে মাথাব্যথা, নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া এবং শ্বাস নিতে অসুবিধা হয়। কিছু হিটার হালকা গ্যাস বা ধোঁয়াও নির্গত করে, যা সংবেদনশীল ব্যক্তিদের মধ্যে অ্যালার্জি বা কাশি বাড়িয়ে তুলতে পারে।
অন্যদিকে, দীর্ঘ সময় ধরে আগুনের সামনে বসে থাকলে ত্বক অতিরিক্ত গরম হতে পারে, যার ফলে এটি শুষ্ক এবং লাল হয়ে যায়। পোড়া কাঠ বা কয়লা থেকে ধোঁয়া শ্বাস নেওয়ার ফলে কাশি, জ্বালা এবং চোখ দিয়ে জল পড়তে পারে। আগুনের তীব্র তাপ শরীরের তাপমাত্রায় হঠাৎ পরিবর্তন ঘটায়, যা সর্দি এবং কাশি বাড়িয়ে তুলতে পারে। অতএব, হিটার এবং আগুন উভয়েরই অতিরিক্ত ব্যবহার ক্ষতিকারক হতে পারে।
কী সতর্কতা অবলম্বন করা উচিত?
হিটার ব্যবহার করার সময়, ঘরে কিছু বায়ুচলাচল বজায় রাখা গুরুত্বপূর্ণ যাতে বাতাস সম্পূর্ণ শুষ্ক না হয়ে যায়। হিটারটি শরীরের খুব কাছে রাখা বা ঘন্টার পর ঘন্টা ধরে টানা চালানো এড়িয়ে চলুন। ঘুমানোর আগে এটি বন্ধ করে দেওয়াই ভালো। ত্বকের শুষ্কতা রোধ করতে প্রচুর পানি পান করুন এবং ময়েশ্চারাইজার ব্যবহার করুন।
যদি আপনি আগুনের কাছে বসে থাকেন, তাহলে খুব কাছে যাওয়া এড়িয়ে চলুন এবং ধোঁয়া থেকে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখুন, কারণ ধোঁয়া চোখ এবং ফুসফুস উভয়ের জন্যই ক্ষতিকর। হঠাৎ আগুন থেকে বেরিয়ে ঠান্ডা বাতাসে প্রবেশ করা এড়িয়ে চলুন; এর ফলে তাপমাত্রা দ্রুত পরিবর্তন হয় এবং অসুস্থতার ঝুঁকি বেড়ে যায়। আগুন বা হিটারের উচ্চ তাপমাত্রা থেকে শিশু এবং বয়স্কদের সর্বদা রক্ষা করুন।
শরীর উষ্ণ রাখার জন্য কী খাবেন?
শীতকালে, আদা, গুড়, মেথি, তিল বীজ, চিনাবাদাম, শুকনো ফল, স্যুপ এবং সবুজ শাকসবজি শরীরকে ভেতর থেকে উষ্ণ রাখে। গরম দুধ, হলুদ দুধ এবং মৌসুমি স্যুপও ঠান্ডা থেকে রক্ষা করতে সাহায্য করে।

No comments:
Post a Comment