রাশিয়ার Su-57-এর গোপন প্রস্তাব ভারতীয় বিমান বাহিনীর জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে এবং এশিয়ার শক্তি ভারসাম্যকে বদলে দিতে পারে - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday, November 20, 2025

রাশিয়ার Su-57-এর গোপন প্রস্তাব ভারতীয় বিমান বাহিনীর জন্য একটি যুগান্তকারী পরিবর্তন আনতে পারে এবং এশিয়ার শক্তি ভারসাম্যকে বদলে দিতে পারে



ভারত-রাশিয়া প্রতিরক্ষা সম্পর্ক আবারও বিশ্বব্যাপী আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে। এবার কারণ হলো ভারতের সাথে রাশিয়ার আসন্ন গোপন চুক্তি, যা চীন থেকে শুরু করে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত উদ্বেগ বাড়িয়ে তুলবে। রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিন ভারতকে রাশিয়ার রাষ্ট্রপতির সবচেয়ে উচ্চ প্রযুক্তির, পঞ্চম প্রজন্মের স্টিলথ প্রযুক্তিতে সজ্জিত Su-57 যুদ্ধবিমান দেওয়ার পরিকল্পনা করছেন, সীমাহীন প্রযুক্তি হস্তান্তরের প্রস্তাবের সাথে। এই প্রস্তাবটি এমন এক সময়ে এসেছে যখন রাশিয়ার রাষ্ট্রপতি আগামী মাসে ভারত সফরে আসার কথা রয়েছে। লক্ষণগুলি স্পষ্ট যে ডিসেম্বরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পুতিনের মধ্যে বৈঠকের সময় এই চুক্তি চূড়ান্ত হবে। রাশিয়ার এই প্রস্তাবকে ভারতের জন্য একটি গেম-চেঞ্জার হিসাবে বিবেচনা করা হচ্ছে, কারণ Su-57 প্রযুক্তি এমন একটি ক্ষেত্র যেখানে বিশ্বের মাত্র তিনটি দেশের অ্যাক্সেস রয়েছে: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া এবং চীন। এই তিনটি দেশের মধ্যে, শুধুমাত্র রাশিয়া ভারতকে এই স্তরের প্রযুক্তি অফার করছে।

Su-57 কী এবং এটি এত বিশেষ কী?

সুখোই Su-57 হল রাশিয়ার সবচেয়ে উন্নত স্টিলথ ফাইটার জেট। এটি পঞ্চম প্রজন্মের ফাইটার হিসেবে শ্রেণীবদ্ধ, যা মার্কিন F-35-এর মতোই। দুবাই এয়ারশো 2025-এ, Su-57-এর রপ্তানি মডেল Su-57E, বিশ্বের কাছে তার ক্ষমতা প্রদর্শন করেছিল।



এর দুটি শক্তিশালী ইঞ্জিন রয়েছে যা ফাইটার জেটকে ব্যতিক্রমী চালচলন প্রদান করে। এটি অত্যন্ত কম গতিতেও বিপজ্জনক বাঁক নিতে সক্ষম, যা প্রচলিত জেটগুলির জন্য প্রায় অসম্ভব। ম্যাক 2-এর বেশি গতি, সুপার ক্রুজ ক্ষমতা, উন্নত এভিওনিক্স এবং রাডার এভিয়েশন প্রযুক্তি এটিকে একটি মারাত্মক স্টিলথ প্ল্যাটফর্ম করে তোলে।

দুবাই এয়ারশোতে প্রথমবারের মতো, Su-57E তার অভ্যন্তরীণ অস্ত্র উপসাগর খুলেছে, যেখানে উন্নত ক্ষেপণাস্ত্রের মডেলগুলি রাখা হয়েছিল। নতুন 2D থ্রাস্ট ভেক্টরিং প্রযুক্তি সহ ফ্ল্যাট নোজেল জেটের রাডার এবং ইনফ্রারেড স্বাক্ষরকে আরও কমিয়ে দেয়।

সুখোই ডিজাইন ব্যুরোর প্রধান পাইলট সের্গেই বোগদান দাবি করেন যে, যেকোনো পরিস্থিতিতেই Su-57 "নিয়ন্ত্রণে" থাকে - এটিই এর সবচেয়ে বড় শক্তি। অন্যান্য যুদ্ধবিমানের ক্ষেত্রে পাইলটকে বিমানের পরামিতিগুলি ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করতে হয়, তবে Su-57 এর ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে কম।

ভারতের প্রতি রাশিয়ার প্রস্তাব: শুধু জেট নয়, সম্পূর্ণ প্রযুক্তি

দুবাই এয়ারশো চলাকালীন, রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা রোস্টেকের প্রধান সের্গেই চেমেজভ স্পষ্টভাবে বলেছিলেন যে ভারতের প্রয়োজন হলে রাশিয়া Su-57 এর সীমাহীন প্রযুক্তি হস্তান্তর করতে প্রস্তুত। এটি কেবল বিমান বিক্রির বিষয় নয়, বরং ভারতকে তার স্টিলথ প্রযুক্তি ইকোসিস্টেম বিকাশে সহায়তা করার প্রস্তাব।

আমরা ইঞ্জিন প্রযুক্তি, স্টিলথ উপকরণ এবং কম স্বাক্ষরযুক্ত নকশা, AESA রাডার, অপটিক্যাল সিস্টেম, ইলেকট্রনিক ওয়ারফেয়ার স্যুট, এয়ার-টু-এয়ার এবং এয়ার-টু-গ্রাউন্ড অস্ত্র এবং AI-ভিত্তিক এভিওনিক্স সরবরাহ করতে প্রস্তুত। আমরা ভারতের যেকোনো প্রযুক্তির চাহিদা পূরণ করব।

সূত্রগুলি ইঙ্গিত দেয় যে পরিকল্পনার প্রথম ধাপ রাশিয়ান-নির্মিত Su-57 সরবরাহের মাধ্যমে শুরু হবে। এর পরে, উৎপাদন ধীরে ধীরে ভারতে স্থানান্তরিত হবে। রাশিয়া ভারতীয় অস্ত্রের লাইসেন্স উৎপাদন এবং সংহতকরণের সুবিধার্থেও প্রস্তুত।

এই প্রস্তাব ভারতের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?

ভারতীয় বিমান বাহিনীর সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হল স্কোয়াড্রন শক্তির অভাব। উইং কমান্ডাররা বারবার বলেছেন যে, লক্ষ্যে পৌঁছানোর জন্য, ভারতীয় বিমান বাহিনীর আগামী ২০ বছর ধরে প্রতি বছর ৩৫-৪০টি নতুন যুদ্ধবিমান প্রয়োজন। বর্তমানে, ভারতীয় বিমান বাহিনীর ৪২টি স্কোয়াড্রনের ধারণক্ষমতার তুলনায় মাত্র ২৯টি স্কোয়াড্রন রয়েছে।

ভারত তার প্রথম দেশীয় স্টিলথ ফাইটার, AMCA তৈরি করছে, তবে এটি ২০৩০ সালের পরেই পরিষেবায় প্রবেশ করবে। অতএব, আপাতত ভারতের একটি উচ্চ-প্রযুক্তিসম্পন্ন যুদ্ধবিমান প্রয়োজন।

Su-57 প্রযুক্তি অর্জনের ফলে AMCA প্রকল্পটি ত্বরান্বিত হবে। ভারত স্টিলথ ফাইটারগুলির জন্য বোধগম্যতা এবং উৎপাদন ক্ষমতা অর্জন করবে। এটি IAF-এর স্কোয়াড্রন শূন্যতা পূরণ করতে সাহায্য করবে। ভারত দীর্ঘমেয়াদী আমদানি নির্ভরতা থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম হবে। এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হল, ভারত প্রযুক্তিগতভাবে পঞ্চম প্রজন্মের ক্লাবে প্রবেশ করতে পারে।


আমেরিকা অস্বস্তিতে, রাশিয়া লাভবান হচ্ছে

আমেরিকা চায় ভারত F-35 কিনুক, কিন্তু আমেরিকা তার সবচেয়ে উচ্চ প্রযুক্তির সিস্টেমের প্রযুক্তি সহজে কোনও দেশের সাথে ভাগ করে নিতে পারে না, এমনকি ভারতও নয়। এখানেই রাশিয়ার প্রাধান্য বাড়ছে বলে মনে হচ্ছে। রাশিয়ার বার্তা স্পষ্ট: "ভারত যা চাইবে, আমরা তা দিতে প্রস্তুত।" এই প্রস্তাব কেবল একটি অস্ত্র চুক্তি নয়, বরং কৌশলগত সম্পর্ক জোরদার করার একটি সংকেত। এর মাধ্যমে রাশিয়া এশিয়ায় তার প্রভাব বাড়াতেও চাইছে।

এশিয়ার শক্তি ভারসাম্য কি বদলে যাবে?

যদি এই চুক্তিটি সম্পন্ন হয়, তাহলে এটি এশিয়ায় ভারতের বিমান শক্তিকে সম্পূর্ণরূপে রূপান্তরিত করতে পারে। চীন ইতিমধ্যেই J-20 এর সাথে স্টিলথ ক্যাটাগরিতে রয়েছে। Su-57 এবং AMCA এর সাথে স্টিলথ ক্যাটাগরিতে ভারতের প্রবেশ দক্ষিণ এশিয়া এবং ইন্দো-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে শক্তির গতিশীলতাকে বদলে দেবে। এটি কেবল একটি প্রতিরক্ষা ক্রয় নয়, বরং একটি কৌশলগত আপগ্রেড যা ভারতকে আগামী 30 বছরের জন্য সামরিক ভারসাম্যে একটি নির্ধারক ভূমিকা দিতে পারে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad