রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে প্রায় তিন বছর ধরে চলা যুদ্ধ শেষ করতে যুক্তরাষ্ট্র যে নতুন শান্তি-প্রস্তাব তৈরি করেছে, তা আন্তর্জাতিক মহলে বড় আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। আমেরিকা, ইউক্রেন এবং ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশে এ প্রস্তাব নিয়ে মতপার্থক্য আরও গভীর হচ্ছে। শনিবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প স্পষ্ট করে জানিয়েছেন, এটি তার 'ফাইনাল অফার' নয়, তবে এর সময়সীমা ২৭ নভেম্বরই থাকবে। তিনি আরও বলেন, যদি ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি এ প্রস্তাবে সম্মতি না দেন, তবে ইউক্রেনকে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে প্রস্তুত থাকতে হবে। তবুও তিনি ইঙ্গিত দিয়েছেন যে, যে কোনো পরিস্থিতিতে এই সংঘাতের সমাধান খুঁজতে যুক্তরাষ্ট্র প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
প্রস্তাবটি কেন বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে?
যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরেও এই প্রস্তাব নিয়ে তীব্র বিতর্ক তৈরি হয়েছে। রিপাবলিকান সিনেটর মাইক রাউন্ডস দাবি করেছেন, পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও কয়েকজন সিনেটরকে জানিয়েছেন যে ২৮ দফার এই খসড়া নাকি রুশ-বান্ধব কোনো নথির মতো দেখাচ্ছে। এ অভিযোগ ইঙ্গিত দেয় যে প্রস্তাবে রাশিয়ার স্বার্থই বেশি প্রতিফলিত হয়েছে। তবে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতর এখনো এ বিষয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক মন্তব্য করেনি, ফলে পরিস্থিতি আরও অস্পষ্ট হয়ে আছে।
লিক হওয়া ড্রাফট থেকে কী জানা গেছে?
ফাঁস হওয়া খসড়া অনুযায়ী, ইউক্রেনকে ডোনেৎস্কের কিছু এলাকা থেকে সেনা প্রত্যাহারের কথা বলা হয়েছে। এছাড়া খসড়াটি ডোনেৎস্ক, লুহানস্ক ও ক্রিমিয়ার ওপর রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণকে পরোক্ষভাবে স্বীকার করার মতো মনে হচ্ছে। খেরসন ও জাপোরিঝঝিয়ার বর্তমান যুদ্ধরেখা স্থির রাখার পরামর্শও দেওয়া হয়েছে। সবচেয়ে বিতর্কিত প্রস্তাবগুলোর একটি হলো—ইউক্রেনের সেনাবাহিনীর সর্বোচ্চ সদস্যসংখ্যা ৬ লাখে সীমাবদ্ধ রাখার কথা। ইউরোপীয় দেশগুলোর যুক্তি, এই সীমা ভবিষ্যতে রাশিয়ার সম্ভাব্য আক্রমণকে সহজ করে তুলতে পারে।
G20 দেশগুলোর অবস্থান
G20–এর সদস্য কানাডা, ফ্রান্স, জার্মানি, জাপান, যুক্তরাজ্যসহ অন্যান্য দেশ জানিয়েছে—মার্কিন খসড়াটি একটি ‘ভিত্তি’ হতে পারে, কিন্তু এতে বড় ধরনের সংশোধন প্রয়োজন। তাদের বক্তব্য, কোনো দেশের সীমান্ত জোর করে পরিবর্তন করা যায় না এবং যেকোনো সমঝোতায় ইউক্রেনের নিরাপত্তাকেই সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে।
জেলেনস্কির বড় বার্তা
এ পরিস্থিতির মধ্যেই ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি আবেগঘন বক্তব্যে বলেন, দেশ তার ইতিহাসের সবচেয়ে কঠিন সময়ের মুখোমুখি। তিনি হুঁশিয়ারি দেন যে ইউক্রেনকে শিগগিরই সম্মান রক্ষা করা বা কোনো গুরুত্বপূর্ণ মিত্র হারানোর মধ্যে কঠিন সিদ্ধান্ত নিতে হতে পারে। পাশাপাশি তিনি তাঁর চিফ অব স্টাফ আন্দ্রি ইয়রমাককে শান্তি-আলোচনা দলের প্রধান হিসেবে নিয়োগ করেন এবং জানান, ইউক্রেনের প্রতিনিধিদল দেশের মর্যাদা ও নিরাপত্তা রক্ষায় সম্পূর্ণ প্রস্তুত।
শান্তি-প্রস্তাব নিয়ে বৈঠকে বসছেন কয়েক দেশের নিরাপত্তা উপদেষ্টা
এই প্রস্তাবে সংশোধন আনার জন্য রবিবার জেনেভায় যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ফ্রান্স, জার্মানি ও ইউক্রেনের শীর্ষ নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের বৈঠক হবে। যুদ্ধ শেষ করার সম্ভাব্য পথ খুঁজতে এই বৈঠককে গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
এদিকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেছেন, মার্কিন প্রস্তাব আলোচনার ভিত্তি হতে পারে, কিন্তু রাশিয়া প্রয়োজনে সামরিক অভিযান চালিয়ে যেতে প্রস্তুত। একই সময়ে মার্কিন পররাষ্ট্র দফতরের ডেপুটি মুখপাত্র টমি পিগট জানিয়েছেন, এই পরিকল্পনা যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুত করা হলেও তাতে রাশিয়া এবং ইউক্রেন উভয়ের মতামত অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।

No comments:
Post a Comment