আজকের ব্যস্ত ও অনিশ্চিত জীবনে একটি মানসিক সমস্যা দ্রুত বাড়ছে—রোগে আক্রান্ত হওয়ার অযৌক্তিক ভয়, যাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানে হেলথ অ্যাংজাইটি বলা হয়। সামান্য মাথা ব্যথা, পেটের অস্বস্তি বা ক্লান্তিকেও অনেকে গুরুতর রোগের লক্ষণ মনে করেন। ফলে ভয়, দুশ্চিন্তা এবং স্ট্রেস আরও বাড়ে। ডাক্তারদের মতে, এই মানসিক চাপ শরীরের ইমিউনিটি কমিয়ে সত্যিই অসুস্থ হওয়ার ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, স্বাস্থ্য–ভীতি নিয়ন্ত্রণে রাখা সম্ভব—যদি কিছু নিয়ম মেনে চলা যায়। নিচে পড়ে নিন বিশেষজ্ঞদের বলা ৫টি সহজ সমাধান।
কেন হয় হেলথ অ্যাংজাইটি?
মনোবিদদের মতে, কয়েকটি কারণ সাধারণত এই ভয়ের জন্ম দেয়—
অতিরিক্ত গুগল সার্চ করে নিজেকে রোগী ভাবা
পরিবারের কারও গুরুতর অসুস্থতা দেখা
অতিরিক্ত স্ট্রেস, দুশ্চিন্তা বা অবসাদ
শারীরিক ক্ষুদ্র পরিবর্তনকে বড় রোগের লক্ষণ মনে করা
অতিরিক্ত সতর্ক ও সংবেদনশীল মানসিকতা
ডাক্তারদের দেওয়া ৫টি সহজ ও কার্যকর উপায়
১. শরীরের প্রতিটি পরিবর্তনকে বড় করে না দেখা
বিশেষজ্ঞদের মতে, সামান্য ব্যথা, ক্লান্তি বা অস্বস্তি হরমোন, ঘুমের অভাব বা স্ট্রেস থেকেও হতে পারে। সব কিছুকে রোগের লক্ষণ হিসেবে না দেখে ২৪–৪৮ ঘণ্টা পর্যবেক্ষণ করা জরুরি।
২. ‘গুগল সার্চ’ অভ্যাস কমান
স্বাস্থ্যভীতি বাড়ার অন্যতম কারণ হল অনলাইনে রোগ সম্পর্কে অতিরিক্ত অনুসন্ধান। বেশি সার্চ করলে ভুল তথ্য বা অতিরঞ্জিত তথ্য মস্তিষ্কে ভয় তৈরি করে।
৩. নিয়মিত চেকআপ করুন, কিন্তু অযথা পরীক্ষা নয়
ডাক্তারদের মতে, বছরে ১ বার রুটিন চেকআপ যথেষ্ট। কিন্তু বারবার টেস্ট করতে গেলে উদ্বেগ বাড়ে, কমে না।
৪. শ্বাস–প্রশ্বাস ও মেডিটেশন
দিনে ১০ মিনিট গভীর শ্বাস–প্রশ্বাস বা মেডিটেশন উদ্বেগ ৩০–৪০% পর্যন্ত কমাতে পারে। এতে শরীর স্বাভাবিকভাবে শান্ত হয় এবং চিন্তা নিয়ন্ত্রণে থাকে।
৫. একজন বিশেষজ্ঞের সঙ্গে কথা বলুন
হেলথ অ্যাংজাইটি বাড়লে মনোরোগ বিশেষজ্ঞ বা কাউন্সেলরের সঙ্গে কথা বলা দরকার। কগনিটিভ বিহেভিয়ারাল থেরাপি (CBT) এই সমস্যায় সবচেয়ে কার্যকর বলে মনে করা হয়।
বিশেষজ্ঞের মন্তব্য
একজন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ জানান,
“রোগের ভয় স্বাভাবিক, কিন্তু যখন এই ভয় দৈনন্দিন কাজ, ঘুম বা মানসিক শান্তি নষ্ট করতে শুরু করে—তখনই তা হেলথ অ্যাংজাইটি। সঠিক পরিচর্যা ও অভ্যাস বদলে এটি সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণে আনা যায়।”
রোগের ভয় সব সময় মাথায় ঘুরলে তা মানসিক ও শারীরিক দু’দিকেই ক্ষতি করে। সঠিক তথ্য, সঠিক চিকিৎসা ও মানসিক নিয়ন্ত্রণের মাধ্যমে ‘হেলথ অ্যাংজাইটি’ ধাপে ধাপে কমানো সম্ভব। প্রয়োজনে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে দ্বিধা করবেন না।

No comments:
Post a Comment