ভালো স্বাস্থ্যের জন্য মানুষকে প্রায়ই পুষ্টিগুণে ভরপুর সবজি খাবার পরামর্শ দেওয়া হয়। সবজিতে থাকে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, আয়রন, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, ফোলেট, ভিটামিন–এ, বি, সি ও কে সহ নানা পুষ্টি উপাদান এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, যা শরীরের দুর্বলতা, ক্লান্তি ও পুষ্টিহীনতা দূর করতে সাহায্য করে।
কিন্তু অনেকেই সবজি খেতে পছন্দ করেন না। সে ক্ষেত্রে সবজির জুস ডায়েটে অন্তর্ভুক্ত করা যেতে পারে। নিয়মিত সবজির জুস পান করলে শরীর নানা উপকার পায়।
চলুন জেনে নেওয়া যাক জয়পুরে অবস্থিত Angelcare–A Nutrition and Wellness Center–এর ডিরেক্টর, ডায়েটিশিয়ান ও নিউট্রিশনিস্ট অর্চনা জৈন–এর থেকে, প্রতিদিন সবজির জুস পান করলে কী কী উপকার হয়।
ডায়েটিশিয়ান ও নিউট্রিশনিস্ট অর্চনা জৈন–এর মতে, প্রতিদিন সবজির জুস পান করলে নানান স্বাস্থ্যসমস্যা থেকে উপশম মেলে এবং শরীরের পুষ্টির ঘাটতিও পূরণ হয়। তবে মনে রাখতে হবে—সবজির জুস সবসময় সীমিত পরিমাণেই খাওয়া উচিত।
ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে
সবজির জুসে প্রচুর ফাইবার থাকে। ফলে এটি রক্তে শর্করা ধীরে ছাড়তে সাহায্য করে, যার কারণে ব্লাড সুগার দ্রুত বাড়ে না এবং নিয়ন্ত্রণে থাকে। একই সঙ্গে ইনসুলিন সেনসিটিভিটিও উন্নত হয়, যা PCOS–এ ভুগছেন এমন মহিলাদের জন্যও উপকারী।
ত্বকের জন্য উপকার
সবজির জুসে থাকা ফাইবার, আয়রন ও ভিটামিন–সি শরীর ডিটক্স করতে সাহায্য করে। এতে ত্বকের প্রদাহ কমে, ত্বক স্বাভাবিকভাবে উজ্জ্বল হয় এবং দাগ–ছোপ ও ব্রণ কমাতে সহায়ক হয়। নিয়মিত পান করলে ত্বক আরও স্বাস্থ্যকর ও ন্যাচারাল গ্লো পায়।
সবজিতে প্রচুর পরিমাণে পলিফেনল নামক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও অ্যান্টি–ইনফ্লেমেটরি উপাদান থাকে। সবজির জুস পান করলে অন্ত্রে থাকা ‘গুড ব্যাকটেরিয়া’ বাড়ে, হজমশক্তি উন্নত হয় এবং কোষ্ঠকাঠিন্য, অ্যাসিডিটি, গ্যাস ও বেলুনাভাবের মতো সমস্যা কমাতে সাহায্য করে। পাশাপাশি, এটি ওজন কমাতেও সহায়ক হতে পারে।
শরীরকে ডিটক্স করে
সবজির জুসে প্রাকৃতিক ডাইইউরেটিক (মূত্রবর্ধক) গুণ থাকে। ফলে এটি ইউরিনের পরিমাণ বাড়ায়, যার মাধ্যমে শরীর থেকে টক্সিন বের হতে সাহায্য করে এবং রক্ত পরিষ্কার রাখতে সহায়তা করে। একই সঙ্গে লিভারকেও ডিটক্স করতে সাহায্য করে।
রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ায়
সবজির জুসে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ও বিভিন্ন ধরনের ভিটামিন থাকে। তাই এসব জুস পান করলে শরীর শক্তি পায়, প্রাকৃতিকভাবে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়ে এবং শরীরকে সংক্রমণ ও নানা ধরনের রোগ থেকে সুরক্ষা দিতে সাহায্য করে। এতে সার্বিক স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটে।
এর জন্য প্রথমে বিট, গাজর, কারিপাতা এবং ভিটামিন–সি এর জন্য আমলকি একসঙ্গে ভালোভাবে ব্লেন্ড করে নিন। এরপর মিশ্রণটি প্রায় ৩০ শতাংশ ছেঁকে নিয়ে পান করুন। এটি স্বাস্থ্যের অনেক সমস্যায় উপশম দিতে সাহায্য করে।
সতর্কতা
মনে রাখবেন, শুরুতে এই জুস সীমিত পরিমাণে এবং সর্বোচ্চ ১৫ দিন পর্যন্ত পান করুন। অনেক সময় পেটে অতিরিক্ত ফাইবারের প্রতি সংবেদনশীলতা দেখা দিতে পারে, যা অস্বস্তির কারণ হতে পারে।
প্রতিদিন সবজির জুস পান করলে ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণে রাখা, ত্বককে সুস্থ রাখা, হজমশক্তি বাড়ানো, শরীর ডিটক্স করা, চোখের স্বাস্থ্যের উন্নতি এবং রোগ প্রতিরোধক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে। তবে সবসময় সীমিত পরিমাণে পান করা জরুরি, কারণ এতে স্বাস্থ্য–সংক্রান্ত নানা সমস্যা কমাতে সাহায্য মিললেও অতিরিক্ত সেবন ক্ষতিকর হতে পারে।

No comments:
Post a Comment