লাইফস্টাইল ডেস্ক, ০১ ডিসেম্বর ২০২৫: আমরা প্রায়শই শুনি যে হাঁটা আমাদের জন্য উপকারী এবং শরীরকে সুস্থ রাখে। একজন বিখ্যাত হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বলেছেন যে, প্রতিদিন আধ ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা হাঁটা অনেক ওষুধের মতোই হৃদরোগের জন্য উপকারী। এই সহজ পদক্ষেপটি শরীরে অনেক ইতিবাচক পরিবর্তন আনে, মেজাজ উন্নত করে, চাপ কমায়, রক্তে শর্করার ভারসাম্য বজায় রাখে এবং মানসিক শান্তি বৃদ্ধি করে। বিশেষজ্ঞদের মতে, নিয়মিত হাঁটা হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় এবং হৃদস্পন্দনের ছন্দ সম্পর্কিত সমস্যাও কমাতে পারে।
আজকাল হৃদরোগ কত দ্রুত গতিতে বাড়ছে, তা এই ধারণা থেকে স্পষ্ট যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৫ জনের মধ্যে ১ জনের মৃত্যু হৃদরোগের কারণে হয়। হৃদরোগের সমস্যা অনেক কারণের কারণে বৃদ্ধি পায়, কিন্তু একটি বিষয় যা আমরা প্রায়শই উপেক্ষা করি তা হল শারীরিক কার্যকলাপ। ডাক্তাররা বলেন যে, আপনার হৃদরোগের জন্য সবচেয়ে ভালো জিনিস হল প্রেসক্রিপশনের ওষুধ খাওয়া নয় বরং নিয়মিত কার্যকলাপ।
হাঁটা কেন উপকারী?
একটি ইনস্টাগ্রাম ভিডিওতে, বিখ্যাত হৃদরোগ প্রতিস্থাপন বিশেষজ্ঞ ডঃ দিমিত্রি ইয়ারানোভ ব্যাখ্যা করেছেন যে, তিনি ওষুধের চেয়ে বেশি হাঁটার পরামর্শ দেন। তাঁর ভাষায়, "আমি ওষুধের চেয়েও বেশি হাঁটার পরামর্শ দিই। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৬০ মিনিটের হাঁটা আপনার চিন্তাভাবনা, হৃদয় এবং আপনার সমগ্র জীবনকে বদলে দিতে পারে। হাঁটার সৌন্দর্য এর সরলতার মধ্যে নয় বরং কয়েক মিনিটের মধ্যে শরীরে দ্রুত পরিবর্তনের মধ্যে নিহিত।" ডাক্তার ব্যাখ্যা করেছেন যে, তিনি অনেক রোগীকে ক্লান্তি থেকে উচ্ছ্বাসে এবং উদ্বেগ থেকে ভারসাম্যে রূপান্তরিত হতে দেখেছেন, কেবল কোনও নতুন ওষুধ ছাড়াই হাঁটার মাধ্যমে।
আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশনের একটি গবেষণা অনুসারে, প্রতিদিনের পদক্ষেপ বৃদ্ধি এবং মাঝারি তীব্রতার কার্যকলাপে অংশগ্রহণ মহিলাদের হৃদরোগের কারণে মৃত্যুর ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে হ্রাস করে। হার্ট জার্নালে প্রকাশিত আরেকটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, দ্রুত হাঁটা এবং অল্প সময়ের জন্য এই গতি বজায় রাখার ফলে অ্যাট্রিয়াল ফাইব্রিলেশন, দ্রুত হৃদস্পন্দন বা খুব ধীর হৃদস্পন্দনের মতো সমস্যাগুলির ঝুঁকি কমায়।
৩০-৬০ মিনিট হাঁটার ফলে আপনার শরীরে কী কী পরিবর্তন আসে?
ডঃ ইয়ারানোভ এটিকে "সবচেয়ে অবমূল্যায়িত থেরাপি" বলে অভিহিত করেছেন। তাঁর মতে, শরীরে মিনিটে মিনিটে পরিবর্তন আসে, যেমন:
১ মিনিটে-
রক্ত প্রবাহ বৃদ্ধি পায় এবং শরীর সক্রিয় হয়ে ওঠে।
৫ মিনিটে-
মেজাজ উন্নত হয়, উদ্বেগ কমে।
১০ মিনিটে-
শরীরের স্ট্রেস হরমোন, কর্টিসল, কমতে শুরু করে। মন হালকা বোধ করে।
১৫ মিনিটে-
রক্তে শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল হতে শুরু করে, বিশেষ করে যাদের চিনির মাত্রা ওঠানামা করছে তাদের জন্য।
৩০ মিনিটে-
শরীর চর্বি পোড়ানোর মোডে প্রবেশ করে। যারা ওজন কমাতে চাইছেন তাদের জন্য এটি খুবই উপকারী সময়।
৪৫ মিনিটে-
মানসিক ক্লান্তি, অতিরিক্ত চিন্তাভাবনা এবং বিভ্রান্তি কমতে শুরু করে। মন পরিষ্কার বোধ করে।
৬০ মিনিটে-
সুখের হরমোন ডোপামিন বৃদ্ধি পায়। হাঁটা শেষ হলে মন শান্ত এবং সুখী বোধ করে।
সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুসারে, বসার পরিবর্তে মাত্র ৩০ মিনিটের হালকা কার্যকলাপ, যেমন হাঁটার জন্য শক্তি এবং মেজাজ উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করে। এর প্রভাব পরের দিন পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
ব্যয়বহুল জিমের প্রয়োজন নেই
ডঃ ইয়ারানোভ বলেন, "আপনার হৃদয়কে সুস্থ রাখার জন্য ব্যয়বহুল জিম বা সাপ্লিমেন্টের প্রয়োজন নেই। শুধু আপনি, আপনার হৃদয় এবং প্রতিদিন কয়েকটি সহজ পদক্ষেপ।" তার বার্তা স্পষ্ট, ছোট শুরু করুন, কিন্তু ধারাবাহিক থাকুন। শরীর প্রতিটি পদক্ষেপ মনে রাখে এবং এর সুফল ভোগ করে।

No comments:
Post a Comment