কলকাতা, ১৩ ডিসেম্বর ২০২৫, ১২:৪০:০১ : লিওনেল মেসিকে এক ঝলক দেখার আশায় ভরা যুবভারতী স্টেডিয়াম শেষ পর্যন্ত রণক্ষেত্রের চেহারা নিল। হাজার হাজার টাকা দিয়ে টিকিট কাটা দর্শকরা মেসিকে ঠিকভাবে দেখতে না পেয়ে ক্ষোভে ফেটে পড়েন। গ্যালারি থেকে মাঠে ছোড়া হয় বোতল, ভাঙচুর করা হয় হোর্ডিংস, এমনকি চেয়ার ছুড়ে মারার ঘটনাও ঘটে।
ঘটনার দিন মেসি মাত্র ২৩ মিনিটের জন্য যুবভারতীতে উপস্থিত ছিলেন। এরপরই তিনি সল্টলেক স্টেডিয়াম ছেড়ে চলে যান। সেই সময়ে মেসিকে এমনভাবে নিরাপত্তার ঘেরাটোপে রাখা হয়েছিল যে গ্যালারিতে বসা দর্শকরা এক মুহূর্তের জন্যও তাদের প্রিয় তারকাকে পরিষ্কারভাবে দেখতে পাননি। অভিযোগ, সেই সময় অনেক সিকিউরিটি গার্ড নিজেরাই মেসির সঙ্গে সেলফি তুলতে ব্যস্ত ছিলেন।
ঠিক রাত ১১টা ৩০ মিনিটে মেসির গাড়ি যুবভারতীতে প্রবেশ করে। তাঁর সঙ্গে ছিলেন লুইস সুয়ারেজ এবং রদ্রিগো ডি পল। ফুটবলপ্রেমীদের উচ্ছ্বাস দেখে হাসিমুখেই গাড়ি থেকে নামেন মেসি। কিন্তু নামার পরই পরিস্থিতি জটিল হয়ে ওঠে। মন্ত্রী, আধিকারিক ও বিশিষ্ট অতিথিদের ভিড়ে কার্যত ঘিরে ফেলা হয় আর্জেন্টিনার তারকাকে। ছবি তোলার হুড়োহুড়িতে তাঁর চলাফেরা করাই দুষ্কর হয়ে পড়ে।
চারদিকে কড়া নিরাপত্তা থাকলেও প্রায় ২০ মিনিট ধরে গ্যালারি থেকে মেসিকে দেখা যায়নি। এদিকে গ্যালারিতে বাড়তে থাকে অসন্তোষ। গোটা স্টেডিয়াম জুড়ে উঠতে থাকে, ‘উই ওয়ান্ট মেসি’ স্লোগান। যাঁরা টিকিট কেটে মাঠে এসেছিলেন, তাঁরা বড় তিনটি স্ক্রিনের দিকেই তাকিয়ে ছিলেন। কিন্তু সেখানেও মেসিকে পরিষ্কারভাবে দেখা যাচ্ছিল না।
মোহনবাগান ও ডায়মন্ড হারবারের প্রাক্তন ফুটবলারদের নিয়ে পরিচয়পর্ব চলাকালীনও মেসির চারপাশে ভিড় কমেনি। পরিস্থিতি সামাল দিতে বারবার মাইক্রোফোনে অনুরোধ করেন ক্রীড়ামন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস ও প্রধান আয়োজক শতদ্রু দত্ত। তাতেও পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসেনি।
শেষ পর্যন্ত রাত ১১টা ৫২ মিনিটে মেসিকে মাঠ থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হয়। সেই সময় স্টেডিয়ামে উপস্থিত ছিলেন না মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, শাহরুখ খান বা সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়। মেসির চলে যাওয়ার খবর ছড়াতেই দর্শকদের ক্ষোভ চরমে পৌঁছয়।
দামি টিকিট কেটেও প্রিয় ফুটবলারকে দেখতে না পাওয়ার হতাশায় শুরু হয় ব্যাপক ভাঙচুর। গ্যালারির হোর্ডিংস ছিঁড়ে ফেলা হয়, চেয়ার ভেঙে মাঠে ছুড়ে মারা হয়। অভিযোগ, সেই সময় গ্যালারিতে পুলিশের উপস্থিতিও চোখে পড়েনি। একসময় শতাধিক দর্শক ফেন্সিং ভেঙে মাঠে ঢুকে পড়েন।
মেসিকে এক ঝলক দেখার স্বপ্ন নিয়ে ভরা যুবভারতী স্টেডিয়াম শেষ পর্যন্ত পরিণত হয় বিশৃঙ্খলা ও হতাশার প্রতীকে।

No comments:
Post a Comment