ন্যাশনাল ডেস্ক, ২৫ ডিসেম্বর ২০২৫: ভারতীয় সেনা সোশ্যাল মিডিয়ার ব্যবহার নিয়ে নিজেদের নীতিতে গুরুত্বপূর্ণ পরিবর্তন এনেছে। এখন, সেনার জওয়ান ও আধিকারিকরা ইনস্টাগ্রাম ব্যবহার শুধুমাত্র দেখার ও পর্যবেক্ষণের উদ্দেশ্যে করতে পারবেন। তাঁরা এখানে কোনও পোস্ট করতে পারবেন না, এমনকি লাইক বা মন্তব্যও করতে পারবেন না। লাইভ হিন্দুস্তান সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে, ডিজিটাল কার্যকলাপ সম্পর্কিত সেনার জন্য আগে থেকেই লাগু অন্যান্য সমস্ত নিয়ম একই থাকবে। সূত্র অনুযায়ী, এই নির্দেশ সেনার সমস্ত ইউনিট এবং বিভাগকে জারি করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল সৈনিকদের সোশ্যাল মিডিয়ায় উপস্থিত বিষয়বস্তু দেখার, সে সম্পর্কে অবগত থাকার এবং তথ্য সংগ্রহ করার জন্য সীমিত অনুমতি দেওয়া, যাতে তাঁরা জাল বা বিভ্রান্তিকর বিষয়বস্তু শনাক্ত করতে পারেন।
নতুন ব্যবস্থার অধীনে, সৈন্যরা যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় ভুয়া, বিভ্রান্তিকর বা সন্দেহজনক পোস্টগুলি দেখতে পান, তাহলে তাঁদের ঊর্ধ্বতনদের কাছে সেটা জানাতে পারবেন। এতে তথ্য যুদ্ধ এবং বিভ্রান্তিকর তথ্যের বিরুদ্ধে সেনাবাহিনীর অভ্যন্তরীণ নজরদারি জোরদার করতে সাহায্য মিলবে।
ভারতীয় সেনা সময়ে-সময়ে ফেসবুক, এক্স (পূর্বে ট্যুইটার) এবং ইনস্টাগ্রামের মতো সোশ্যাল মিডিয়া প্ল্যাটফর্মগুলির ব্যবহার সম্পর্কে নির্দেশিকা জারি করতে থাকে। পূর্বে, নিরাপত্তা উদ্বেগের কারণে এই প্ল্যাটফর্মগুলি কঠোরভাবে সীমাবদ্ধ ছিল।
এই কড়া নিয়মের পৃষ্টভূমিতে এমন অনেক বিষয় সামনে এসেছিল, যাতে বিদেশী সংস্থাগুলির বিছানো হানিট্র্যাপে ফেঁসে কিছু সৈন্যদের কাছ থেকে না জেনেই সংবেদনশীল তথ্য ফাঁস হয়ে গিয়েছিল। এসব দেখেই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিয়ন্ত্রণের আবশ্যক মনে করা হয়।
সম্প্রতি, ভারতীয় সেনা প্রধান জেনারেল উপেন্দ্র দ্বিবেদী চাণক্য প্রতিরক্ষা সংলাপের সময় সেনা কর্মীদের সোশ্যাল মিডিয়া ব্যবহার সম্পর্কে তাঁর মতামত ভাগ করে নিয়েছিলেন। অনুষ্ঠানের সময়, তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল যে, জেনারেশন জেড যুবরা সেনাবাহিনীতে যোগদান করতে আগ্রহী, কিন্তু সেনাবাহিনী এবং সোশ্যাল মিডিয়ার মধ্যে একটি দ্বন্দ্ব রয়েছে বলে মনে হচ্ছে। জেনারেল দ্বিবেদী বলেন, "এটা সত্যিই একটা চ্যালেঞ্জ। যখন যুব ক্যাডেটরা এনডিএতে আসে, তখন তাঁরা প্রথমেই তাঁদের ঘরে লুকিয়ে থাকা ফোন খুঁজতে থাকে। ফোন ছাড়া জীবন চলে, এই বিষয়টি তাদের বুঝতে তিন থেকে ছয় মাস সময় লাগে।" তবে, তিনি এও স্পষ্ট করে বলেন যে, আজকের সময়ে স্মার্টফোন একটি প্রয়োজনীয়তা হয়ে উঠেছে।
তিনি বলেন, "আমি কখনও সৈন্যদের স্মার্টফোন ব্যবহার করতে নিষেধ করি না। আমরা প্রায়শই মাঠে থাকি। সন্তানের স্কুলের ফি পরিশোধ করা হোক, বাবা-মায়ের স্বাস্থ্যের খোঁজ নেওয়া হোক অথবা স্ত্রীর সাথে কথা বলা হোক, এই সবকিছুই কেবল ফোনের মাধ্যমেই সম্ভব।"
সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রতিক্রিয়া জানানোর বিষয়ে সেনাপ্রধান বলেন, "প্রতিক্রিয়া দেখানো" এবং "উত্তর দেওয়া" দুটি ভিন্ন জিনিস। তিনি ব্যাখ্যা করেন, "প্রতিক্রিয়া দেখানোর অর্থ তৎক্ষণাৎ জবাব দেওয়া। অন্যদিকে উত্তর দেওয়ার অর্থ চিন্তাভাবনা করে জবাব দেওয়া। আমরা চাই না আমাদের সৈন্যরা তাড়াহুড়ো করে বিতর্কে জড়িয়ে পড়ুক। অতএব, তাঁদের কেবল এক্স-এর মতো প্ল্যাটফর্মে দেখার অনুমতি দেওয়া হয়, জবাব দেওয়ার নয়।"
২০১৭ সালে, তৎকালীন প্রতিরক্ষা প্রতিমন্ত্রী সুভাষ ভামরে সংসদে বলেছিলেন, এই নির্দেশিকাগুলি তথ্য সুরক্ষা এবং এর অপব্যবহার রোধ করার জন্য তৈরি করা হয়েছিল।
২০১৯ সাল পর্যন্ত, সেনা জওয়ানরা কোনও সোশ্যাল মিডিয়া গ্রুপের অংশ হতে পারতেন না। ২০২০ সালে, নিয়মগুলি আরও কঠোর করা হয়এবং সৈন্যদের ফেসবুক এবং ইনস্টাগ্রাম সহ ৮৯টি মোবাইল অ্যাপ মুছে ফেলার নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল। তবে, এরপরেও সেনা কিছু প্ল্যাটফর্ম যেমন - ফেসবুক, ইউটিউব, এক্স, লিঙ্কডইন, কোওরা, টেলিগ্রাম এবং হোয়াটসঅ্যাপের সীমিত ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছে, তাও কঠোর পর্যবেক্ষণের অধীনে।

No comments:
Post a Comment