শিশুপুত্রকে নিয়ে দুই মায়ের টানাটানি। এই ঘটনা যেন স্মরণ করিয়ে দেয় ভগবান শ্রীকৃষ্ণের কথা। তাঁর মা যশোদা ও মা দেবকী দুজনেরই চোখের মণি ছিলেন তিনি। ছোটবেলায় যশোদা মায়ের আঁচলে কাটলেও কিশোর অবস্থায় ফিরে যেতে হয় জন্মদাত্রী মা অর্থাৎ দেবকীর কাছে। উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদ থেকেও খানিকটা এমনই ঘটনা প্রকাশ্যে আসে।
পাঁচ বছর আগে এক দম্পতির ছেলে হারিয়ে যায়। ছেলেকে খুঁজতে খুঁজতে বাবার মৃত্যু হয়ে যায়। আর কেঁদে কেঁদে মায়ের অবস্থা খারাপ হয়। স্বামী ও ছেলে দুজনকেই হারিয়েছিলেন ওই নারী। এদিকে দেবকী নামে এক মহিলা সেই নিখোঁজ ছেলেকে যশোদা হয়ে দেখাশোনা করছিলেন। তবে পাঁচ বছর পর নিজের নাতিকে চিনতে পারেন তার দাদু। এরপর পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়। এখন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের মতো দুই মায়ের মধ্যে আটকে আছে ছেলে। একদিকে জন্মদাত্রী মা আর অন্যদিকে যেই মা পালন করেছেন। এ বিষয়ে পুলিশ আইনি প্রক্রিয়া করছে, এরপর শিশুটিকে হস্তান্তরের কথা রয়েছে।
তথ্যমতে, পাঁচ বছর আগে ছানাড়ি গ্রামের বাসিন্দা রেণু তার পাঁচ বছরের ছেলে অতুলকে নিয়ে সিরসাগঞ্জের কাঠফোড়িতে তার মামাবাড়িতে নিয়ে যায়। ৩০ জুন ২০১৭ তার ছেলে অতুল বাড়ির বাইরে খেলছিল। এ সময় সে নিখোঁজ হয়ে যায়। এরপর তার মামা অবনীশ কুমার বাঘেল বাদী হয়ে অপহরণের মামলা করেন।
মামলা দায়েরের পরও তার কোনও খোঁজ পাওয়া যায়নি। একদিন তার বাবা রঘুবীর সিং (নিখোঁজ শিশুর দাদু) কোনও কাজে জসরানা এলাকার নাগলা ঢালে গিয়েছিলেন। তখন তিনি তার নাতি অতুলকে রাম বাহাদুর নামে এক ব্যক্তির বাড়ির বাইরে খেলতে দেখেন। নাতিকে জীবিত দেখে দাদুর চোখ জলে ভরে যায়।
এরপর তিনি সরাসরি জাসরানা থানায় যান, সেখানে তিনি বিষয়টি পুলিশকে জানান। এরপর ইন্সপেক্টর ফতেহ বাহাদুর সিং ভাদৌরিয়া ঘটনাস্থলে পৌঁছে শিশুটিকে তার কাছে দাঁড়িয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করেন। ছেলের কথা জানতে পেরে রেণুসহ অন্য সদস্যরাও পৌঁছে যায় সেখানে। শিশুটি তার পরিবারকে চিনতে পেরেছে কিন্তু দুই মায়ের ভালোবাসার মাঝে আটকা পড়ে যায় সে।
স্বজনরা পরিদর্শককে জানান, সন্তানের শোকে তার বাবা হাকিম সিং আড়াই বছর আগে মারা গেছেন। দেবকী নামে যে মহিলা অতুলকে লালন-পালন করছেন, তিনি জানিয়েছেন যে, তাঁর কোনও সন্তান নেই। এই শিশুটিকে দিয়েছেন বিহারের এক মহিলা। এরপর তাকে ছেলের মতো মানুষ করতে থাকেন তিনি।
এদিকে দশ বছর বয়সী অতুল এই পরিস্থিতিতে খুবই হতবাক। কারণ একদিকে দেবকী মা, যিনি তাকে লালন-পালন করছেন, অন্যদিকে রেণু, সেই মা যিনি তাকে জন্ম দিয়েছেন এবং পাঁচ বছর ধরে লালন-পালন করেছেন। থানায় বসে থাকা দুই মায়ের সঙ্গে কোনও কথা বলার মতো অবস্থায় নেই অতুল। বর্তমানে শিশুটি পুলিশের কাছে রয়েছে। আইনি প্রক্রিয়া শেষে শিশুটিকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হবে।
No comments:
Post a Comment