প্রাচীন রীতি মেনে দেবী পক্ষের শুরুতেই ছাগ বলি দিয়ে পুজো শুরু বীরভূমের নলহাটি থানার শীতল গ্রামে। এটি শীতল গ্রামের চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজো হিসেবে পরিচিতি। এই পুজোর তিন শরিক। উপস্থিত থাকেন তিন পরিবারের সদস্যরা। রীতি মেনেই রক্তমাখা খাঁড়া নিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ করা হয় চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পক্ষ থেকে।
কথিত আছে প্রায় ৩২০ বছর আগে কোন এক চট্টোপাধ্যায় পরিবার জঙ্গলঘেরা শীতলগ্রামে আশ্রয় নিয়েছিলেন। সেখানে পঞ্চমুন্ডির আসন গড়ে শক্তির সাধনা শুরু করেন। তিনিই স্বপ্নাদেশ পেয়ে দুর্গা পুজো শুরু করেন। পরবর্তীকালে এই পুজো তিন শরিকে ভাগ হয়ে যায়। তবে তিন শরিক এক সঙ্গে খরচ তুলে পুজো করেন। পুজোর বর্তমান শরিক শক্তি চট্টোপাধ্যায় জানান, “প্রথম দিকে পূর্বপুরুষেরা পুজো চালিয়ে এলেও মৃত্যুর পর বাড়ির মেয়েরাও শরিক হিসাবে অংশগ্রহণ করেন। ফলে এখন তিন শরিক মিলে পুজো হয়ে আসছে।”
আরেক শরিক সুভাষ মুখোপাধ্যায়, কর্পরেন্দু গোস্বামীরা জানান, “প্রাচীনরীতি মেনে মহালয়ার পরের দিন অর্থাৎ দেবীপক্ষের শুরুতেই পুজো শুরু করা হয়। সেই মতো এদিন সকালে ঘট ভরে পুজো শুরু করা হয়েছে। একটি ছাগ বলি দেওয়া হয়েছে। পুজো চারদিনও ছাগ বলি দেওয়া হয়।” প্রাচীন রীতি মেনে গ্রামের আরও ছয়টি পুজো শুরু হয় চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজোর পর।
এমনকি পুজো চারদিন গ্রামবাসীদের জানান দিতে গ্রামে ডঙ্কা পিটিয়ে চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পুজোর জানান দেওয়া হয়। রক্তমাখা খাঁড়া নিয়ে গ্রাম প্রদক্ষিণ করা হয় চট্টোপাধ্যায় পরিবারের পক্ষ থেকে। তারপরেই অন্য বারোয়ারি পুজো শুরু করে। পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, দশমীর রাতে মায়ের নিরঞ্জন হয়। কিন্তু আজও নিরঞ্জনের সময় কোন বৈদুতিন আলোর ব্যবহার করা হয় না।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় জানান, “যে সময় পুজো শুরু হয়, তখন গ্রাম ছিল জঙ্গল ঘেরা। আলোর কোন চল ছিল না। এলাকার মানুষ কাঠ খড় জ্বালিয়ে যাতায়াত করত। প্রতিমা নিরঞ্জনও করা হত সেভাবেই। সেই রীতি বজায় রাখতে আজও বৈদুতিন আলোর ব্যবহার করা হয় না। রাতে প্রতিমা নিয়ে মশাল জ্বেলে গ্রাম প্রদক্ষিণ করা হয়। এই নিরঞ্জন দেখতে আশেপাশের গ্রামের মানুষ ভিড় জমান।”
No comments:
Post a Comment