দিল্লীর শ্রদ্ধা ওয়াকার খুন মামলার আদলে, ঝাড়খণ্ডের সাহেবগঞ্জ জেলার অন্তর্গত বোরিও ব্লকে রবিতা খুন মামলায় সামনে এল বড় খবর। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, শ্বশুরবাড়ির লোকজন মিলে রবিতাকে খুন করেছে। ঘটনার প্রধান অভিযুক্ত মইনুল হক রবিতার স্বামী দিলদারের মামা। ঘটনার পর থেকে সে পলাতক রয়েছে। এ ঘটনায় নিহতের স্বামী দিলদার আনসারী ও শাশুড়ি মরিয়ম খাতুসহ মোট ৭ জনকে আটক করেছে পুলিশ। পুলিশ বলছে, প্রমান লুকানোর উদ্দেশ্যে রাবিতার শরীরের প্রায় ২০ টুকরো করা হয়েছে। এখন পর্যন্ত মাত্র ৭-৮টি টুকরো উদ্ধার করা হয়েছে। মাথাসহ অন্যান্য অঙ্গের সন্ধানে ডগ স্কোয়াডের সহায়তা নেওয়া হচ্ছে। রবিতাকে খুনের জন্য একটি লোহা কাটার মেশিন ব্যবহার করা হয়েছিল বলে জানা গেছে। পুলিশ তদন্তে নিয়োজিত।
রাবিতা খুন মামলার প্রাথমিক তথ্যে জানা গেছে, বোরিও থানা এলাকার মাথিও দোন্ডা পাহাড়ের বাসিন্দা রবিতা পাহাড়দিনের সঙ্গে বোরিও বেল টোলার বাসিন্দা মহম্মদ মুস্তাকিমের ছেলে দিলদার আনসারীর প্রেমের সম্পর্ক ছিল বেশ কয়েক বছর। দিলদার আগেই বিবাহিত। রবিতার সঙ্গে তার প্রেমের সম্পর্কে খুশি ছিলেন না দিলদারের পরিবারের সদস্যরা। এ কারণেই রবিতাকে বিয়ে করার পর দিলদার তাকে বোরিও সাঁওতালির হেমন্তী মুর্মুর বাড়িতে ভাড়া করে নিয়ে যায়। বাড়িওয়ালা হেমন্তী জানান, রবিতা তার বাড়িতে প্রায় এক সপ্তাহ থেকে ছিল না। তবে, দিলদার বাড়িটির এক মাসের ভাড়া হিসেবে পুরো ২ হাজার টাকা পরিশোধ করেছিলেন। এক সপ্তাহ বোরিও সাঁওতালিতে থাকার পর দিলদার আনসারির পরিবারের সদস্যরা রবিতাকে নিয়ে বেল টোলায় নিয়ে যায়। এখান থেকে তাকে মূল অভিযুক্ত মইনুল আনসারির বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়।
জানা গেছে, শুক্রবার রাবিতার শাশুড়ি মরিয়ম তাকে বেল টোলায় তার ব্যক্তিগত বাসা থেকে তার ভাই মইনুল হকের বাড়িতে নিয়ে যান বোরিও মঞ্জ টোলায়। শনিবার সন্ধ্যায় বোরিও সাঁওতালির নির্মাণাধীন অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্রের পিছনে ইনসারির পা ও শরীরের অন্যান্য অংশ দেখে স্থানীয় লোকজন পুলিশে খবর দেয়। খবর পেয়ে বোরিও থানার ভারপ্রাপ্ত আধিকারিক জগন্নাথ পান এএসআই করুণ কুমার রায় সহ দলবল নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছে তদন্ত চালান। তদন্তের সময়, পুলিশ অঙ্গনওয়াড়ি কেন্দ্র থেকে মাত্র ৩০০ মিটার দূরে একটি পুরানো এবং বন্ধ বাড়িতে মানুষের অঙ্গগুলির টুকরো খুঁজে পায়। দিলদার আনসারি নিহতের নাম রাবিতা বলে শনাক্ত করেছেন। চাঞ্চল্যকর এ হত্যাকাণ্ডের তথ্য আগুনের মতো ছড়িয়ে পড়ে গোটা এলাকায়। জেলার এসপি অনুরঞ্জন কিসপোত্তা এবং এসডিপিও রাজেন্দ্র দুবেও ঘটনাস্থলে পৌঁছে রবিতার স্বামী দিলদার আনসারি সহ তার আত্মীয়দের বাড়িতে অভিযান চালান। প্রধান আসামি মইনুল হকের বাড়ি থেকে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত দুটি অস্ত্র উদ্ধার করেছে পুলিশ। আলামত হিসেবে পুলিশ তাদের আটক করে।
রবিতা হত্যা মামলায় গ্রেফতার ৭ জনকে
এ ঘটনায় নিহত রবিতা পাহাড়দিনের স্বামী দিলদার আনসারী, শ্বশুর মুস্তাকিম আনসারী, শাশুড়ি মরিয়ম খাতুন, দিলদার আনসারীর স্ত্রী গুলেরা, দিলদারের ভাই আমির আনসারী, মেহতাব আনসারি ও বোন শরেজা খাতুনকে আটক করেছে পুলিশ। এসব বিষয়ে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে। পুলিশ উদ্ধারকৃত দেহের ১টি আঙুল, কাঁধের একটি অংশ, পিঠের নিচের অংশ, হাতের একটি অংশ, ফুসফুস ও পেটের অংশ হিসেবে শনাক্ত করেছে। ডগ স্কোয়াডের সাহায্যে শরীরের বাকি অংশের খোঁজ চলছে।
No comments:
Post a Comment