বড়সড় ধ্বংসযজ্ঞের জেরে আতঙ্কে মানুষ।উত্তরাখণ্ডে চামোলি জেলার জোশীমঠে ভূমিধসের কারণে প্রচুর ঘরবাড়িতে ফাটল চওড়া হচ্ছে। জোশীমঠ শহরের বিভিন্ন এলাকায় বাড়িঘর ছাড়াও সড়কে ফাটল দেখা দিয়েছে। মাটি থেকে জলের স্রোত বেরিয়ে আসার ঘটনাও ঘটেছে। ঘরবাড়ি ও মাঠে ফাটলের পর এখন হাই টেনশন লাইনের খুঁটিগুলোও বেঁকে গিয়েছে। এতে আশপাশের ঘরবাড়িতে বিপদের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে ফাটলের গভীরতায় ক্ষেতে লাগানো মাল্টা ও আপেল গাছ ভেঙে পড়তে শুরু করেছে। এসব ঘটনায় পুরো জোশীমঠ এলাকার মানুষ আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে। যেসব বাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে, সেখানে বসবাসকারী লোকজন ঘরবাড়ি ছেড়ে প্রচণ্ড ঠান্ডায় খোলা আকাশের নিচে রাত কাটাতে বাধ্য হচ্ছেন।
জোশীমঠে ক্রমবর্ধমান ভূমিধসের পরিপ্রেক্ষিতে ২১টি পরিবারকে নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে। ১৬টি পরিবারকে পৌরসভা জোশীমঠে এবং একটি পরিবারকে জোশীমঠ উন্নয়ন ব্লকে এবং ৪টি পরিবারকে মাড়োয়াড়ি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে স্থানান্তরিত করা হয়েছে।
মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি এই বিষয়ে চামোলি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিমাংশু খুরানার কাছে একটি রিপোর্ট চেয়েছেন এবং রিপোর্ট এলে উন্নতির জন্য পদক্ষেপের কথা বলেছেন। অন্যদিকে, প্রশাসনিক দল ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত এলাকা জরিপ করছে। হতাহতদের পরিবারকে নিরাপদ স্থানে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় সংবাদমাধ্যমে বলা হয়েছে, ঘরবাড়ি ও মাঠে ফাটল দেখা দেওয়ার পর বৈদ্যুতিক হাই টেনশন লাইনের খুঁটিও আঁকাবাঁকা হয়ে গেছে। এতে আশপাশের ঘরবাড়িতে বিপদের সৃষ্টি হয়েছে। সেই সঙ্গে ফাটলের গভীরতায় ক্ষেতে লাগানো মাল্টা ও আপেল গাছ ভেঙে পড়তে শুরু করেছে।
জোশীমঠ শহরের মনোহরবাগ ওয়ার্ডে সবচেয়ে দ্রুত ভূমিধস হচ্ছে। এখানকার অনেক বাড়ি ও গোশালায় ফাটল দেখা দিয়েছে। ওয়ার্ডের বাসিন্দা মদন কাপরওয়ান জানান, গোয়ালঘরে ফাটল দেখা দেওয়ায় তিনি গরুটিকে বাড়িতে নিয়ে গেছেন। তার বাড়ির কাছে একটি হাই টেনশন লাইন রয়েছে। ভূমিধসে হাই টেনশন লাইনের পিলারগুলো এলোমেলো হয়ে গেছে। এতে পিলারের আশপাশের বাড়িগুলোতে বিপদের সৃষ্টি হয়েছে।
অন্যদিকে স্থানীয় বাসিন্দা ভগবতী প্রসাদ কাপরওয়ান জানান, তার ক্ষেতে ক্রমাগত ফাটলের কারণে মাঠে লাগানো মাল্টা ও আপেল গাছও ভেঙে পড়তে শুরু করেছে।
এনার্জি কর্পোরেশনের জেই ডিএস পানওয়ার বলেন, মনোহর বাগ ওয়ার্ড থেকে তথ্য পাওয়া গেছে যে ভূমিধসে সেখানে বৈদ্যুতিক খুঁটি ঝুলতে শুরু করেছে। পরিদর্শন শেষে ঝুঁকিপূর্ণ খুঁটিগুলো স্থানান্তরের ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, নগর এলাকায় ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িঘর জরিপ করতে প্রশাসনের গঠিত টিম এ পর্যন্ত ৯০টি বাড়ি জরিপ সম্পন্ন করেছে। তহসিলদার রবি শাহ জানান, সমীক্ষার কাজ দ্রুত শেষ করতে দুটি দল গঠন করা হয়েছে। অন্যদিকে, জেলা বিপর্যয় ব্যবস্থাপনা আধিকারিক নন্দ কিশোর যোশী জানিয়েছেন, ২০ জানুয়ারির মধ্যে জোশীমঠের ক্ষতিগ্রস্ত বাড়িগুলির সমীক্ষার কাজ শেষ করতে হবে। টিমকে জরিপের কাজ ত্বরান্বিত করতে বলা হয়েছে। পৌরসভা থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, সোমবার পর্যন্ত ভূমিধসে ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৫৮৬।
উত্তরাখণ্ড সরকার অবিলম্বে এই বিপর্যস্ত শহরের মানুষদের পুনর্বাসনের প্রক্রিয়া শুরু না করলে রাজপথে নামবে বলে হুমকি দিয়েছে জোশীমঠের একটি সংগঠন। 'জোশীমঠ বাঁচাও সংগ্রাম সমিতি'র আহ্বায়ক অতুল সতী বলেছেন যে, আন্দোলনের জন্য একটি কৌশল তৈরি করতে বুধবার চামোলি জেলার সীমান্ত শহর জোশীমঠে একটি বৈঠক ডাকা হয়েছে।
জোশীমঠ পৌরসভার চেয়ারম্যান শৈলেন্দ্র পানওয়ার জানান, ফাটল ধরেছে এমন বাড়ির সংখ্যা ৬০০ ছাড়িয়েছে। তিনি জানান, সোমবার থেকে সিংগাধর ওয়ার্ডের একটি বড় অংশে ঘরবাড়িতে ফাটল দেখা দিয়েছে। সতী সোমবার দেরাদুনে গিয়েছিলেন সমস্যার দিকে প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এবং জোশীমঠের বাসিন্দাদের অবিলম্বে পুনর্বাসনের দাবী করেছিলেন। তিনি বলেন, জোশীমাঠের ঘাঁটি ডুবে যাচ্ছে এবং মানুষের জীবন হুমকির মুখে পড়েছে। সোমবার সতী বলেন, 'আমরা এক বছর ধরে অবিলম্বে পুনর্বাসনের দাবী জানিয়ে আসছি কিন্তু কেউ আমাদের কথা শুনছে না।'
তিনি বলেন, জোশীমঠ কৌশলগত, ধর্মীয় এবং পর্যটন গুরুত্বের শেষ সীমান্ত শহর, যা সিসমিক জোন ফাইভের মধ্যে পড়ে। ভূমিকম্প হলে জানমালের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হবে বলে সতর্ক করেন তিনি। বিশেষজ্ঞদের একটি দলও শহরটি জরিপ করে দেখেছে যে, এটি ধীরে ধীরে ডুবে যাচ্ছে। প্রচুর সংখ্যক বাড়িতে বড় ফাটল দেখা যাচ্ছে। মুখ্যমন্ত্রী পুষ্কর সিং ধামি এই বিষয়ে চামোলি জেলা ম্যাজিস্ট্রেট হিমাংশু খুরানার কাছে একটি রিপোর্ট চেয়েছেন এবং রিপোর্ট এলে উন্নতির জন্য পদক্ষেপ করার কথা বলেছেন।
No comments:
Post a Comment