মহাশিবরাত্রির আগেই দেওঘরে শুরু হয়েছে রাজনীতির বড় লড়াই। ভারতীয় জনতা পার্টির সাংসদ নিশিকান্ত দুবে মহাশিবরাত্রিতে শিব মিছিল বন্ধ করার চেষ্টার অভিযোগ তুলে হেমন্ত সোরেন সরকারের বিরুদ্ধে মোর্চা খুলেছেন। দুবে ফের একবার সরাসরি মুখ্যমন্ত্রী হেমন্ত সোরেনকে নিশানা করেছেন। বুধবার দেওঘরে সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে সাংসদ বলেছিলেন যে মুখ্যমন্ত্রী বাবানগরীতে মহাশিবরাত্রিতে শিব বরাতের অনুমতি দিতে চান না। তিনি এর বিরোধিতা করবেন এবং অনশনে যেতেও প্রস্তুত। আদালতের দ্বারস্থও হয়েছেন তিনি।
শিব বরাত নিয়ে বিতর্ক এমন এক সময়ে ঘটছে যখন একদিন আগে পালামুর পাঙ্কি ব্লক সদর দফতরে সাম্প্রদায়িক সংঘর্ষ শুরু হয়। ঘটনার পর এলাকায় উত্তেজনা বিরাজ করছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে চার থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে ক্যাম্প করছে। পাঙ্কিতে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর করে ১৬ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যা পর্যন্ত সমগ্র জেলায় ইন্টারনেট পরিষেবা সাময়িকভাবে বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
নিশিকান্ত দুবে বলেন, বাবানগরীতে শিব বরাতের একটি প্রাচীন ইতিহাস রয়েছে। কাস্টিয়ার এবং উইলিয়ামস, যারা ব্রিটিশ আমলে অফিসার ছিলেন, তারা যথাক্রমে
১৮৫৪ এবং ১৮৯০ সালে তাদের বইতে শিব শোভাযাত্রা নিয়ে আলোচনা করেছেন। শিব বরাতের ইতিহাস ও ঐতিহ্য অনেক পুরনো। তিনি বলেন, বারোটি জ্যোতির্লিঙ্গের মধ্যে শ্রেষ্ঠ কমলিঙ্গ বাবা বৈদ্যনাথের বিশেষত্ব হল কানওয়ার যাত্রা ও শিব বরাত। গত ২৫-৩০ বছরে এর চেহারাটি দুর্দান্ত হয়ে উঠেছে। তিনি বলেন, ২০০৯ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর থেকেই তিনি বাবানগরীর শিব বরাতে অংশ নিচ্ছেন।
কোভিডের কারণে দুই বছর ধরে শোভাযাত্রা আয়োজন করতে না পারায় সাধারণ মানুষের মিছিলে পরিণত করার জন্য অনুদান না নিয়ে নিজেই আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এ জন্য বিদ্যমান শিবরাত্রি উৎসব কমিটিতে নতুন কয়েকজনকে যুক্ত করা হয়েছে। প্রথম মেয়রের অসুস্থতার কথা মাথায় রেখেই সভাপতি করা হয়েছে অভিষেক আনন্দ ঝাকে। নতুন কমিটিতে সেবক হিসেবে যুক্ত থাকলেও পদত্যাগের পর তিনি আগের মতোই এমপি ও বড়তির ভূমিকায় থাকবেন। কমিটি প্রশাসনের সঙ্গে সমন্বয়কে অগ্রাধিকার দিলেও প্রশাসন তাদের হয়রানি করে সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দেওয়ার কাজ করেছে।
এখানে রাজনৈতিক দলের অনুষ্ঠানের জন্য অনুমতির প্রয়োজন নেই, তবে বাবার মিছিলের জন্য প্রতিটি কাজে প্রশাসনের অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক করা হয়েছে। মিছিলে গাড়ির সংখ্যা কত হবে, এটাও নির্বাচনের মতো প্রশাসনের কাছে জানতে চাওয়া হচ্ছে। পিআরডি মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত নির্দেশের কপি জারি করছে। তিনি ছাড়াও এই বিষয়ে কমিটির চেয়ারম্যান অভিষেক আনন্দ ঝা একটি পিআইএল দায়ের করেছেন। দুবে বলেন, স্বৈরাচারের বিরুদ্ধে সংগ্রাম চলবে। প্রয়োজনে অনশনেও বসবেন। কমিটির দেওয়া রুট প্রশস্ত, পুরনো রুট বেশ সরু। ১৪৪ ধারা জারি করে প্রশাসনও পূজা নিষিদ্ধ করার নির্দেশ জারি করেছে। লক্ষ্য শুধু শিব বরাত নয়। ৩০০ সাল থেকে একটি সামাজিক ও জাতিগত সংগঠন হওয়া সত্ত্বেও, শুধুমাত্র পান্ডা ধর্মাক্ষরী সভা বলা কতটা উপযুক্ত। সভায় কেন জনপ্রতিনিধিদের ডাকা হয়নি।
মহাশিবরাত্রির দিন পুরো দেওঘর মহকুমায় নিষেধাজ্ঞা জারি করা জেলা প্রশাসনের দ্বারা একেবারেই অবাস্তব এবং অনুচিত। বুধবার সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রাক্তন মন্ত্রী কৃষ্ণানন্দ ঝা জেলা প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তকে অন্যায় বলে অভিহিত করেন। তিনি বলেন যে সংবাদপত্র থেকে তথ্য পাওয়া গেছে যে দেওঘর জেলা প্রশাসন এই বছর মহাশিবরাত্রির দিনে দেওঘর মহকুমায় ধারা -১৪৪ অর্থাৎ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে। এটাকে অযৌক্তিক সিদ্ধান্ত আখ্যা দিয়ে কেএন ঝা বিস্ময় ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন। তিনি আরও বলেন, এ ধরনের সিদ্ধান্ত কোনও ব্যক্তির চিন্তার বাইরে।
No comments:
Post a Comment