ভোট আসতেই চমকও আসছে - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Wednesday 15 February 2023

ভোট আসতেই চমকও আসছে


রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন যত এগিয়ে আসছে, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে দেখা যাচ্ছে একের পর এক চমক। ভোট আবহে দলবদল যেন ফের মাথা চাড়া দিয়ে উঠছে। আর এই সূত্র ধরেই বাংলার উত্তর অঞ্চলে তৈরি হচ্ছে নতুন রাজনৈতিক পটভূমি। বাংলার রাজনীতিতে সুপার পাওয়ারের অধিকারী তৃণমূল কংগ্রেস এখানে যেন কিছুই   দুর্বল হয়ে পড়ছে বিজেপির সামনে। গত সপ্তাহে বুধবার (৮ ফেব্রুয়ারি) একটি সংবাদ সম্মেলনে তৃণমূল বলেছিল যে, বিজেপি বাংলার সাথে ডবল গেম খেলছে।  উত্তরবঙ্গ নিয়ে বিজেপির কাছে ব্যাখ্যাও চেয়েছে শাসক দল। সর্বোপরি, উত্তরবঙ্গে কী ঘটছে এবং কেন টিএমসি তা নিয়ে এত ভয় পাচ্ছে, আসুন তা বোঝা যাক।


একটু পেছন ফিরে দেখা যাক। উত্তরবঙ্গের রাজবংশী সম্প্রদায় ও গোর্খারা দীর্ঘদিন ধরে পৃথক রাজ্যের দাবী জানিয়ে আসছে। ২০১৯ লোকসভা নির্বাচনে, বিজেপির কিছু নেতা এই দাবীর সমর্থনে বিবৃতি দিয়েছিলেন। লোকসভা নির্বাচনের ফলাফল এলেই এই এলাকায় বিজেপি একতরফা জয় পায়। লোকসভার ৮টি আসনের মধ্যে ৭টিই বিজেপির দখলে। রাজ্যের ৪২টি লোকসভা আসনের মধ্যে, বিজেপি পায় ১৮টি এবং তৃণমূল কংগ্রেস পায় ২২টি। 


এরপর একুশের বিধানসভা নির্বাচনে ছিল কার্যত সবুজ ঝড়, সবাইকে পেছনে ফেলে বিশাল জয় পায় তৃণমূল কংগ্রেস। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের দল রাজ্য বিধানসভার ২৯৪টি আসনের মধ্যে ২১১টি দখল করে। বিজেপির ঝুলিতে ছিল ৭৭টি আসন। কিন্তু এই নির্বাচনেও ছিল ট্যুইস্ট। সারা বাংলায় তৃণমূলের জাদু চললেও উত্তরবঙ্গ ছিল অধরা।


উত্তরবঙ্গের ৫৪টি বিধানসভা আসনের মধ্যে ২৯টিতেই কমলা ঝড় ওঠে। তৃণমূল পায় মাত্র ২৪টি আসন। এবারে রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন।  এই আবহে উত্তরবঙ্গে বিজেপির শক্তি বৃদ্ধি তৃণমূলের জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। 


এছাড়া কেন্দ্রীয় সরকার কামতাপুর লিবারেশন অর্গানাইজেশনের (কেএলও) সঙ্গে আলোচনা শুরু করতে পারে বলে আরও একটি গুঞ্জন রয়েছে। কেএলও একটি জঙ্গি সংগঠন। এটি ১৯৯৫ সালে রাজবংশী সম্প্রদায়ের একটি গ্রুপ দ্বারা গঠিত হয়। এটি উত্তরবঙ্গ ও আসামের কিছু অংশ নিয়ে একটি নতুন রাজ্য গঠনের দাবী জানায়। 


যদিও, বিজেপি এমন কোনও আলোচনা অস্বীকার করেছে, তবে এই গুঞ্জন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ওপর চাপ সৃষ্টি করেছে। রাজ্য ভাগের বিরোধিতা করছে তৃণমূল। এর বিরুদ্ধে বিধানসভায় প্রস্তাব আনারও ঘোষণা দিয়েছেন তারা।


আপাতত এখানে গত দুই নির্বাচনে পরিস্থিতি বিজেপির অনুকূলে ছিল। আর এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনেও জমি ধরে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা চালাচ্ছে পদ্ম শিবির। আসন্ন পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই অঞ্চল থেকে অন্তত ৫টি জেলা পরিষদে জেতার লক্ষ্য স্থির করেছে বিজেপি। 


অপরদিকে পূর্ণ শক্তি প্রয়োগ করে ঝাঁপিয়েছে জোড়াফুল শিবিরও। গত মাসেই উত্তরবঙ্গ সফরে ছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি বিজেপির বিরুদ্ধে উত্তরবঙ্গ নিয়ে ভুল আখ্যান তৈরির অভিযোগ করেন। তবে এইসবের মাঝেও তৃণমূলের জন্য স্বস্তির খবর, এখনও পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের তিনজন বিধায়ক ওই এলাকা থেকে বিজেপির টিকিটে জিতেও তৃণমূলে যোগ দিয়েছেন। তাদের মধ্যে একজন, আলিপুরদুয়ারের বিজেপি বিধায়ক সুমন কাঞ্জিলাল। সম্প্রতি তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসে এই যোগদান হয়, যদিও তৃণমূলের পতাকা হাতে নেননি সুমন। 


এর পাশাপাশি, গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশনে (জিটিএ) তৃণমূলের এন্ট্রি হলেও অন্যদিকে বিমল গুরুং, বিনয় তামাং-এর মতো নেতারা একত্রিত হয়েছেন এবং গোর্খাল্যান্ডের দাবী তুলছেন, এই পরিস্থিতি বিজেপির পক্ষে বলেই মনে করছেন রাজনৈতিক মহলের একাংশ। 


ওদিকে বিধায়কের জোড়া ফুলে চলে যাওয়ায় বিজেপি যে খুব একটা স্বস্তিতে রয়েছে, একথা হলফ করে বলা যায় না। কারণ বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী শুক্রবার এলাকার আলিপুরদুয়ারে একটি সমাবেশে ভাষণ দেওয়ার সময়, সুমন কাঞ্জিলালকে নিশানা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, গাড়ি ও কিছু অর্থের জন্য সুমন ফুল বদল করেন। সেইসঙ্গে তিনি আরও বলেন বলেন, 'আমরা কখনও রাজ্য ভাগের দাবী করিনি। কিন্তু উত্তরবঙ্গের মানুষ বঞ্চিত, এটা আমরা বারবার বলব।


আর কয়েক দিন পর রাজ্যে পঞ্চায়েত নির্বাচন। দিন ঘোষণা না হলেও ভোটের দামামা কিন্তু ইতিমধ্যেই বেজে গিয়েছে। আর এই নির্বাচনে উত্তরবঙ্গের মাটি ধরে রাখতে পদ্ম শিবির যেমন চেষ্টা করবে, শাসক শিবিরও ঝাঁপাবে জমি ছিনিয়ে নিতে। যার প্রস্তুতি শুরু হয়ে গিয়েছে। তৃণমূলের অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে শুরু করে বিজেপির শুভেন্দু উত্তরবঙ্গে সভা করছেন দলীয় কর্মীদের চাঙ্গা করতে। উত্তরবঙ্গে কী পালাবদল হবে? তার উত্তর শুধু সময়ের অপেক্ষা।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad