তীব্র দাবদাহে হাঁসফাঁস অবস্থা, তাপমাত্রা ছুঁয়েছে ৪০ ডিগ্রি, আর্দ্রতা ১৭ শতাংশ, দহন জ্বালায় মানুষ এক প্রকার জ্বলছে। আর সেই সময় আবার চলছে উন্নয়নের নামে গাছ কাটার কাজ, যা বাধা দিতে এগিয়ে এলেন বৃক্ষ প্রেমীরা। ঘটনা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার।
বারাসত-ব্যারাকপুর রোডের হেলাবটতলার মোড়ে প্রাথমিক পর্যায়ে তিনটি গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছে বন দফতর। ব্যারাকপুর রোড চওড়া করে যানজট মুক্ত করা, সেই কারণেই ৩৪ নম্বর জাতীয় সড়কের সঙ্গে ব্যারাকপুর রোডের সংযোগস্থলে প্রাথমিক পর্যায়ে তিনটে গাছ কাটার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে বাকি ব্যারাকপুর রোড চওড়া করার জন্য সমস্ত গাছ ধীরে ধীরে কাটা হতে পারে, এই আশঙ্কাতেই পথে নামলেন বৃক্ষ-প্রেমীরা।
দীর্ঘদিনের একটি প্রাচীন কৃষ্ণচূড়া গাছ কেটে দেওয়ার পর বৃক্ষ-প্রেমীরা জানতে পারেন। সাথে সাথেই তারা প্রতিবাদ করেন এবং পথে নামেন। অতীতে এর আগে যশোর রোড চওড়া করার জন্য প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাছ কাটার প্রকল্প নিয়েছিল এনঐইচ (NH) কর্তৃপক্ষ। বৃক্ষ প্রেমীরা যশোর রোডে আন্দোলন করে সেই গাছ কাটা রুখে দেয়, যদিও সেই ঘটনা এখনও আদালতে বিচারাধীন। তার মধ্যেই আবার উত্তর ২৪ পরগনা জেলাতে গাছ কাটা শুরু হওয়াতে স্বাভাবিকভাবেই হতবাক বৃক্ষ প্রেমীরা!
তবে এ ব্যাপারে বন দফতরের বিড অফিসার সুজয় হালদার জানিয়েছেন, গাছ কাটার আবেদন করেছিল পি ডব্লিউ ডি। একটা গাছ কেটে, পাঁচটা গাছ তারা লাগিয়ে দেবে, এটা বৃষ্টির সময়। গাছ কাটার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ের যা নিয়ম থাকে, তা ফুলফিল করার কারণেই বন দফতর গাছ কাটার নির্দেশ দিয়েছে।
এদিকে গাছ কাটতে এলে গাছ-প্রেমীরা সরাসরি বাধা দেবেন হলে হুঁশিয়ারি দেন। বৃক্ষ প্রেমী নেহা চক্রবর্তী বলেন, "রাস্তা চওড়া করার নামে গাছ কাটার যে প্রয়াস, সেটা আমরা অবিলম্বে বন্ধ করতে চাই। উন্নয়নের স্বার্থে এই যে গাছ কাটা, তা যেন আর একটাও না হয়। এর আগেও আমাদের চোখের সামনে কৃষ্ণচূড়া গাছ কেটেছে। এখন এই গাছ কাটার প্রয়াস চলছে পারমিশন দেখিয়ে।" তিনি বলেন, 'আমরা চাই, রাস্তা চওড়া হওয়ার নামে এই যে গাছ কাটা, এই যে ধ্বংসলীলা, এটা ইতিমধ্যেই যেন বন্ধ করে।'
বৃক্ষ-প্রেমী অনির্বাণ দাস জানান, সকালে খবর পান এখানে হেলাবটতলায় একটা গাছ কাটা হচ্ছে। তাঁর অভিযোগ, কিছুদিন আগে এখানেই গাছ কাটার পরিকল্পনা শুরু হয়। তাদের সাথী-বন্ধুরা তা আটকে দেয়। তিনি বলেন, 'সরকার থেকে আশ্বাস দেওয়া হয়েছিল গাছটা আর কাটা হবে না, গাছের তলা থেকে মাটি সরানো হবে শুধু। তারপর দেখি আশেপাশে পিচ বসে গেল ও এলাকার মানুষ অটো বা ভ্যান স্ট্যান্ড যা ছিল, তারাও সরে যেতে থাকলেন। নতুন করে দেখছি আবার এই গাছগুলো কাটা শুরু হয়েছে।'
তিনি জানান, যে কৃষ্ণচূড়া গাছটি বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছিল, সেটি কেটে ফেলা হয়েছে এবং সেই অঞ্চলটি সাফ করে কাঠগুলোও নিয়ে চলে গেছে। এখন এই শতাব্দী প্রাচীন তেঁতুল গাছ কাটার পরিকল্পনা আছে এবং এই বারাসত-ব্যারাকপুর সংযোগকারী সমস্ত গাছ কাটার পরিকল্পনা হয়েছে। তিনি বলেন, 'যে রাস্তায় কখনও ট্রাফিক জ্যাম হয়নি, দুর্ঘটনা ঘটে না বললেই চলে, সেই রাস্তায় গাছ কাটা ধ্বংসাত্মক লীলা।' তিনি আরও বলেন, 'যেখানে তাপমাত্রা এতটা, আর্দ্রতা, আমরা চাই সবাই বাঁচুক, বাস্তুতন্ত্র বাঁচুক, তাই আমাদের এই লড়াই।'
No comments:
Post a Comment