ভারত-ইরানের বড় চুক্তি! চীন-পাকিস্তান কীভাবে পাবে কড়া জবাব? - press card news

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Tuesday 14 May 2024

ভারত-ইরানের বড় চুক্তি! চীন-পাকিস্তান কীভাবে পাবে কড়া জবাব?


ভারত-ইরানের বড় চুক্তি! চীন-পাকিস্তান কীভাবে পাবে কড়া জবাব? 



প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ১৪ মে: ভারত ও ইরানের মধ্যে চাবাহার বন্দর নিয়ে চুক্তি পাকিস্তানের জন্য একটি বড় ধাক্কা বলে মনে করা হচ্ছে। উল্লেখ্য, সোমবার (১৩ মে) ভারত ও ইরানের মধ্যে চাবাহার বন্দরের উন্নয়নের জন্য চুক্তি হয়েছে। এই চুক্তির বিষয়ে ভারতের নৌপরিবহন মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল তেহরানে পৌঁছেছেন।


এই চুক্তি অনুযায়ী আগামী ১০ বছরের জন্য রণনৈতিক ভাবে চাবাহার বন্দরের ওপর ভারতের নিয়ন্ত্রণ থাকবে। এ বন্দর পরিচালনার জন্য ইরানের সঙ্গে একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষরিত হয়েছে। সংবাদ সংস্থা এএনআই-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল এবং ইরানের সড়ক ও নগর উন্নয়ন মন্ত্রী মেহরদাদ বজরপাশ এই সময় উপস্থিত ছিলেন।


ভারত ও ইরানের মধ্যে এই চুক্তি অনুযায়ী, ভারত এখন চাবাহারের শহীদ বেহেশতি বন্দরের সাধারণ কার্গো এবং কন্টেইনার টার্মিনাল পরিচালনার অধিকার পাবে।


এই সময়, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সর্বানন্দ সোনোয়াল বলেন যে, "প্রধানমন্ত্রী মোদীর নেতৃত্বে, ২২ মে, ২০১৬-এ শুরু হওয়া গুরুত্বপূর্ণ চুক্তিটি আজ একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তিতে পরিণত হচ্ছে, যা ভারত ও ভারতের মধ্যে স্থায়ী আস্থা এবং নির্ভরশীল অংশীদারিত্বের প্রতীক।" তিনি বলেন, 'আজ আমরা ইরানের শহীদ-বেহেশতী বন্দর টার্মিনাল পরিচালনার জন্য দীর্ঘমেয়াদি চুক্তি চূড়ান্ত করেছি।'



চাবাহার বন্দর নিয়ে ভারত ও ইরানের মধ্যে করা এই পদক্ষেপকে ইরান ও মধ্য এশিয়ায় ভারতের জন্য একটি ভূ-রাজনৈতিক নাগাল হিসেবে দেখা হচ্ছে। এটাই প্রথম হবে, যখন ভারত বিদেশের মাটিতে বন্দরের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেবে। চাবাহার বন্দরের মাধ্যমে ইরান ও মধ্য এশিয়া সহ ইউরেশীয় অঞ্চলে ভারতের সংযোগ শক্তিশালী হবে।


উল্লেখ্য, চাবাহার বন্দর প্রকল্পটি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর একটি উচ্চাভিলাষী প্রকল্প হিসেবে পরিচিত। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর ইরান সফরের সময়, চাবাহার বন্দরের উন্নয়নের জন্য চুক্তি হয়েছিল। এর পরে, ২০১৮ সালে, ইরানের তৎকালীন রাষ্ট্রপতি হাসান রুহানি যখন নয়াদিল্লীতে এসেছিলেন, তখন চাবাহার বন্দরে ভারতের ভূমিকা নিয়ে আলোচনা হয়েছিল। এছাড়াও, ২০১৪ সালে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করের তেহরান সফরের সময়ও চাবাহার বন্দরের বিষয়টি প্রধানভাবে উত্থাপিত হয়েছিল।


ইরান সীমান্তের কাছে গোয়াদর বন্দর তৈরি করছে পাকিস্তান ও চীন। ভারত, ইরান ও আফগানিস্তানের সংযোগকারী চাবাহার বন্দরকে গোয়াদর বন্দরের জন্য চ্যালেঞ্জ হিসেবে দেখা হচ্ছে। এই দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি দশ বছরের জন্য এবং এর পরে এটি স্বয়ংক্রিয়ভাবে এগিয়ে যাবে। ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্কর সোমবার বলেছেন যে, এই চুক্তি বন্দরে বড় বিনিয়োগের পথ খুলে দেবে।


ভারত ও ইরানের মধ্যে এই চুক্তিকে পাকিস্তান ও চীনের জন্য উপযুক্ত জবাব হিসেবেও বিবেচনা করা হচ্ছে। এমতাবস্থায় এই চুক্তি কতটা গুরুত্বপূর্ণ জানা যাক আর এতে পাকিস্তান ও চীন কীভাবে জবাব পাবে?


চাবাহারে দুটি বন্দর রয়েছে। প্রথম- শহীদ কলন্তরী এবং দ্বিতীয়- শহীদ বেহেশতী। নৌপরিবহন মন্ত্রকের ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল পরিচালনা করেন শহীদ বেহেশতী।


আসলে ভারত আগে থেকেই এই বন্দরের কাজ সামলাচ্ছিল। তবে এটি একটি স্বল্পমেয়াদী চুক্তি ছিল। সময়ে সময়ে তা নবায়ন করতে হতো। কিন্তু এখন ১০ বছরের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি করা হয়েছে।


বহু বছর ধরে ভারত ও ইরানের মধ্যে একটি দীর্ঘমেয়াদী চুক্তি নিয়ে আলোচনা চলছিল। কিন্তু নানা কারণে এতে দেরি হচ্ছিল। এর মধ্যে ভারত ও ইরানের সম্পর্কে কিছুটা উত্তেজনা দেখা দেয়। এ ছাড়া ইরানের ওপর আমেরিকার নিষেধাজ্ঞার কারণেও এই চুক্তিতে দেরি হয়। বলা হচ্ছে এই চুক্তির আওতায় ইন্ডিয়া পোর্টস গ্লোবাল চাবাহার বন্দরে প্রায় ১২ কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে।


ইরান, আফগানিস্তান এবং মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে পণ্য পরিবহনের জন্য ভারত চাবাহার বন্দরের একটি অংশের উন্নতি করছে। নতুন চুক্তি পাকিস্তানের করাচি এবং গোয়াদর বন্দরকে বাইপাস করা যাবে এবং ইরানের মধ্য দিয়ে দক্ষিণ এশিয়া ও মধ্য এশিয়ার মধ্যে বাণিজ্য রুট খুলে দেবে।


উত্তর পাবে চীন-পাকিস্তান?

ইরানে নির্মিত চাবাহার বন্দরকেও চীন ও পাকিস্তানের জবাব হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। এ কারণে এখানে ভারতের ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। গোয়াদর বন্দরে চীনের উপস্থিতির কারণে চাবাহার বন্দর থাকা ভারতের জন্য লাভজনক।


পাকিস্তানে গোয়াদর বন্দর নির্মাণ করছে চীন। গোয়াদর বন্দর এবং চাবাহার বন্দরের মধ্যে সড়কপথে ৪০০ কিলোমিটার দূরত্ব রয়েছে। যেখানে সমুদ্রপথে এই দূরত্ব প্রায় ১০০ কিলোমিটার।


শুধু তাই নয়, চাবাহার বন্দরকে ইন্টারন্যাশনাল নর্থ-সাউথ ট্রান্সপোর্ট করিডরের (আইএনএসটিসি) সঙ্গেও যুক্ত করা হবে। এই করিডোরের আওতায় ভারত, ইরান, আফগানিস্তান, আর্মেনিয়া, আজারবাইজান, রাশিয়া, মধ্য এশিয়া এবং ইউরোপে জাহাজ, রেল ও সড়কের একটি ৭,২০০ কিলোমিটার দীর্ঘ নেটওয়ার্ক নির্মিত হবে। এর ফলে ইউরোপ ও রাশিয়ায় ভারতের প্রবেশ আরও সহজ হবে।


 এ ছাড়া চাবাহার বন্দরের সবচেয়ে বড় সুবিধা হবে ভারত পাকিস্তানকে বাইপাস করে ইরান ও মধ্য এশিয়ায় পৌঁছাতে পারবে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad