প্রেসকার্ড নিউজ বিনোদন ডেস্ক, ২২ জুলাই ২০২৫, ১০:০০:০১ : রাজস্থানের পুষ্কর এক প্রাচীন তীর্থনগরী, যেখানে অবস্থিত এমন এক মন্দির, যা গোটা ভারতের মধ্যে একমাত্র এবং সবচেয়ে রহস্যময় ব্রহ্মা মন্দির। সৃষ্টির দেবতা ব্রহ্মার নাম শুনলেই আমাদের মনে পড়ে বিশ্বসৃষ্টি, বেদ, এবং জ্ঞান। অথচ এমন এক সর্বশক্তিমান দেবতার পূজা হয় না ভারতের অন্য কোথাও, কেন?
এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজতেই বারবার উঠে আসে পুষ্করের এই প্রাচীন মন্দির এবং তার সঙ্গে জড়িয়ে থাকা এক অলৌকিক অভিশাপের কাহিনি।
পুরাণ অনুসারে, একবার ব্রহ্মা একটি যজ্ঞ করছিলেন পুষ্করে। যজ্ঞ পূর্ণ হওয়ার জন্য দরকার ছিল তাঁর পত্নী সরস্বতীর উপস্থিতি। কিন্তু তিনি নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত না হওয়ায় ব্রহ্মা অন্য এক নারী গায়ত্রীকে বিয়ে করে যজ্ঞ সম্পন্ন করেন।
এই ঘটনায় ক্রুদ্ধ হয়ে সরস্বতী দেবী তাঁকে অভিশাপ দেন, “পৃথিবীতে তুমি কখনও পূজিত হবে না!” অভিশাপের কারণে ভারতের মন্দিরসমূহে ব্রহ্মার পূজা নিষিদ্ধ হয়ে যায়।
তবে গায়ত্রীর উপস্থিতিতে পুষ্করের সেই যজ্ঞ সম্পন্ন হয়েছিল বলেই, এই একটি মাত্র স্থানেই আজও ব্রহ্মার পূজা হয়।
পুষ্করের ব্রহ্মা মন্দিরটি ১৪ শতকে নির্মিত হয় বলে মনে করা হয়। লাল পাথর দিয়ে তৈরি এই মন্দিরের ছাদে রয়েছে রাজস্থানি স্থাপত্যের নিখুঁত ছাপ, সঙ্গে শিখর ও চতুর্মুখী ব্রহ্মার বিরল মূর্তি।
বিশেষত্ব:
ব্রহ্মার চারটি মুখ, চারটি দিকের প্রতীক
পাশে রয়েছে তাঁর দুই স্ত্রী— সরস্বতী ও গায়ত্রীর আলাদা মন্দির
মন্দিরের ভিতরে শুধুমাত্র সন্ন্যাসীরা প্রবেশ করতে পারেন পূজার সময়
পর্যটকদের আকর্ষণ ও আধ্যাত্মিক প্রভাব
পুষ্কর এখন শুধু রাজস্থানের নয়, গোটা ভারতের অন্যতম পবিত্র তীর্থস্থান।
প্রতি বছর কার্তিক পূর্ণিমা-য় এখানে ব্রহ্মা মেলায় লক্ষ লক্ষ ভক্ত ভিড় জমান
পাশেই রয়েছে পুষ্কর হ্রদ, যেখানে স্নান করলে পাপমোচন হয় বলে বিশ্বাস
স্থানীয়রা বলেন, “এখানে এসে এক অন্য অনুভূতি হয় যেন সৃষ্টি ও শান্তির সঙ্গে নিজের সংযোগ ঘটে।”
এই প্রশ্নের উত্তর আজও ঐতিহাসিক, পৌরাণিক ও ধর্মতাত্ত্বিক স্তরে বিতর্কের বিষয়। কেউ বলেন ভক্তি কম হওয়ার কারণে, কেউ বলেন, অভিশাপের ভয়, আবার কেউ মনে করেন। ব্রহ্মার শক্তি মূলত আধ্যাত্মিক, তাই তাঁর বাহ্যিক রূপে পূজা প্রয়োজন হয় না।
পুষ্করের ব্রহ্মা মন্দির শুধু ধর্মীয় বিশ্বাস নয়, বরং এক অলৌকিক ইতিহাস ও পুরাণের জীবন্ত সাক্ষী। যেখানে দেবতা ব্রহ্মা একমাত্র পূজিত হন, সেখানে দাঁড়িয়ে মানুষ যেন প্রশ্ন করে, আসলে কে নিয়ন্ত্রণ করে ভাগ্য? ঈশ্বর, না ঈশ্বরের অভিশাপ?
No comments:
Post a Comment