প্রাথমিক লক্ষণ উপেক্ষা নয়, লিভার ক্যান্সার রুখতে সচেতনতা জরুরি - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Saturday, August 16, 2025

প্রাথমিক লক্ষণ উপেক্ষা নয়, লিভার ক্যান্সার রুখতে সচেতনতা জরুরি


 বিশ্বজুড়ে ক্যান্সারে মৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ হলো লিভার ক্যান্সার। বিশেষজ্ঞদের মতে, এটি অনেক সময় নীরবে শরীরে বাসা বাঁধে এবং শেষ পর্যায়ে গিয়ে ধরা পড়ে। ফলে চিকিৎসা শুরু করার আগেই রোগ জটিল হয়ে ওঠে। তাই লিভার ক্যান্সারকে বলা হয় "Silent Killer" বা নীরব ঘাতক।


কীভাবে হয় লিভার ক্যান্সার?

লিভার ক্যান্সার মূলত লিভারের কোষ থেকে শুরু হয়। সবচেয়ে সাধারণ ধরন হলো হেপাটোসলুলার কারসিনোমা (HCC)। এছাড়া লিভারের ভেতরে পিত্তনালী থেকে শুরু হলে তাকে বলা হয় কোলাঞ্জিওকারসিনোমা।
রোগের ঝুঁকি বাড়ায়—

দীর্ঘদিন ধরে হেপাটাইটিস বি ও সি ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া।

অতিরিক্ত মদ্যপানের কারণে সিরোসিস হওয়া।

ফ্যাটি লিভার ডিজিজ ও স্থূলতা।

আফ্লাটক্সিন মিশ্রিত খাদ্য গ্রহণ।

বংশগত কারণে লিভারের অসুখ।


প্রাথমিক লক্ষণ

চিকিৎসকদের মতে, লিভার ক্যান্সারের প্রথম দিকে বিশেষ কোনো উপসর্গ থাকে না। তবে ধীরে ধীরে রোগীর মধ্যে দেখা দিতে পারে—

পেটের ডান পাশে ব্যথা বা ভারীভাব।

ক্ষুধামন্দা ও অকারণে ওজন হ্রাস।

ক্লান্তি ও দুর্বলতা।

শরীরে ও চোখের সাদা অংশে হলুদাভ ভাব বা জন্ডিস।

পেটে পানি জমা (অ্যাসাইটিস)।


এই লক্ষণগুলো দেখা দিলে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া জরুরি।

রোগ নির্ণয়ের উপায়

লিভার ক্যান্সার শনাক্ত করতে বিভিন্ন পরীক্ষা করা হয়। এর মধ্যে রয়েছে—

রক্ত পরীক্ষা (AFP টেস্ট)

আল্ট্রাসোনোগ্রাফি, সিটি স্ক্যান ও এমআরআই

বায়োপসি – ক্যান্সার কোষ পরীক্ষা করার জন্য


চিকিৎসকরা মনে করেন, ঝুঁকিপূর্ণ রোগীদের বছরে অন্তত একবার লিভারের স্ক্রিনিং করা উচিত।

চিকিৎসা ব্যবস্থা

লিভার ক্যান্সারের চিকিৎসা রোগীর শারীরিক অবস্থা, লিভারের কার্যক্ষমতা এবং ক্যান্সারের ধাপের ওপর নির্ভর করে।

সার্জারি (লিভার রিসেকশন) – টিউমার অপসারণ করা যায়।

লিভার ট্রান্সপ্লান্ট – গুরুতর অবস্থায় কার্যকর সমাধান।

লোকাল থেরাপি – রেডিওফ্রিকোয়েন্সি অ্যাব্লেশন, কেমোএম্বোলাইজেশন ইত্যাদি।

টার্গেটেড থেরাপি ও ইমিউনোথেরাপি – ক্যান্সার কোষের বৃদ্ধি রোধে নতুন প্রজন্মের ওষুধ।

কেমোথেরাপি ও রেডিয়েশন থেরাপি – সহায়ক চিকিৎসা হিসেবে ব্যবহৃত হয়।


প্রতিরোধই সর্বোত্তম

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, লিভার ক্যান্সার প্রতিরোধে সবচেয়ে কার্যকর হলো সচেতনতা ও স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন। এর মধ্যে রয়েছে—

হেপাটাইটিস বি টিকা গ্রহণ।

অ্যালকোহল ও ধূমপান পরিহার।

সুষম খাদ্যাভ্যাস ও ওজন নিয়ন্ত্রণ।

ফ্যাটি লিভার নিয়ন্ত্রণে রাখা।

নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা।

লিভার ক্যান্সার নিয়ে ভয় নয়, প্রয়োজন সচেতনতা। প্রাথমিক পর্যায়ে রোগ শনাক্ত করা গেলে চিকিৎসা অনেক বেশি সফল হয়। তাই চিকিৎসকদের পরামর্শ— ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা উচিত এবং যেকোনো অস্বাভাবিক লক্ষণ দেখা দিলে অবিলম্বে চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad