মানসিক স্বাস্থ্যের জগতে এই শব্দটি আরও বেশি আলোচিত হচ্ছে; মন সর্বদা নেতিবাচক চিন্তায় ডুবে থাকে কেন? - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Thursday, December 4, 2025

মানসিক স্বাস্থ্যের জগতে এই শব্দটি আরও বেশি আলোচিত হচ্ছে; মন সর্বদা নেতিবাচক চিন্তায় ডুবে থাকে কেন?

 


মানসিক স্বাস্থ্যের আলোচনা উঠলেই সাধারণত ‘অ্যাংজাইটি’ শব্দটিই প্রথম সামনে আসে। মনে করা হয়, মানসিক অস্থিরতার সূচনা অনেকাংশেই উদ্বেগ থেকে শুরু হয়। তবে সাম্প্রতিক সময়ে মানসিক স্বাস্থ্যের জগতে একটি নতুন শব্দ বিশেষভাবে আলোচনায় এসেছে—রুমিনেশন ডিসঅর্ডার। এই অবস্থায় মস্তিষ্ক কোনো নেতিবাচক চিন্তাকে ক্রমাগত পুনরাবৃত্তি করতে থাকে। দুশ্চিন্তার একই বিষয় ঘুরে–ফিরে মাথায় আসে এবং মানুষ সেই চক্র থেকে বের হতে পারে না।


বেঙ্গালুরুর অ্যাস্টার সিএমআই হাসপাতালের কনসালট্যান্ট সাইকিয়াট্রিস্ট ডাঃ দিব্যা শ্রী কে আর জানিয়েছেন, রুমিনেশন স্বাভাবিক চিন্তার মতো মনে হলেও দীর্ঘ সময় চলতে থাকলে এটি মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর গভীর প্রভাব ফেলতে পারে।


রুমিনেশন কী?


বিশেষজ্ঞদের মতে, রুমিনেশন হল—

একই নেতিবাচক চিন্তা, স্মৃতি বা ভয়ের কথা বারবার মনে হওয়া এবং তা থেকে মুক্তি না পাওয়া।

এটি এমন এক মানসিক চক্র, যেখানে—


মস্তিষ্ক একটি সমস্যা নিয়ে অতিরিক্ত ভাবতে থাকে


সমাধান না পেয়ে আরও বেশি নেতিবাচক চিন্তা জন্মায়


ব্যক্তি ক্রমে মানসিকভাবে ক্লান্ত হয়ে পড়ে



ডাঃ দিব্যা শ্রী বলেন,


> “রুমিনেশন মানুষের আবেগ নিয়ন্ত্রণের ক্ষমতাকে দুর্বল করে দেয়। এতে মানসিক চাপ, ঘুমের সমস্যা এবং সম্পর্কের ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়তে পারে।”



রুমিনেশন ডিসঅর্ডারের কারণ


মনোরোগ বিশেষজ্ঞদের মতে, রুমিনেশন বিভিন্ন কারণে হতে পারে—


অতিরিক্ত স্ট্রেস বা চাপ


অতীতের কোনো আঘাত বা ট্রমা


আত্মবিশ্বাসের ঘাটতি


বিষণ্নতা বা উদ্বেগের অভ্যাস


একাকীত্ব বা সামাজিক চাপ


ভুল করার ভয় ও ব্যর্থতার আশঙ্কা


লক্ষণগুলো কী কী?


রুমিনেশনের কিছু প্রধান লক্ষণ হলো—


একই চিন্তা দিনের পর দিন বারবার মনে হওয়া


নেতিবাচক স্মৃতির পুনরাবৃত্তি


ঘুমের ব্যাঘাত


মনোযোগের ঘাটতি


নিজেকে দোষারোপ করা


উদ্বেগ ও অস্থিরতা বাড়া


বাস্তব জীবনের কাজকর্মে বিঘ্ন সৃষ্টি



দীর্ঘদিন এই লক্ষণ চলতে থাকলে মানসিক স্বাস্থ্যের ঝুঁকি বাড়তে পারে বলে বিশেষজ্ঞরা সতর্ক করেছেন।


কীভাবে থামানো যায় রুমিনেশন?


ডাঃ দিব্যা শ্রী এর মতে, কয়েকটি সচেতন অভ্যাস রুমিনেশন কমাতে সাহায্য করতে পারে—


১. মনোযোগ সরিয়ে নেওয়া


নেতিবাচক চিন্তা শুরু হলে সঙ্গে সঙ্গে অন্য কাজে মন দেওয়া।

যেমন—সঙ্গীত শোনা, হাঁটতে বের হওয়া, বই পড়া।


২. নিজের অনুভূতি লেখা


ডায়েরি বা নোটে নিজের দুশ্চিন্তা লিখলে মনের চাপ কমে।


৩. বাস্তবসম্মত চিন্তা


নিজেকে প্রশ্ন করা—

“এটা সত্যিই ঘটবে?”

“এর প্রমাণ কী?”

এতে অতিরঞ্জিত ভয় কমে।


৪. মেডিটেশন ও শ্বাস–প্রশ্বাস ব্যায়াম


নিয়মিত মেডিটেশন মানসিক চাপ কমাতে খুব কার্যকর।


৫. বিশেষজ্ঞের পরামর্শ নেওয়া


যদি চিন্তা নিয়ন্ত্রণে না আসে, তবে সাইকোলজিস্ট বা সাইকিয়াট্রিস্টের সাহায্য নেওয়া জরুরি।


নেতিবাচক চিন্তা সবারই হয়, কিন্তু সেই চিন্তা যখন মাথায় বারবার ফিরে এসে মানসিক শান্তি নষ্ট করে, তখন তা রুমিনেশন ডিসঅর্ডারের লক্ষণ হতে পারে। সময়মতো সচেতনতা, অভ্যাস পরিবর্তন এবং প্রয়োজন হলে বিশেষজ্ঞের সহায়তা নিলে মানসিক চাপ কমিয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনে ফিরে আসা সম্ভব।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad