আজকের দ্রুতগতির জীবনযাপন, অতিরিক্ত কাজের চাপ, ডিজিটাল স্ক্রিনে দীর্ঘ সময় কাটানো—সব মিলিয়ে মানুষের একাগ্রতা বা মনোযোগ ধরে রাখার ক্ষমতা কমে যাচ্ছে। শুধু প্রাপ্তবয়স্করাই নয়, স্কুল–কলেজের ছাত্রছাত্রীরাও একই সমস্যার মুখোমুখি। কেন মনোযোগ কমে যাচ্ছে, এবং এর সমাধান কী হতে পারে—তা জানালেন মানসিক স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
মনোযোগ কমে যাওয়ার প্রধান কারণগুলো
১. অতিরিক্ত স্ক্রিন টাইম ও সোশ্যাল মিডিয়া
দীর্ঘ সময় মোবাইল, ল্যাপটপ বা ট্যাব ব্যবহারের ফলে মস্তিষ্কে তথ্যের অতিরিক্ত চাপ পড়ে। দ্রুত দ্রুত কনটেন্ট বদলানোর ফলে মস্তিষ্কের ফোকাস করার ক্ষমতা কমে যায়।
২. ঘুম কম হওয়া
প্রতিদিন পর্যাপ্ত ঘুম না হলে মস্তিষ্ক ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ফলে মনোযোগ ধরে রাখা, মনে রাখা এবং দ্রুত সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা কমে যায়।
৩. মানসিক চাপ (Stress) ও উদ্বেগ (Anxiety)
দৈনন্দিন দায়িত্ব, কাজের চাপ, ব্যক্তিগত সম্পর্ক বা শিক্ষা–সংক্রান্ত চাপ মনোযোগে সরাসরি প্রভাব ফেলে। উদ্বেগ বাড়লে মস্তিষ্ক অতিরিক্ত সতর্ক অবস্থায় থাকে, ফলে কাজের প্রতি মন বসে না।
৪. পুষ্টির ঘাটতি
ভিটামিন বি গ্রুপ, আয়রন, ওমেগা–৩ ফ্যাটি অ্যাসিডের ঘাটতি হলে মস্তিষ্ক তার স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা হারাতে শুরু করে। এতে মনোযোগ ও স্মরণশক্তিতে প্রভাব পড়ে।
৫. শারীরিক নিষ্ক্রিয়তা
দীর্ঘ সময় বসে থাকা, ব্যায়াম না করা বা শরীরচর্চার অভাবে রক্তসঞ্চালন কমে যায়। এতে মস্তিষ্কে পর্যাপ্ত অক্সিজেন পৌঁছায় না এবং ফোকাস কমে যায়।
৬. ডিহাইড্রেশন
শরীরে জলশূন্যতা হলে মাথা ভারী লাগে, ক্লান্তি আসে, এবং মনোযোগ ধরে রাখা কঠিন হয়ে পড়ে।
৭. মাল্টিটাস্কিং-এর অভ্যাস
একসঙ্গে অনেক কাজ করতে গিয়ে মস্তিষ্ক বিভ্রান্ত হয়ে যায়। এতে একটি কাজেও পুরো মনোযোগ দেওয়া সম্ভব হয় না।
সমাধান: কীভাবে মনোযোগ বাড়াবেন? বিশেষজ্ঞের পরামর্শ
১. ‘স্ক্রিন ব্রেক’ নিন – ২০-২০-২০ নিয়ম
প্রতি ২০ মিনিট পর ২০ সেকেন্ডের বিরতি নিয়ে ২০ ফুট দূরের কিছুর দিকে তাকান। এতে চোখ ও মস্তিষ্ক দুটোই আরাম পায়।
২. প্রতিদিন ৭–৮ ঘণ্টা ঘুম
নিয়মিত সঠিক ঘুম মস্তিষ্কের তথ্য প্রক্রিয়াকরণ ক্ষমতা বাড়ায়।
৩. মেডিটেশন বা গভীর শ্বাস-প্রশ্বাসের ব্যায়াম
দিনে ১০ মিনিট মেডিটেশন করলে মনোযোগ ২০–৩০% পর্যন্ত উন্নত হতে পারে।
4. নিয়মিত ব্যায়াম
৩০ মিনিট হাঁটা, দৌড়ানো বা যোগব্যায়াম মস্তিষ্কে ব্লাড সার্কুলেশন বাড়ায়।
৫. পুষ্টিকর খাবার খান
ওমেগা–৩: মাছ, আখরোট
আয়রন: পালং শাক, ডাল
ভিটামিন বি–১২: দুধ, ডিম, কলিজা
পর্যাপ্ত জল পান
৬. একটি কাজ শেষ করে তবেই আরেকটিতে যান
মাল্টিটাস্কিং কমিয়ে মনোযোগ বাড়াতে ‘সিঙ্গল টাস্কিং’ অত্যন্ত কার্যকরী।
৭. ঘর বা ওয়ার্কস্পেস পরিচ্ছন্ন রাখুন
অগোছালো পরিবেশ মস্তিষ্কে বিভ্রান্তি তৈরি করে।
বিশেষজ্ঞের মন্তব্য
মনোবিদদের মতে, ‘‘মনোযোগ ধরে রাখতে হলে প্রথমে নিজের শরীর ও মানসিক অবস্থার প্রতি খেয়াল রাখা জরুরি। ঘুম, খাদ্য, ব্যায়াম ও স্ট্রেস—এই চারটি ক্ষেত্র নিয়ন্ত্রণে রাখতে পারলে ৮০% মানুষ মনোযোগের সমস্যা থেকে মুক্ত হতে পারবেন।’’
নিয়মিত জীবনযাপন, প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার এবং মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন মনোযোগ ধরে রাখতে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। সমস্যার তীব্রতা বাড়লে চিকিৎসক বা কাউন্সেলরের পরামর্শ নেওয়া উচিত।

No comments:
Post a Comment