ইরানে বোমা ফেলে বিপাকে ট্রাম্প! যুদ্ধ ক্ষমতা আইন ব্যবহার করে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি - Press Card News

Breaking

Post Top Ad

Post Top Ad

Sunday, June 22, 2025

ইরানে বোমা ফেলে বিপাকে ট্রাম্প! যুদ্ধ ক্ষমতা আইন ব্যবহার করে রাষ্ট্রপতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি



প্রেসকার্ড নিউজ ওয়ার্ল্ড ডেস্ক, ২২ জুন ২০২৫, ২১:০৮:০১ : ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন বিমান হামলার পর দেশটির ভেতরে রাজনৈতিক অস্থিরতা দেখা দিয়েছে। ডেমোক্র্যাটিক পার্টির শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পকে লক্ষ্য করে বলেছেন যে, তার সিদ্ধান্তের পেছনের উদ্দেশ্য সম্পর্কে তাকে জনগণ এবং সংসদকে স্পষ্ট জবাব দিতে হবে। বিরোধী দলের এমপিরা ট্রাম্পের বিরুদ্ধে আমেরিকাকে ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধে ঠেলে দেওয়ার অভিযোগ করেছেন। ভারতীয় বংশোদ্ভূত ডেমোক্র্যাটিক এমপি রো খান্না কংগ্রেসের সকল সদস্যকে অবিলম্বে ওয়াশিংটনে ফিরে এসে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সামরিক ক্ষমতা সীমিত করার জন্য তার প্রস্তাবিত যুদ্ধ ক্ষমতা আইনের উপর ভোট দেওয়ার আবেদন করেছেন। ইরানে মার্কিন বিমান হামলার বিষয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একটি জরুরি বৈঠকও অনুষ্ঠিত হতে চলেছে।

সিনেটে ডেমোক্র্যাটিক নেতা চাক শুমার তীব্র আপত্তি প্রকাশ করে বলেছেন, "কোনও প্রেসিডেন্টের একতরফাভাবে আমেরিকাকে যুদ্ধের মতো পরিস্থিতিতে ঠেলে দেওয়া উচিত নয়। ট্রাম্পের এই সিদ্ধান্ত অত্যন্ত বিপজ্জনক, যার কারণে আমেরিকা নিজেই ইরান-ইজরায়েল যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েছে।" মার্কিন কংগ্রেস সদস্য রো খান্নাও কংগ্রেসকে ট্রাম্পের বিরুদ্ধে একত্রিত হওয়ার আবেদন করেছেন। তিনি বলেছেন যে, এখন পর্যন্ত তার প্রস্তাব ৪৭ জন ডেমোক্র্যাট এমপির সমর্থন পেয়েছে। তার লক্ষ্য হলো, সপ্তাহান্তের মধ্যে ২১৩ জন ডেমোক্র্যাট এই প্রস্তাবকে সমর্থন করুন।

রো খান্না সোশ্যাল মিডিয়ায় লিখেছেন, "ডেমোক্র্যাটিক পার্টির জন্য এটি একটি নির্ণায়ক মুহূর্ত। আমাদের ইরানের বিরুদ্ধে যুদ্ধের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে হবে। আমি আজ রাতে একটি চিঠি পাঠাচ্ছি এবং প্রতিটি এমপিকে আমার বিল সমর্থন করার জন্য অনুরোধ করছি।"

আমেরিকার যুদ্ধ ক্ষমতা আইন একটি আইনি বিধান, যা ১৯৭৩ সালে মার্কিন কংগ্রেস কর্তৃক পাস হয়েছিল। এর উদ্দেশ্য হল রাষ্ট্রপতি যাতে একতরফাভাবে আমেরিকাকে যুদ্ধে ঠেলে দিতে না পারেন এবং যেকোনও সামরিক পদক্ষেপের জন্য কংগ্রেসের অনুমতি প্রয়োজন। এই আইনটি ভিয়েতনাম যুদ্ধের পরে তৈরি করা হয়েছিল, যখন রাষ্ট্রপতি কংগ্রেসের স্পষ্ট অনুমতি ছাড়াই হাজার হাজার সৈন্যকে যুদ্ধে পাঠিয়েছিলেন। এর ফলে আমেরিকান জনগণ এবং সংসদের মধ্যে তীব্র অসন্তোষ দেখা দেয় এবং রাষ্ট্রপতির সামরিক ক্ষমতা সীমিত করার দাবী ওঠে। রাষ্ট্রপতি যদি কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়া সেনাবাহিনীকে বিদেশী অভিযানে পাঠান, তাহলে তাকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কংগ্রেসকে এই বিষয়ে সম্পূর্ণ তথ্য দিতে হবে।

প্রকৃতপক্ষে, ট্রাম্পের নির্দেশে, আমেরিকান বি-২ বোমারু বিমান ইরানের ফোর্ডো, নাতানজ এবং ইসফাহানের মতো সংবেদনশীল পারমাণবিক স্থাপনায় বোমা হামলা চালিয়েছে। ডেমোক্র্যাট নেতারা বিশ্বাস করেন যে এই পদক্ষেপ নাটকীয়ভাবে একটি ব্যাপক এবং দীর্ঘমেয়াদী যুদ্ধের ঝুঁকি বাড়িয়েছে। প্রতিনিধি পরিষদের প্রাক্তন স্পিকার ন্যান্সি পেলোসি ট্রাম্পের সমালোচনা করে বলেছেন যে "কংগ্রেসের অনুমতি ছাড়াই মার্কিন সেনাবাহিনী মোতায়েন করে রাষ্ট্রপতি সংবিধানকে অবজ্ঞা করেছেন। এই পদক্ষেপ আমেরিকার জনগণকে বিপন্ন করে এবং সমগ্র অঞ্চলে অস্থিতিশীলতার জন্ম দেয়।"

ইরানে মার্কিন বিমান হামলার পর বিশ্বব্যাপী উদ্বেগ তীব্র হয়েছে। জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ (UNSC) রবিবার একটি জরুরি বৈঠক ডাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এই বৈঠকে ইরানের পারমাণবিক স্থাপনায় মার্কিন হামলা, আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা এবং সম্ভাব্য বৈশ্বিক প্রভাব নিয়ে আলোচনা করা হবে। রাশিয়া, চীন এবং ফ্রান্সের মতো স্থায়ী সদস্যরা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে জবাবদিহিতা দাবী করতে পারে। এই বিষয়ে জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে উত্তপ্ত বিতর্ক এবং নিন্দা প্রস্তাব আনার সম্ভাবনা রয়েছে। জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ইরানের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শক্তি প্রয়োগের বিষয়ে গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেছেন যে এই ধরনের পদক্ষেপ আঞ্চলিক অস্থিতিশীলতা এবং বিশ্বব্যাপী উত্তেজনা আরও বাড়িয়ে তুলতে পারে।

No comments:

Post a Comment

Post Top Ad