লাইফস্টাইল ডেস্ক, ১০ জুন ২০২৫: ক্যান্সারের মতো মারাত্মক রোগ এড়াতে, আমাদের কেবল নিজেদের খাবারের দিকেই নয়, আমাদের দৈনন্দিন জীবনে ব্যবহৃত জিনিসপত্রের দিকেও মনোযোগ দেওয়া উচিৎ। টাইমস অফ ইন্ডিয়ার একটি প্রতিবেদন অনুসারে, আমাদের বাড়িতে এমন অনেক জিনিসপত্র রয়েছে, যা ধীরে ধীরে আমাদের শরীরে বিষাক্ত উপাদান সরবরাহ করে এবং দীর্ঘমেয়াদে ক্যান্সারের মতো গুরুতর রোগের কারণ হতে পারে। এর মধ্যে প্রথম নাম হল প্লাস্টিকের পাত্র এবং জলের বোতল। বেশিরভাগ প্লাস্টিকে বিপিএ (Bisphenol-A)-এর মতো রাসায়নিক থাকে, যা খাবার বা জলের সাথে মিশে গেলে আমাদের শরীরের হরমোন সিস্টেমের ক্ষতি করতে পারে। এই হরমোনজনিত ব্যাঘাত পরবর্তীতে ক্যান্সারে রূপ নিতে পারে। আজকাল প্লাস্টিকে গরম খাবার বা জল সংরক্ষণ করা একটি অভ্যাসে পরিণত হয়েছে, তবে এটি খুবই বিপজ্জনক হতে পারে।
টিওআই-এর এক প্রতিবেদন অনুসারে, দ্বিতীয় বিপজ্জনক জিনিস হল নন-স্টিক রান্নার পাত্র। বেশিরভাগ মানুষ চিন্তা না করেই নন-স্টিক পাত্র ব্যবহার করেন, অন্যদিকে এই পাত্রগুলি উচ্চ তাপমাত্রায় টেফলন আবরণ থেকে বিষাক্ত রাসায়নিক নির্গত করতে পারে। পুরাতন নন-স্টিক পাত্রগুলিতে পিএফওএ (Perfluorooctanoic Acid) থাকে, যা ক্যান্সারের সাথে যুক্ত বলে মনে করা হয়। যদি এই পাত্রগুলির আবরণ খোসা ছাড়িয়ে যায়, তাহলে ধীরে ধীরে বিষ আপনার শরীরে পৌঁছায়।
শুধু এই দুটোই নয়, অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলের অতিরিক্ত ব্যবহারও ক্ষতিকারক হতে পারে, বিশেষ করে যখন আপনি এটি অ্যাসিডিক খাবারের (যেমন লেবু বা টমেটো) সাথে ব্যবহার করেন। ফয়েল থেকে অ্যালুমিনিয়ামের কণা খাবারে প্রবেশ করতে পারে, যা স্নায়বিক সমস্যার পাশাপাশি ক্যান্সারের সাথেও যুক্ত।
আমাদের বাড়িতে ব্যবহৃত পারফিউম, রুম ফ্রেশনার এবং অ্যারোসল স্প্রেতেও উদ্বায়ী জৈব যৌগ (VOCs) থাকে, যা বায়ুমণ্ডলে মিশে যায় এবং আমরা যে বাতাসে শ্বাস নিই তা বিষাক্ত করে তোলে। এগুলি কেবল শ্বাসকষ্টের সমস্যাই তৈরি করে না, দীর্ঘক্ষণ ধরে ব্যবহারের ফলে ক্যান্সারের ঝুঁকিও বৃদ্ধি পায়।
একইভাবে, আমরা বাড়ি বা গাছপালার জন্য যে কীটনাশক এবং ভেষজনাশক ব্যবহার করি তাও রাসায়নিক পদার্থে পূর্ণ এবং ত্বক, শ্বাসযন্ত্র এবং অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলির ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে। কিছু গবেষণা কীটনাশকে উপস্থিত উপাদানগুলিকে লিউকেমিয়া এবং মস্তিষ্কের ক্যান্সারের সাথে যুক্ত করেছে।
এছাড়াও, আমাদের বাড়িতে থাকা ইলেকট্রনিক ডিভাইস যেমন মোবাইল ফোন, ওয়াই-ফাই রাউটার এবং মাইক্রোওয়েভ ওভেন থেকেও মাইক্রো রেডিয়েশন নির্গত হয়। যদিও এই রেডিয়েশন খুবই মৃদু, কিন্তু আমরা যখন দীর্ঘ সময় ধরে এগুলোর সংস্পর্শে থাকি, তখন এগুলোর প্রভাব শরীরে দৃশ্যমান হয়। গবেষণায় দেখা গেছে যে দীর্ঘ সময় ধরে মাথার কাছে মোবাইল ফোন রাখলে ব্রেন টিউমারের ঝুঁকি বাড়তে পারে।
শুধু তাই নয়, ডিওডোরেন্ট, ক্রিম, শ্যাম্পু ইত্যাদি সৌন্দর্য এবং ব্যক্তিগত যত্নের পণ্যগুলিতেও প্যারাবেন, ফর্মালডিহাইড এবং কৃত্রিম সুগন্ধির মতো ক্ষতিকারক রাসায়নিক পাওয়া যায়, যা ত্বকের ক্যান্সার এবং হরমোনের ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, খুব গরম চা বা কফি পান করার অভ্যাসও গলার ক্যান্সারের কারণ হতে পারে। যখন আপনি বারবার খুব গরম জিনিস গলায় ফেলেন, তখন সেখানকার কোষগুলি পুড়ে যায় এবং বারবার জ্বালাপোড়া ক্যান্সারের সম্ভাবনা বৃদ্ধি করে।
No comments:
Post a Comment