লাইফস্টাইল ডেস্ক, ২৪ জুন ২০২৫: মাড়ির প্রদাহ একটি সাধারণ কিন্তু উপেক্ষিত সমস্যা, যা প্রায়শই আমাদের মুখের স্বাস্থ্যবিধি বা খাদ্যাভ্যাসের প্রতি অসাবধানতার ফলে ঘটে। যখন মুখের স্বাস্থ্যবিধির অবনতি ঘটে, তখন এটি একটি সতর্কতা চিহ্ন হিসেবে আসে - মাড়ি ফুলে যাওয়া এবং রক্তপাত। সময়মতো যদি এটিকে গুরুত্ব সহকারে না নেওয়া হয়, তাহলে এটি পাইওরিয়ার মতো একটি বড় সমস্যায় পরিণত হতে পারে। অতএব, এই ছোট সমস্যাটিকে উপেক্ষা করা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
মাড়ির প্রদাহ কী এবং কীভাবে ঝুঁকি বাড়ে?
মাড়ির প্রদাহকে চিকিৎসার ভাষায় জিঞ্জিভাইটিস বলা হয়। এই অবস্থায় মাড়ি ফুলে যায়, ব্যথা হয় এবং ব্রাশ করার সময় রক্তপাতও হতে পারে। সময়ের সাথে সাথে যত্ন না নিলে এটি পাইওরিয়ার মতো জটিল রোগে পরিণত হতে পারে, যার কারণে মাড়ি দুর্বল হয়ে যায় এবং দাঁতকে সমর্থন করা বন্ধ করে দেয় ও দাঁত নড়তে শুরু করে।
# মাড়ি ফুলে যাওয়ার প্রধান কারণগুলি কী কী?
১. সঠিকভাবে দাঁত পরিষ্কার না করা: সকাল-সন্ধ্যা দাঁত ব্রাশ না করা বা ভুল কৌশলে ব্রাশ করার ফলে দাঁতে প্লাক জমা হয়, যা মাড়ির সংক্রমণের কারণ হয়।
২. মাড়ির প্রদাহ: মাড়িতে যদি ফোলাভাব এবং রক্তপাত হয়, তাহলে এটি মাড়ির প্রদাহের লক্ষণ হতে পারে, যা মুখের মধ্যে ব্যাকটেরিয়ার বৃদ্ধির কারণে হয়।
৩. ভিটামিন সি-এর অভাব: ভিটামিন সি-এর অভাব স্কার্ভির মতো রোগ সৃষ্টি করতে পারে, যা মাড়িকে দুর্বল করে দেয়।
৪. দাঁতে আটকে থাকা খাবার: দাঁতে ফাঁক থাকলে এবং খাবার আটকে গেলে তা পচে যায় এবং ব্যাকটেরিয়ার জন্ম দেয়।
৫. ধূমপান এবং তামাক খাওয়া: এই অভ্যাসগুলি কেবল মুখে দুর্গন্ধই সৃষ্টি করে না বরং মাড়ির স্বাস্থ্যের ওপরও খারাপ প্রভাব ফেলে।
#মাড়ির প্রদাহ কীভাবে এড়ানো যায়?
মাড়ির স্বাস্থ্য উপেক্ষা করলে ভবিষ্যতে গুরুতর দাঁতের সমস্যা দেখা দিতে পারে। শুরু থেকেই একটু সাবধানতা অবলম্বন করলে এই সমস্যা এড়ানো সম্ভব। নীচের ব্যবস্থাগুলিকে আপনার দৈনন্দিন জীবনের একটি অংশ করে, আপনি মাড়িকে মজবুত এবং সুস্থ রাখতে পারেন-
দিনে দুবার সঠিকভাবে ব্রাশ করুন
সকালে ঘুম থেকে ওঠার পর এবং রাতে ঘুমানোর আগে ব্রাশ করা একটি ভালো অভ্যাস। এটি দাঁতে প্লাক জমা হতে বাধা দেয় এবং মাড়ির সংক্রমণের সম্ভাবনা হ্রাস করে।
প্রতিবার খাবারের পর দাঁত ধুয়ে ফেলুন অথবা ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করুন। খাওয়ার পর দাঁত ধুয়ে ফেললে অথবা ডেন্টাল ফ্লস ব্যবহার করলে দাঁতের মাঝখানে আটকে থাকা খাদ্যকণা পরিষ্কার হয়ে যায় যা ব্যাকটেরিয়া তৈরি করে।
জাঙ্ক এবং প্রক্রিয়াজাত খাবার থেকে দূরে থাকুন
এই ধরনের খাবার দাঁত এবং মাড়ির জন্য ক্ষতিকর। এগুলো মাড়িতে প্রদাহ এবং সংক্রমণ বাড়াতে পারে।
ধূমপান এবং তামাক খাওয়া সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করুন
এই অভ্যাসগুলি কেবল দাঁত নষ্ট করে না বরং মাড়িতে রক্ত সঞ্চালনকেও প্রভাবিত করে, যা প্রদাহ এবং পাইওরিয়ার মতো সমস্যা বাড়ায়।
বছরে অন্তত দুবার দাঁতের ডাক্তারের কাছ থেকে চেকআপ করান। নিয়মিত দাঁতের চেকআপ সময়মতো প্রাথমিক সমস্যা সনাক্ত করতে পারে এবং এর চিকিৎসা হতে পারে।
ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ ফল খান; যেমন আমলকি, কমলা, কিউই ইত্যাদি। এগুলি মাড়িকে মজবুত করতে এবং সংক্রমণের বিরুদ্ধে লড়াই করার ক্ষমতা বাড়াতে সাহায্য করে।
নরম ব্রাশ ব্যবহার করুন; শক্ত ব্রাশ মাড়ি কেটে ফেলতে বা আহত করতে পারে। তাই নরম ব্রাশ দিয়ে ধীরে ধীরে এবং আলতো করে ব্রাশ করুন।
# মাড়ির ফোলাভাব কমানোর সহজ ঘরোয়া প্রতিকার-
আপনার যদি ইতিমধ্যেই মাড়ি ফুলে থাকে, তাহলে আপনি নীচে দেওয়া প্রাকৃতিক এবং কার্যকর ঘরোয়া প্রতিকারগুলি চেষ্টা করে দেখতে পারেন:
হালকা গরম লবণ জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
দিনে দুই থেকে তিনবার এটি করলে সংক্রমণ এবং প্রদাহ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। লবণ অ্যান্টিসেপটিক হিসেবে কাজ করে।
লবঙ্গ তেল দিয়ে ম্যাসাজ করুন
লবঙ্গ তেল প্রাকৃতিক অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল এবং ব্যথা উপশমকারী বৈশিষ্ট্যে সমৃদ্ধ। এটি দিয়ে মাড়িতে আলতো করে ম্যাসাজ করুন।
হলুদ এবং সরষের তেলের পেস্ট
হলুদের প্রদাহ-বিরোধী বৈশিষ্ট্য রয়েছে এবং সরষের তেল মাড়িকে মজবুত করে। এই দুটি মিশিয়ে মাড়ি হালকা করে ম্যাসাজ করুন।
লেবুর জল দিয়ে ধুয়ে ফেলুন
হালকা গরম জলে লেবুর রস মিশিয়ে দিনে দু'বার গার্গল করলেও ফোলাভাব থেকে মুক্তি মেলে। লেবুতে উপস্থিত ভিটামিন সি মাড়ির জন্য খুবই উপকারী।
বি.দ্র: কোনও সমস্যা হলে প্রথমেই চিকিৎসকের কাছে যন। ঘরোয়া টোটকা ব্যবহারের আগে চিকিৎসকের পরামর্শ নিন।
No comments:
Post a Comment